ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া আগুন লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া আগুন  লড়াই আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যশোর পর্ব শেষ, একদিন বিরতি দিয়ে ঢাকা পর্ব শুরু আজ থেকে। বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এর কথা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গ্রুপ ‘এ’র ম্যাচে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ বনাম মালয়েশিয়া একাদশ। এর আগে একই ভেন্যুতে বেলা ৩টায় মুখোমুখি হবে নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। এ টুর্নামেন্টে দু’বারই শিরোপা জিতেছে মালয়েশিয়া। এ আসরের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন তারাই। গত আসরে বাংলাদেশ দল তাদের কাছেই হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল। স্বভাবতই ফেবারিট হিসেবে তাদের নামটিই চলে আসে সবার আগে। ১৭১ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ‘হারিমাও মালায়া’ খ্যাত মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে একদিন বেশি সময় পাওয়াতে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ পায় ১৭৯ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। হঠাৎ সূচী বদল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। তাই ঢাকা পর্ব শুরু হচ্ছে একদিন পরে। তবু বিশ্রামে নেই মামুনুলরা। মঙ্গলবার ম্যাচকে সামনে রেখে বুয়েট মাঠে অনুশীলন করে মারুফুল হকের শিষ্যরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর আরও চনমনে অনুশীলনে সবাই। এবার যে সেমিফাইনালে যাবার পালা। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী দল ফেলদা ইউনাইটেডের বিপক্ষে নতুন কোন মন্ত্র নয়, মনোবলটা ঠিক রেখে মাঠের লড়াইয়ে জেতাটাই হবে মূল লক্ষ্য। জানালেন দলের অভিজ্ঞ সেনানী ওয়ালী ফয়সাল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর দলের ভেতরের পরিবেশটা এখন বেশ চাঙ্গা। তাই নতুন কোন কৌশল রপ্ত না করে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেই সেমিতে পা রাখার পরিকল্পনা টিম বাংলাদেশের। ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রথম ম্যাচে জেতা। সেটি পূরণ হয়েছে। এখন লক্ষ্য সেমিফাইনাল খেলা। ধাপে ধাপে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে অগ্রসর হতে চাই।’ মঙ্গল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে এক ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ মারুফুল হক এমনটাই বলেন। মালয়েশিয়া বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। গত আসরে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচ দেখা হয়নি মারুফুলের। তাই তাদের সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই তার। তারপরও এবারের আসরে তাদের প্রথম ম্যাচের ভিডিওটি দেখেছেন তিনি। আর সে অনুযায়ী খেলার রণকৌশল ঠিক করবেন তিনি। দলে কোন চোট সমস্যা নেই। তবে সোহেল রানার বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি হবে। এ কারণে আজকের ম্যাচে থাকতে পারছেন না তিনি। বাবার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন সোহেল। তার পজিশনে খেলতে পারেন হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। আর দলীয় অধিনায়ক মামুনুল ইসলামও মনে করছেন এই ম্যাচে জয় পাওয়াটা জরুরী তাদের জন্য, ‘শেষ চারে যেতে হলে এই ম্যাচে জেতাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। তবে এ জন্য অনেক কঠিন শ্রম দিতে হবে আমাদের। দলের সবাই সেটা ভাল করেই জানে। সে জন্য সবাই তৈরি আছে।’ প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ৪-২ গোলে জিতে বাংলাদেশ শুভসূচনা করলেও দলের রক্ষণভাগে অনেক সমস্যা ছিল। এ প্রসঙ্গে মারুফুল বলেন, ‘ডিফেন্স নিয়ে কাজ করছি। তবে রক্ষণের এই সমস্যাটা অনেক আগে থেকেই ছিল। এটাতে রাতারাতি উন্নতি করা সম্ভব না। যতটুকু সম্ভব সেটা মেরামত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ সেই সঙ্গে মারুফুল আরও যোগ করেন, ‘আমাদের পজিশনের সমস্যা আসলে সবখানেই। যখন ফরোয়ার্ড, মিডফিল্ড ব্যর্থ হয় তখনই চাপটা এসে রক্ষণে পড়ে। তখন রক্ষণ ব্যর্থ হতেই পারে।’ মাঝ মাঠে জামাল ভুঁইয়ার বেশি ভূমিকা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন মারুফুল। অধিনায়ক মামুনুল বলেন, ‘আমাদের অনেক বিভাগেই উন্নতির অবকাশ আছে। প্রথম ম্যাচে জিতেছি ঠিকই। কিন্তু আমাদের কিছু কিছু পজিশনে সমস্যা ছিল। কোচ এগুলো নিয়ে অনেক পরিশ্রম করছেন। আমাদের উন্নতি ঘটাতে হলে অবশ্যই সিরিয়াস হতে হবে।’ গতবার মালয়েশিয়ার কাছে গ্রুপ পর্ব এবং ফাইনালে হেরেছিল বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচটা কি তবে বাংলাদেশের জন্য প্রতিশোধের ম্যাচ? কৌশলে প্রসঙ্গটা এড়িয়েই গেলেন মামুনুল, ‘প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। ফাইনালে আমাদের উঠতে হবে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’বঙ্গবন্ধু কাপে ১৯৯৭ সালে যে মালয়েশিয়া দলটি শিরোপা জিতেছিল, সে দলের কোচ হাজী ইরফান বাক্তি এবারের দলেও আছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে সমীহ করছি। তারা অনেক ভাল দল। তবে আমরা জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবো। ম্যাচটা অনেক কঠিন ম্যাচ হবে। কেননা গতবার বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া ফাইনাল খেলেছিল। তবে এবার প্রথম ম্যাচটায় প্রত্যাশিত ফল পাইনি। ওই ম্যাচটি আমরা ড্র করলেও দল ভালই খেলেছে।’ আজ দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় মালয়েশিয়া। আর এ কারণে আজ তারা আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেবে বলে অভিমত বাক্তির। দলীয় অধিনায়কের ওপর দায়িত্বটা বেশি থাকবে বলে জানান কোচ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের গত আসরে স্বাগতিক বাংলাদেশ জাতীয় দলকে ফাইনালে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল মালয়েশিয়া। অবশ্য সেটি ছিল মালয়েশিয়ার যুব দল (অনুর্ধ-২৩)। এবার অবশ্য তারা জাতীয় দল হিসেবে খেলছে না। খেলছে মালয়েশিয়া ফুটবল দল হিসেবে। অনেকেই আবার দলটাকে অভিহিত করছেন ‘মালয়েশিয়া একাদশ’ নামে। দলটির সিংহভাগই খেলেন ফেলদা ইউনাইটেড ক্লাবের হয়ে। এই দলে জাতীয় দলের দুই ফুটবলার আছেন। এছাড়া আছেন একাধিক সাবেক জাতীয় ফুটবলারও। গত আসরে চ্যাম্পিয়ন মালয় বাহিনীর বেশকিছু ফুটবলার আছেন বর্তমান দলটিতেও। দলটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খেলোয়াড়রা কিছুটা খর্বাকৃতির হলেও অসম্ভব দ্রুতগতিসম্পন্ন তারা। তা ছাড়া নিমিষেই কাউন্টার এ্যাটাকে গিয়ে গোল করতে পারঙ্গমও বটে। এখন দেখার বিষয়, বাংলা-মালয় আগুন লড়াই ম্যাচে আজ ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় কোন দলের।
×