ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উর্মি রহমান

কলকাতার চিটি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১০ মে ২০১৬

কলকাতার চিটি

মেয়েটির নাম রাগিনী, বাড়ি ঝাড়গ্রামে। বিয়ের বয়স হয়নি, তবু তার বিয়ে ঠিক করে পরিবার; রাগিনীর মতামতের তোয়াক্কা না করেই। মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। না, কোন প্রেমিকের কাছে নয়। সে চলে যায় সোজা পঞ্চায়েত অফিসে এবং নিজের বিয়ে বন্ধ করে। তাকে সাহায্য করে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, সমাজকল্যাণ আধিকারিক এবং পুলিশ। রাগিনী লেখাপড়া করতে চায়, সে এ বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। শেষ পর্যন্ত তার বাবা এই মর্মে মুচলেকা দেন যে, এখন তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না। মেয়ের লেখাপড়া করার ইচ্ছাকে মর্যাদা দেবেন। রাগিনীর এই সাহসিকতাকে প্রশংসা করতে হয়, তবে সে একা নয়। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের আরও কিছু মেয়ে, হিন্দু এবং মুসলমান, এই সাহসিকতা দেখিয়েছে। তারা তাদের বাল্যবিবাহ বা নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে বন্ধ করেছে। তাদের সবাই লেখাপড়া করতে চায়। মুসলমান মেয়েদের সমস্যা তো আরও অনেক বড়। পশ্চিমবঙ্গেও মুসলমান সমাজ অনেক পিছিয়ে আছে। তাদের মধ্যে দারিদ্র্য যেমন বেশি, তেমনি শিক্ষার অভাবও রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষের সমস্যার যেন অন্ত নেই। সেই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মুসলমান নারীসমাজ। তাদের মধ্যে বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ, অল্প বয়সেই স্বামী কর্তৃক বিতাড়িত হওয়াÑ এসব সমস্যা আছে। আবার ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কন্যাভ্রƒণ হত্যার কারণে নারী জনসংখ্যার অভাব রয়েছে। সেসব রাজ্যে পাচার হয়ে যায় পূর্বাঞ্চলের মেয়েরা- পশ্চিমবঙ্গ বা অসমের মতো রাজ্য থেকে। এসব প্রসঙ্গ সম্প্রতি নতুন করে উঠে এসেছে সায়রা বানু নামে এক নারী তিন তালাকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াতে। তাঁকে তাঁর স্বামী ডাকযোগে তিন তালাক দিয়েছেন। তিনি তিন তালাক সম্পর্কিত আইন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। তিনি অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের নন। কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগ ভারতের বাঙালী মুসলমান নারীদের সমস্যাকে সামনে তুলে ধরেছে। আপনারা হয়ত জানেন, বাংলাদেশসহ কিছু মুসলমানপ্রধান দেশে তিন তালাক বেআইনী হলেও ভারতে এখনও সেটা বলবৎ আছে। একবার কিছু কিশোরী-তরুণীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক সভায়। তাদের অনেকেরই বিয়ে হয়েছে ১৪ বছরে, বিবাহ-বিচ্ছেদ তার দু’মাস থেকে দু’বছরের মধ্যে। তারপর থেকে তারা এক কঠোর জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেই সভায় এসব গ্রামের মেয়েরা মঞ্চে উঠে তাদের নিজেদের জীবন ও সমস্যার কথা বলতে পেরেছিল, যা দেখে খুব ভাল লেগেছিল। সেই সভায় দুই বোন, আফরোজা ও খাদিজার সঙ্গে আলাপ হয়, যাঁরা এইসব মেয়েকে নিয়ে কাজ করছেন। এরকম আরও নারী ও সংগঠন আছে, যার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় হচ্ছে ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন, যা পশ্চিমবঙ্গসহ ১২টি রাজ্যে কাজ করছে। তার সঙ্গে জড়িত আছেন রহিমা খাতুন। এঁদের মতো আরও নারী-পুরুষ আছেন, যাঁরা অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক, আইনগত, পারিবারিক সমস্যা ছাড়াও অন্যদের মতো মুসলমান নারীদেরও একটা বড় সমস্যা নিরাপত্তা। আর সেজন্যই পশ্চিমবঙ্গের কিছু গ্রামের মেয়ে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁরা কারাটে শিখছেন। তাঁদের এনডিটিভির একটি অনুষ্ঠানে দেখে ভাল লেগেছে আর আশা জেগেছে। ভারতজুড়ে খরা, পানির খুব অভাব। কিন্তু একটা অঞ্চলে পানির কোন অভাব নেই। বরং বলা যায় পানি অফুরন্ত। পাকিস্তানের সীমানার কাছে, রাজস্থানের জয়সলমীরের একটি গ্রামে এক কৃষক মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে যখন ৫৬০ মিটার পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলেছেন, তখন তিনি পানির সন্ধান পান। পর্যাপ্ত পানি। প্রচ- তোড়ে পানি উঠে এসেছে। কাছাকাছি আরও একজন কৃষক একইভাবে পানির সন্ধান পান। তাঁদের ক্ষেতে পানি থই থই। তাঁরা সেই পানি সেচে অন্যদের ক্ষেতে দিয়ে দিচ্ছেন। সেখানে ১০টা টিউবওয়েলও লাগানো হয়েছে। একজন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, কয়েক শতাব্দী ধরে মাটির নিচে এই পানি জমা হয়েছে জিপসাম নামের পাথরের খাঁজে খাঁজে। এটা বেরোবার পথ পায়নি। আবার আর এক দল বলছে, কাছাকাছি খোঁড়া খালের জন্যও মাটির তলে এই পানি বেড়ে গিয়ে প্রবল তোড়ে উঠে এসেছে। কিন্তু মজার কথা হলো, আর এক দল বলছে, এটা অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর পানি। এই নদী কেউ কখনও চোখে দেখেনি, এর উল্লেখ ঋক্বেদে আছে। কিছু ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানী বলছেন, সরস্বতী বলে কোন নদী ছিল না। এই নদীর অস্তিত্ব শুধু কিংবদন্তি বা পুরাণের গল্পে আছে। জানা গেছে, হাজার হাজার বছর আগে পশ্চিম রাজস্থান এমন মরু অঞ্চল ছিল না, ছিল শ্যামল-সবুজ। এখানেই সরস্বতী নদী উত্তাল স্রোতধারা নিয়ে বয়ে চলত। এক সময় সরস্বতী শুকিয়ে যায়। রাজস্থানের সেই সবুজ-শ্যামল চেহারা পাল্টে সেখানে শুষ্ক মরুভূমি জায়গা করে নেয়। পানির আর এক নাম জীবন আর নদী সেই জীবনকে বহন করে চলে। অনেক সভ্যতাই নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। আজ এতদিন পর কি সেই লুপ্ত, অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদী আবার ফিরে এলো?
×