ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোরসালিন মিজান

কেবল ফাঁসি নয় বিচারের সংস্কৃতি আলোর পথে যাত্রা

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ১১ মে ২০১৬

কেবল ফাঁসি নয় বিচারের  সংস্কৃতি আলোর  পথে যাত্রা

সর্বত্রই এখন ফাঁসি ফাঁসি রব। ঠিক এই মুহূর্তের নামটি- মতিউর রহমান নিজামী। শীর্ষ এই যুদ্ধাপরাধী সর্বোচ্চ দ- বুঝে পেয়েছে। বাকি যারা, একই দ- পাবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ তা-ই প্রত্যাশা করে। প্রত্যাশার শুরুটা হয়েছিল অনেক আগেই। শহীদ জননী জাহানার ইমামের নেতৃত্বে যে ঐতিহাসিক আন্দোলন, সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ দ- ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছিল। গণজাগরণ মঞ্চ একই দাবিতে সৃষ্টি করে নতুন ইতিহাস। ফাঁসির দাবি এখন কেবল দাবি হয়ে নেই। একের পর এক চরম এই দ- কার্যকর করা হচ্ছে। এ আলোচনায় সর্বশেষ নামটি আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী। তারও অভিন্ন শাস্তি- ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রাণদ-। এভাবে পুনঃ পুনঃ উচ্চারিত হচ্ছে ফাঁসি শব্দটি। তবে কেবলই ফাঁসি নয়, যাবজ্জীবন কারাবাস নয়, একইসঙ্গে বিচারের সংস্কৃতি সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানো এক বাংলাদেশ। সকল অন্ধকারের শক্তিকে পরাভূত করে আলোর পথে যাত্রা অব্যাহত রাখার আনন্দ। প্রতিটি রায় মূলত সত্যের জয়গান করছে। বলা বাহুল্য, সভ্য সমাজে এই সত্য প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। একটু পেছন থেকে দেখলে- দীর্ঘ বৈষম্য। অন্যায়। অধিকার কেড়ে নেয়া। এমনকি মুখের ভাষাটি আক্রান্ত। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা সত্ত্বেও সরকার গঠনে বাধা। সমঝোতার নামে প্রহসন। ভয়াল ২৫ মার্চের গণহত্যা। এভাবে সকল আশা যখন পর্যুদস্ত, শেষ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় বাঙালী। পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেয়। ন্যায়যুদ্ধে জীবনবাজি রাখে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করে যায়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানবিক মানুষ বাঙালী নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। অথচ ঠিক এই ভূখ-েরই কিছু মানুষ তখন মানুষের সকল বৈশিষ্ট্য ভুলে যায়। বর্বর পাকিস্তানীদের পা চাটা গোলামরা রাজাকার আলবদর আলশামস ইত্যাদি বাহিনী গঠন করে। স্বজাতির বিরুদ্ধে চলা নির্মম গণহত্যায় সব রকমের সহায়তা দেয়। দেশকে শত্রুমুক্ত করার স্বপ্ন দেখা তরুণটিকে যুবকটিকে চিহ্নিত করে এরা পাকিস্তান বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। ইসলাম রক্ষার নামে মানুষ খুনের উৎসব চলে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে। অসহায় মা, এমনকি কিশোররী সন্তান রেহাই পায় না। পাষ-ের দল ধর্ষণ করে মারে। হানাদারদের ব্যাঙ্কারে পুরে দিয়ে আসে। গ্রামের পার গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় ওরা। আর তারপর আজকের বাস্তবতা। একটির পর একটি ফাঁসির রায়। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীরা ঝুলছে। কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এরই মাঝে গত হয়েছে। ঠিক এই মুহূর্তের আলোচনা মতিউর রহমান নিজামী। আলবদর প্রধানের গাড়িতে এমনকি শহীদের রক্তমাখা পতাকা উড়েছিল! মন্ত্রী করা হয়েছিল এই ঘাতককে। আরও কত কত অন্ধকার! সেসব অন্ধকার পেছনে ফেলে চলছে বিচারের কার্যক্রম। বিদগ্ধজনেরা মনে করেন, ফাঁসিটাই শেষ কথা নয়। একমাত্র কথা নয়। মূল কথা বিচার। অপরাধ সংগঠনের দীর্ঘকাল পর হলেও, যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে বাংলাদেশ। অপরাধকে অপরাধ হিসেবে গন্য করছে। বাধার শেষ নেই। অযুত ষড়যন্ত্র। তবুও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। নিশ্চিত হচ্ছে ভয়ঙ্কর অপরাধীদের শাস্তি। এভাবে আলোর পথে যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। মূলত এখানেই সুখ। এ প্রসঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের প্রাণদ-ও খুব সামান্য শাস্তি। তবে, বিচারটি হচ্ছে। এটা স্বস্তির। যে কোন সভ্য সমাজে বিচার পাওয়ার অধিকার থাকতে হয়। আমরা সে অধিকার পাচ্ছি। নিজামীর ফাঁসি তাকে নতুন বাংলাদেশের সংগ্রামে সাহস যোগায় বলে জানান তিনি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, যুদ্ধাপরাধ বিশেষ ধরনের অপরাধ। এর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। সেটিই হচ্ছে বাংলাদেশে। এটা স্বস্তির। তবে, ফাঁসি হওয়া না হওয়ার প্রধান কথা নয়। তারও চেয়ে বড় প্রাপ্তিÑ বিচার। বাংলাদেশ আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করছে। এই জায়গাটিতে জোর দিতে হবে। একই প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, জাতির জনককে হত্যার পর বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মন্ত্রী হয়েছিলেন নিজামী। বিএনপি সরকার মন্ত্রী করলেও, বাংলার জনগণ এদের ক্ষমা করেনি। খুনী ধর্ষক ও অগ্নিসংযোগকারী হিসেবেই বিচার হয়েছে। নিজামীর গাড়িতে পতাকা উড়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই ঘাতকের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
×