ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে খানজাহান বিমান বন্দর নির্মানে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ১০ মে ২০১৬

বাগেরহাটে খানজাহান বিমান বন্দর নির্মানে অনিশ্চয়তা

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মান কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ২০১৫ সালের ৫মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার এক বছর পরেও দৃশ্যত: কোন কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্প কর্মকর্তাও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে ২০১৮ সালেও মধ্যে পূর্নাঙ্গ রূপে খানজাহান বিমান বন্দর নির্মনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম জানান, শুরতে ৯৭ একর জমি অধিগ্রহন করা হলেও পরে বিমান কর্তৃপক্ষ ৫শ ৩৬ একর জমি অধিগ্রহনের একটি প্রস্তাবনা করে। প্রস্তবনা অনুযায়ী সরোজমিন পরিদর্শন ও ভূমি জরিপ করা হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত জমির মধ্যে খুলনা-মংলা মহাসড়ক ও প্রস্তাবিত খুলনা-মংলা রেল লাইন থাকায় বিষয়টি কতৃপক্ষকে জানানো হয়। পরবর্তিতে পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দরের জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ সংশোধিত খসড়া প্রস্তাবে ১ হাজার ৩৭ একর জমি অধিগ্রহনের প্রস্তাবনা করে। প্রস্তবনা অনুযায়ী বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরোজমিনে মাঠ পর্যায়ে জরিপ কাজ করতে গেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক বর্তমান অধিগ্রহনকৃত জমির উত্তর-পূর্ব দিকে সরে জমি অধিগ্রহনের নির্দেশ দেন। বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রনালয়ের সভায় চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে বিমান বন্দরের সম্ভবতা যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর সরোজমিন পরিদর্শন করেন। এই বিমান বন্দরটির নির্মান কাজ শেষ হলে ওয়ার্ল্ড হ্যরিটেজ সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম, হযরত খানজাহানের মাজার, ও ষাটগুম্বজ মসজিদের পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ ও দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা আরও গতিশীলসহ নির্মানাধীন পদ্মা সেতুর পাশাপাশি অবহেলিত দক্ষিঞ্চালের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখবে। তৎকালিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমানের প্রচেষ্টায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লায় মংলা-মাওয়া-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলীর (র:) নামে বিমান বন্দর নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে অধিগ্রহন করা হয় ৯৪ একর জমি। বাগেরহাট খানজাহান বিমান বন্দরের অধিগ্রহণকৃত ৯৪ একর জমি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্থান্তর করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমান বন্দরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বিগত ১৯৯৭ সালে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। প্রায় ২৪ কোটি টাকায় আংশিক মাটি ভরাট করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে কিছু মাটি ভরাটের পর অর্থ বরাদ্দের অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর খানজাহান বিমান বন্দর প্রকল্পের আর কোন কাজ হয়নি। এরপর আবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী লে.কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাগেরহাটের ফয়লায় বিমান বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। তখন তিনি খানজাহান বিমানবন্দর নির্মাণের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। এরপর বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেয়। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে কুয়েট বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে বিমান বন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দ্রুত এই বিমান বন্দর নির্মানে প্রথম ধাপে ছোট বিমান ওঠানামার জন্য ২৫০ কোটি টাকা ও দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। কুয়েট বিশেষজ্ঞদের এ’দুটি প্রস্তাবনার বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করে। পরে এদু’টি প্রস্তাবনা একিভূত করে পূর্নঙ্গ বিমান বন্দর নির্মান প্রকল্প তৈরী করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই বিমান বন্দরটি নির্মানে ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যায় একটি প্রকল্প তৈরী করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এরপর ২০১৫ সালের ৫মে একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। সেসময় খানজাহান বিমান বন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আরও ১৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে তিন বছরের মধ্যে অথাৎ ২০১৮ সালের মধ্যে এই বিমান বন্দরটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করার লখ্য নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তিতে বিমান কতৃপক্ষ ১ হাজার ৩৭একর জমি অদিগ্রহনের প্রস্তাবনা দেয়। যা এখনো চুড়ান্ত হয়নি।
×