ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দরিদ্রদের খাবারের যোগান দিচ্ছে 'রবিন হুড আর্মি'

প্রকাশিত: ২০:০৫, ৯ মে ২০১৬

দরিদ্রদের খাবারের যোগান দিচ্ছে 'রবিন হুড আর্মি'

অনলাইন ডেস্ক॥ বিশ্বের বড় শহরগুলোতে অনেক দামী রেস্টুরেন্টে প্রায় প্রতিদিন প্রচুর খাবার রয়ে যায়। ভালো রেস্টুরেন্টে এসব খাবার সাধারণত ফেলে দেয়া হয় বা নষ্ট করে ফেলা হয়। কিন্তু করাচির কিছু তরুণ-তরুণী একটি উদ্যোগে অংশ নিচ্ছে, যার মাধ্যমে এই অতিরিক্ত খাবারগুলো সংগ্রহ করে তারা পৌঁছে দিচ্ছে দরিদ্র মানুষদের কাছে। ‘রবিন হুড আর্মি’ নামে এই স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম প্রথমে শুরু হয়েছিল ভারতে। করাচিতে রবিন হুড আর্মির সাথে থেকে তাদের কর্মকাণ্ড দেখেছেন বিবিসি'র শায়মা খলিল। করাচির সমুদ্র সৈকতের কাছে একটি অভিজাত এলাকার রেস্টুরেন্টে খদ্দেরদের ভিড় ভালোই দেখতে পান সংবাদদাতা। রবিবার রাতের খাবারের মেন্যুতে রয়েছে বার্গার এবং ব্লু চিজ স্টেক থেকে শুরু করে ফ্রেঞ্চ টোস্টসহ সবকিছুই। আর এই রেস্টুরেন্ট থেকে অবশিষ্ট খাবার সংগ্রহ করতে হাজির হয়েছেন তরুণ-তরুণীদের একটি দল, যারা বিকেল থেকে শুরু করে বেশ কিছু রেস্টুরেন্টের খাবার সংগ্রহ করছেন দরিদ্রদের মধ্যে এই খাবারগুলো বিলিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে। গত এক বছর যাবত তারা এই কাজ করছেন। করাচিতে রবিন হুড আর্মি নামের এই কার্যক্রমটি শুরু করেছেন সারা আফ্রিদি। খাবার নিয়ে বস্তিতে যাবার আগে একটি মিস্টির দোকান থেকে সারা কিছু বাক্স সংগ্রহ করলো। “ওরা আমাদেরকে দারুণ কিছু কাপকেক দেয়। এই কাপকেকগুলোর প্রতিটির দাম প্রায় ৩০০ রুপি। দরিদ্র পরিবারগুলো এই দামের মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ টাকা দিয়ে তাদের দুপুর বা রাতের খাবার খায়"। অভিজাত এলাকার কাছেই বস্তিতে পৌঁছালে পুরো পরিবেশই পরিবর্তন হয়ে যায়। সুন্দর রাস্তা, বড় বড় বাড়িঘর আর শপিং মলের জায়গায় দেখা যায় কোনভাবে বানানো ঘর, খোলা ড্রেন আর আবর্জনার স্তুপ। এটি করাচির আরেকটি চিত্র। ধনী এবং গরীবের মধ্যে পার্থক্য দেখতে হলে করাচিতে খুব বেশি দুরে যেতে হবে না। স্বেচ্ছাসেবকেরা যখন গাড়ি থেকে খাবার নামাচ্ছিল, তখন সারা বলছিল রবিন হুড আর্মির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। “আমার এক বন্ধু প্রথমে ভারতে এটি শুরু করে। পরে সে আমাকেও অনুপ্রাণিত করে, কারণ ভারত এবং পাকিস্তানের অবস্থা বেশ কাছাকাছি। আমরা চাচ্ছিলাম খাবার অপচয় কমাতে এবং এটি নিশ্চিত করতে যে, কোন মানুষ যে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে না যায়। আর রেস্টুরেন্টের মালিকেরাও আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে যে, তাদের অনেক খাবার নষ্ট হয় এবং এই উদ্যোগটি অসাধারণ"। তবে সারা বলছিল, এ কাজ করতে গিয়ে নিরাপত্তার কিছু শঙ্কা আছে। কিন্তু সমস্যা হতে পারে এমন জায়গাগুলো তারা সাধারণত এড়িয়ে চলেন এবং যে কারণে বড় ধরনের কোন ঝামেলায় তাদের এখনো পড়তে হয়নি। তাঁর মতে, এ কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছুই তিনি বুঝতে পেরেছেন। “বাইরের মানুষের হয়তো পাকিস্তান সম্পর্কে নানারকম ধারণা আছে, কিন্তু এখানকার মানুষ অন্যদের মতই স্বাভাবিক। তারা নিজেদের মতো থাকে, টাকা-পয়সা আর ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়ে মেতে থাকছে। এরপর আবার এই দরিদ্র এলাকায় আসলে দেখা যায় একটি ভিন্ন চিত্র। তাদেরকে খাবার দিলে তারা খুশি হয়, কিন্তু সেটাই বড় বিষয় নয়, এর চেয়ে বড় হচ্ছে যে তাদের সাথে একটি সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে এবং তারাও আপনাকে মনে রাখছে"। বস্তির অনেক পরিবার প্রতি রোববার অপেক্ষা করে এই খাবারের জন্য। তারা বলছিল, এর ফলে অন্তত একদিন হলেও তারা কিছুটা ভাল খাবার সুযোগ পায় এবং একবেলার খাবার খরচটাও তাদের বেঁচে যায়। এই বস্তিবাসীর মতো পুরো পাকিস্তানজুড়ে এমন লক্ষ-লক্ষ মানুষ রয়েছে। রবিন হুড আর্মি আশা করছে, এই উদ্যোগ একসময় পুরো পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়বে এবং আরো অনেকে একবেলা ভালো খাবার সুযোগ পাবে। সূত্র- বিবিসি
×