ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মনীষী সরদার ফজলুল করিমের জন্মদিন উদযাপন

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ১১ মে ২০১৬

মনীষী সরদার ফজলুল করিমের জন্মদিন উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মননশীলতা চর্চায় তিনি রেখেছেন অনবদ্য অবদান। অসামান্য এক চরিত্রকে ধারণ করে গড়েছিলেন আপন জীবন। কিশোরবেলায় শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবি’ পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বিপ্লবী চেতনায়। এরপর একদিকে মানব মুক্তিতে উজ্জীবিত আদর্শ প্রতিষ্ঠায় করেছেন রাজনীতি, অন্যদিকে আজীবন মগ্ন ছিলেন জ্ঞানের সাধনায়। বিপ্লবী আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে জেল খেটেছেন, চাকরি ছেড়েছেন, শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন; আবার আরেকদিকে ছাত্রদের দিয়েছেন দর্শনের জ্ঞান, সঙ্গে চালিয়ে গেছেন লেখালেখি। বৈচিত্র্যে ভরপুর চরিত্রে অধিকারী এই জ্ঞানতাপস হচ্ছেন সরদার ফজলুল করিম। গত পহেলা মে ছিল এই মনীষীর ৯১তম জন্মদিন। মঙ্গলবার বৈশাখী বিকেলে উদ্্যাপিত হলো তাঁর জন্মদিন। তাঁকে স্মরণ করে গাওয়া হলো গান। প্রদর্শিত হলো তথ্যচিত্র। বিশিষ্টজনদের আলোচনায় উঠে এলো তাঁর জীবনের বর্ণময় অধ্যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সরদার ফজলুল করিম স্মৃতি পরিষদ। সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় জন্মদিনের অনুষ্ঠান। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন তিনটি গান। মিলনায়তনে সুর ছড়িয়ে একে একে গেয়ে শোনান ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো’, ‘আকাশভরা সূর্য তারা বিশ্বভরা প্রাণ’ ও ‘কেউ বলে আছো তুমি কেউ বলে নাই’। গান শেষে প্রদর্শিত হয় এই জ্ঞানতাপসের জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘আলোর পথযাত্রী’। সরদার ফজলুল করিমের জীবনী থেকে সংক্ষিপ্ত পাঠ করেন মার্জিয়া লিপি। তাঁর রচিত ‘বরিশালের পোলার ঢাকা আগমন’ শীর্ষক নিবন্ধ পড়েন ফারজানা আবেদিন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এই মনীষীর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা। এতে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক সাদ উদ্দীন, অধ্যাপক গালিব হাসান খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী মোহাম্মদ শীষ প্রমুখ। পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তাঁর জামাতা ডাঃ শাকিল আকতার। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরদার ফজলুল করিমের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি উঠে আসে আনিসুজ্জামানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, সরদার ফজলুল করিমের আমার সরাসরি পরিচয় হওয়ার আগেই তাঁর প্রতি আমার ভালবাসা জন্মে। তিনি দৃষ্টির অন্তরালে চলে যাওয়ার পরও সেই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা একইরকম আছে। সরদার ভাই সম্পর্কে আমি বিশেষ দুটি কথা বলতে চাই। প্রথমত তিনি নিজের মতো করে ভাবতেন এবং সবাইকে নিজের মতো করে ভাবতে অনুপ্রেরণা যোগাতেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে তিনি সাধারণ মানুষকে শিক্ষক মনে করতেন। রিক্সাওয়ালা, পিয়ন, দারোয়ার থেকে শুরু করে সবার সঙ্গেই কথা বলতেন। তাদের কাছ থেকে জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শুনতেন এবং শিক্ষা নিতেন। তিনি কখনও শিক্ষাকে শ্রেণীকক্ষে সীমাবদ্ধ বলে মনে করতেন না। সেভাবেই শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছে। তিনি ছিলেন অসম্ভব আশাবাদী মানুষ। শত বিপদেও তিনি আশা ছাড়েননি। কামাল লোহানী বলেন, যখন সমাজতন্ত্র বিপন্ন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেছে, মার্কসবাদীরা হতাশ, ঠিক তখন সরদার ফজলুল করিম বলেছিলেন, সমাজতন্ত্রের মৃত্যু হয় না। তখন এটা বলার মতো অবস্থা কারও ছিল না। তাই সমাজতন্ত্রের পথে এগোলো এবং বিকল্প শক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেই সরদার ফজলুল করিমের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জনগণের কাছ থেকে শিক্ষা না এবং শিক্ষা দাওÑলেনিনের এই ভাবনাকে ধারণ করেছিলেন সরদার ফজলুল করিম। তিনি সমগ্র মানবসভ্যতাকে সামগ্রিকভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করেছেন। কাজী মোহাম্মদ শীশ বলেন, নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান ছিলেন সরদার ফজলুল করিম। বাবার সঙ্গে জমিতে লাঙল চালিয়ে কৃষি কাজ করেছেন। বাবার মতো তাঁর মাও ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন। সেই নিরক্ষর বাবা-মার কাছ থেকেই দেশের মানুষকে ভালবাসার শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। এ কারণেই তিনি সব পরিচয়ে উর্ধে নিজেকে শুধু একজন মানুষ বলে পরিচয় দিতে ভালবাসতেন। ডাঃ শাকিল আখতার বলেন, তিনি সব সময় তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে গল্প করতেন। তাদের ভাবনা জানতেন, কথা বলতেন। তার লেখনী আমাদের উজ্জ্বলতর জীবনে এগিয়ে নিয়ে যাব। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ গ্যালারির উদ্বোধন আজ ॥ শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ জাদুঘরে স্থাপিত বাংলাদেশ গ্যালারি উদ্বোধনে দেশটিতে পৌঁছেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ বুধবার তিনি এই গ্যালারি উদ্বোধন করবেন। সোমবার সংস্কৃতিমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। শ্রীলঙ্কা সফরে বিশ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। মঙ্গলবার বিকেলে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স এ্যাসথেটিক রিসোর্ট মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দল তাদের প্রথম পরিবেশনা উপস্থাপন করে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধান অতিথি হিসেবে এ সাংস্কৃতিক আয়োজনের উদ্বোধন করেন। প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি হয়েছে এ বছর। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দলের এ সফর ও পরিবেশনা এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দু’দেশের মধ্যে চলমান সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রমের আওতায় এটি বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দলের প্রথম শ্রীলঙ্কা সফর। তিন লেখকের কারুকাজ সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তি ॥ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য জজ ভূঞা গ্রুপ-কারুকাজ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন তিন গুণী লেখক। কবিতা শাখায় পুরস্কার পেলেন কবি আসাদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যে ইমদাদুল হক মিলন এবং শিশুসাহিত্যে আলী ইমাম। জজ ভূঞা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় এ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে বিনোদনমূলক পত্রিকা পাক্ষিক সময়ের কাগজ। পত্রিকাটির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিন লেখকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, জজ ভূঞা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী একরামুল হক প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন পাক্ষিক সময়ের কারুকাজ পত্রিকার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম মুকুল। পুরস্কার হিসেবে তিন লেখকেই দেয়া হয় নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট। এর আগে বিজয়ীদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন অতিথিরা।
×