ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে ঘরোয়া হোটেলের কর্মী খুন

দেড় মাসেও প্রধান আসামিসহ কেউই গ্রেফতার হয়নি

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

দেড় মাসেও প্রধান আসামিসহ কেউই গ্রেফতার হয়নি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ খোদ রাজধানীতে মুখে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে ঘরোয়া হোটেলের মালিক কর্তৃক কিশোর কর্মচারী খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রায় দেড় মাস পরেও প্রধান আসামি ও তার সহযোগী গ্রেফতার হয়নি। দুই আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় রীতিমত হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী। টাকার জোরে আসামিরা এতদিন আত্মগোপনে থাকতে পারছেন কি না মামলার বাদী প্রশ্ন তুলেছেন সে বিষয়েও। মূল হত্যাকারী আত্মীয়তার সুবাদে চট্টগ্রামের স্পর্শকাতর এলাকায় বসবাস করে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। জায়গা দুইটিতে আসামি গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে অভিযান চালানো অনেকটাই কঠিন ও জটিল। যদিও মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ বলছে, বিমানবন্দর ও সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে ছবিসহ বিশেষ বার্তা প্রেরণ করায় আসামিরা পালিয়ে বিদেশ যেতে পারেনি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আসামিরা গ্রেফতার হতে পারে বলে আশা তদন্তকারী সংস্থার। আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী নিহত রিয়াদের ভাই রিপন হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আসামি অনেক টাকার মালিক। হয়তো টাকার জোরেই এখনো পালিয়ে থাকতে সক্ষম হচ্ছে। সুযোগ বুঝে বিদেশে পালিয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়। তিনি তার ভাইয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দাবি করেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঘরোয়া হোটেলের একজন কেতাদূরস্ত আত্মীয় রয়েছেন চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরের একটি স্পর্শকাতর এলাকায় বসবাস করেন। ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করায় সহজেই তাকে শনাক্ত করা যায় না। তিনি কোন সাধারণ যানবাহনেও যাতায়াত করেন না। বিশেষ যানবাহনে যাতায়াত করায় তাকে শনাক্ত করা কঠিন। এছাড়া এ ধরনের যানবাহনে সুনির্দিষ্ট তথ্য ব্যতিত হরহামেশাই অভিযান চালানো অসম্ভব। ওই আত্মীয়ের দুই বাসায়ই ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে রয়েছে ঘরোয়া হোটেলের মালিক। ওই বাসা দুইটি থেকে কয়েক দফায় সীমান্ত পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক দফায় চেষ্টা করেছে। তবে সে চেষ্টা সফল হয়নি। সূত্র বলছে, স্পর্শকাতর জায়গাটিতে যেকোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষেই অভিযান চালানো কঠিন। এ ধরনের স্পর্শকাতর জায়গায় অভিযান চালানো অনেকটা নিষিদ্ধও বটে। অনেক প্রক্রিয়া শেষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আসামিকে গ্রেফতার করতে হয়। তাও আবার সরাসরি নয়। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা লাগে। এ ব্যাপারে মামলাটির ছায়া তদন্তকারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের উপ-কমিশনার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা ওয়ারী থানা পুলিশকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। যেকোন সময় আসামিরা গ্রেফতার হতে পারে। চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর দিবাগত রাত একটায় রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন স্বামীবাগের ৭৩ নম্বর নির্মাণাধীন ১০ তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী রিয়াদ হোসেনের (১৬) মুখে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল (৩৩)। ঘটনার পরদিন ওয়ারী থানায় নিহতের ভাই রিপন হোসেন হোটেল মালিক ও দুই কর্মচারী জসিম এবং খবিরকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। হত্যাকা-ের পর পরই জসিম পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াদের হত্যাকারী ঘরোয়া হোটেলের মালিক বলে জানায় জসিম। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীরাও রিয়াদ হত্যার পুরো ফিরিস্তি দিয়েছেন আদালতে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, অল্প বয়সে অনেক টাকার মালিক হওয়ার কারণে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ঘরোয়া হোটেলের মালিক। বেশিরভাগ সময়ই মাতাল হয়ে থাকত। গাড়িতে সব সময় অস্ত্র রাখত। একটি শর্টগানের লাইসেন্স থাকলেও গাড়িতে সব সময় অন্তত চারটি আগ্নেয়াস্ত্র থাকত। বাকি তিনটিই অবৈধ। ঘটনার সূত্রপাত হোটেলটির গ্লাসবয় (টেবিলে টেবিলে গ্লাস সরবরাহকারী) শফিকুলের চুরি যাওয়া দেড়হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করে। নিহত রিয়াদ টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি করেছে বলে শফিকুল সরাসরি হোটেল মালিকের কাছে অভিযোগ করে। এমন অভিযোগে হোটেল মালিকের নির্দেশে ওইদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রিয়াদকে হাত পা বেঁধে হোটেলের দ্বিতীয় তলায় জানালার গ্রিলের সঙ্গে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে রিয়াদের ভাই মামলার বাদী রিপন হোটেলে যান। তিনি ছোট ভাইয়ের অবস্থা দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। ক্ষতিপূরণ নিয়ে হলেও ভাইকে ছেড়ে দিতে হোটেল ম্যানেজার শফিকের পায়ে পড়ে গড়াগড়ি দিতে থাকেন। কিন্তু ম্যানেজারের কথা, বিষয়টি মালিক না আসা পর্যন্ত সমাধান হবে না। রাত আটটায় রিপন আবার হোটেলে যান। কিন্তু মালিক আসেনি। তখনও রিয়াদকে সেভাবেই বেঁধে রাখা হয়েছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মালিক পল্টন থানাধীন ৮৮ নম্বর শান্তিনগর (পুরনো ৫৯ নম্বর) চামেলীবাগের ইস্টার্ন পিয়ারের ২/৬০২ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে নিজস্ব পাজেরো গাড়ি নিয়ে হোটেলে যান। রিপন হোটেল মালিককে বিষয়টি বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মালিক কোন কথাই শুনেনি। হোটেলের গ্রিল কারিগর জসিমসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে রিয়াদকে বাঁধা অবস্থায়ই পাজেরো গাড়িতে তুলে দিতে বলে। তারা তাই করে। সঙ্গে জসিমও গাড়িতে চড়ে যায়। জসিম পুলিশকে জানিয়েছে, রিয়াদকে স্বামীবাগের ওই বাড়িতে থাকা হোটেল কর্মচারীদের একটি রুমে নিয়ে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধা হয়। আসামি সোহেলের পিতার নাম নজরুল ইসলাম ওরফে নুরু বয়াতি (মৃত)।
×