ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমা চাইল জাপান

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

ক্ষমা চাইল জাপান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যৌন নির্যাতনের শিকার কোরীয় নারীদের কাছে ক্ষমা চাইল জাপান। সেসময় সময় জাপানী সেনাদের হাতে নির্যাতিত কোরীয় নারীদের ব্যাপারে একটি ঐতিহাসিক সমঝোতায় পৌঁছেছে সিউল ও টোকিও। জাপান এ ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়েছে এবং ‘কমফোর্ট উইমেন’ হিসেবে পরিচিত যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য সিউলের গঠিত তহবিলে ১০০ কোটি ইয়েন (৮৩ লাখ ডলার) দিতে রাজি হয়েছে। সম্প্রতি জাপানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সিউলে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউন বিউং সি’র সঙ্গে বৈঠকের পর ক্ষমা প্রার্থনা এবং ক্ষতিপূরণ চুক্তির বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেন। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ‘যৌনদাসীদের’ ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম এ ধরনের কোন চুক্তিতে রাজি হলো জাপান। জাপানী সেনাদের জন্য তৈরি যৌনপল্লীগুলোতে দুই লাখের বেশি নারীকে যৌন নির্যাতন করা নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। সিউল এ ব্যাপারে বেইজিংকে ক্ষমা চাইতে বলার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছিল। এ দাবিতে সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয় দেশটির নারীবাদী সংগঠনগুলোও। গত এক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ কোরীয় নারীবাদী সংগঠনগুলো সিউলে জাপান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে আসছিল। অবশেষে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের মধ্যে আলোচনায় গতি আনতে সম্মত হওয়ার পর এই বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউন বিউং-সি’র সঙ্গে আলোচনার জন্য জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সিউল পৌঁছার পরই এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হয়। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে জাপানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিশিদা সাংবাদিকদের জানান, জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোরীয় নারীদের যৌন নির্যাতনের জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, জাপান যদি সত্যিই প্রতিশ্রতি পূরণ করে, তাহলে তারা ক্ষতিপূরণের ওই প্রস্তাব বিবেচনায় রাজি আছে। এ ছাড়া এই সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ইস্যুতে পরস্পরের সমালোচনা করা থেকেও বিরত থাকবে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরো কোরিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় জাপান। সেসময় জাপানী সেনাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত যৌনপল্লীগুলোতে দুই লাখের বেশি নারীকে যৌন নির্যাতন করা হয়। এসব নারীর অনেকেই ছিলেন কোরিয়ার নাগরিক। এদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনও ৪৬ জন জীবিত রয়েছেন। নির্যাতনের শিকার বাকি নারীদের আনা হয়েছিল চীন, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ান থেকে। এর আগে ১৯৯৩ সালে জাপান পূর্ব এশিয়ার নারীদের ওপর নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছিল। জাপানের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইওহি কোন ওই স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। তবে গত সাত দশকের মধ্যে এই প্রথম জাপান ওই ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইল। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের মূল বৈরিতার দুটি কারণের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। আর অপর কারণ নানজিং গণহত্যা। যৌন নির্যাতন ইস্যুতে এই দীর্ঘ দ্বন্দ্বের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ, জাপান আগেই জানিয়েছিল, কোরীয় যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে তারা একটি সরকারী বরাদ্দ স্থাপনের কথা ভাবছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার দৈনিক পত্রিকা ‘জনগ্যাং এলবো’র খবরে বলা হয়, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যৌন হয়রানির শিকার নারীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখতে পারেন। সূত্র : বিবিসি, এপি অনলাইন
×