ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনোদন মাধ্যমের দায়িত্ব

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিনোদন মাধ্যমের দায়িত্ব

শিশুরাও যখন হয়ে ওঠে সতীর্থ শিশুদের ঘাতক, খুন করে অপহরণের টাকা দাবি করে, তখন বুঝে নিতে হয় অধঃপতনের মাত্রা কত নিচে নেমে গেছে। মনোবৈকল্যের মাত্রা কোন্্ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বড়দের মতো শিশুরাও নির্যাতন ও হত্যার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে জানান দিচ্ছে, ঘাতকের হাত ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দিন দিন মানুষের আচরণ, অনুশাসন ও সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষের মধ্যে হিংস্রতাও বেড়ে গেছে আগের তুলনায় বেশি। এর অবশ্য কার্যকারণও রয়ে গেছে। বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের সুকুমারবৃত্তি চর্চার সুযোগ সীমিত করে দিয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে কোচিং হরণ করে নিয়েছে চারু ও কারুসহ অন্যান্য শিল্পচর্চা, যা তাদের মানসিক গড়নকে মানবিক, শৈল্পিক এবং সুস্থ ধারায় পরিচালিত করত। এর অভাবে টিভি-সিনেমায় প্রভাবিত হয়ে সেসব অনুকরণে বাসনাগ্রস্ত হয়ে ওঠে। মেধার বিকাশ ঘটছে না। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার জন্য রাষ্ট্র তেমন পদক্ষেপ নেয় না। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কঠোর অনুশাসনের মধ্যেও নাটোরে তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত তিন সহপাঠী হত্যা করেছে তাদের এক সহপাঠীকে। তারা স্বীকার করেছে, বিদেশী টিভি সিরিয়াল দেখে প্রভাবিত হয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে সহপাঠীকে হত্যা করে সেপটিক ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখে। কী নির্মম! এই কোমলমতি শিশুদের মানসে বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব কতদূর পর্যন্ত পৌঁছলে তবেই তারা ঘাতক হয়ে যেতে পারে। মাদ্রাসার শিশু ছাত্ররাও ঘাতক হয়ে গেলে সমাজ ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে বাধ্য। সহজাত মনোবৃত্তির কারণেই অপরাধ বিষয়ক নাটক ও সিনেমার নেতিবাচক দিকটাতে সংক্রমিত হচ্ছে দর্শক। বাংলাদেশ-ভারতসহ বিভিন্ন দেশের টিভি চ্যানেলগুলো যেসব ধারাবাহিক নাটক বা সিরিয়াল প্রচার করে থাকে, তাতে অপরাধধর্মী বিভিন্ন সত্য ঘটনাসহ কল্পনার মিশেল দেয়া থাকে, যা ঘরে বসে পরিবারের সবাই গোগ্রাসে গিলছে। নির্মাতারা বলে আসছেন, মানুষ আরও সচেতন হবে- এমন ধারণা থেকে তারা এসব নির্মাণ করছেন। তবে বাস্তবে কারও কারও ক্ষেত্রে উল্টো ফল হচ্ছে। উন্নত দেশে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভিন্নধর্মী নাটক ও সিনেমা কিংবা কার্টুন নির্মাণ করা হয়। সারাদেশে প্রতিনিয়ত যেসব আত্মহত্যা, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা অপহরণের ঘটনা ঘটছে তার তদন্তে দেখা গেছে, অভিযুক্তরা কোন না কোনভাবে সিনেমা-নাটক থেকে প্ররোচিত, প্রভাবিত হয়ে অপরাধে প্রবৃত্ত হয়েছে। অপরাধীরা অপরাধমূলক নাটক ও সিনেমায় দেখা কৌশলগুলো এক্ষেত্রে প্রয়োগ করছে। সমাজের নানা অসঙ্গতি ছোটদের যেমন মাদকাসক্ত করছে, তেমনি টিভি চ্যানেলের প্রভাবে ঘাতকও হয়ে উঠছে এদের কেউ কেউ। বিনোদন মাধ্যমগুলো যদি অপরাধী হতে প্রভাবিত করে, তবে তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা জরুরী। এসব মনোবিকার, মনোবিকল থেকে সমাজকে রক্ষা করার উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ তথা সভ্যতার দিকে, আলোর দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করতে হবে সম্মিলিতভাবে। বিনোদন মাধ্যম টিভি, নাটক ও সিনেমার নেতিবাচক দিক পরিহার করা না গেলে এর প্রভাবে সবকিছু কলুষিত হবে, যা কারোরই কাম্য হতে পারে না।
×