ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশের সার্বিক উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন জরুরী

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দেশের সার্বিক উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের উন্নয়ন না হলে সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সঙ্গতকারণে চট্টগ্রামের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘গ্লোবাল পোর্ট, গ্লোবাল সিটি: প্রায়রিটাইজিং চিটাগাং ফর এ্যাক্সিলারেটিং ন্যাশনাল গ্রোথ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ দাবি জানান। গোল টেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশে মোট যে রাজস্ব আহরণ হয় তার ৩৫ শতাংশই আসে চট্টগ্রাম থেকে। পাশাপাশি দেশের মোট আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। সঙ্গতকারণেই বন্দরের আধুনিকায়ন প্রয়োজন। তারা বলছেন, একই সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরেরও উন্নয়ন জরুরী। শহরের উন্নয়ন না হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনা সম্ভব হবে না। বিশ্বের যেসব স্থানে প্রসিদ্ধ বন্দর রয়েছে সে স্থানকে ঘিরে গড়ে ওঠা শহরও অনেক উন্নত। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার ভবনে পিপিআরসি, বণিক বার্তা ও সিআরআইয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ঐতিহাসিকভাবে চট্টগ্রাম সমৃদ্ধ এলাকা। এর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যা ১৩৯টি। এগুলোর বিপরিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী তিন বছরের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। তখন চট্টগ্রামের উন্নয়ন আরো দৃশ্যমান হবে। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিপিআরসির চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি এতে বলেন, তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব পণ্য বিদেশে পাঠানোর প্রধান রুট চট্টগ্রাম। পাশাপাশি এ শিল্পের বিকেন্দ্রিকরণও প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত চট্টগ্রাম। কারণ এখান থেকে পণ্য রফতানি ও আমদানি অনেক সহজ। তাই চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন না হলে দেশের শিল্পের বিস্তৃতি ও রফতানি আয়ের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে উন্নয়ন, ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এর বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলের শহরগুলোর নিজস্ব সম্ভাবনা অনুধাবন করে সে অনুযায়ী ওই সব শহরেরও উন্নয়ন করতে হবে। একে খান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন কাশেম খান বলেন, সম্প্রতি ম্যাকেঞ্জি চট্টগ্রামকে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। শহরটি অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এশিয়ান হাইওয়ের রুটটি এ শহরকে স্পর্শ করে যাওয়া উচিত। সিলেটের তামাবিল হয়ে এশিয়ান হাইওয়ের রুটটি যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তাই যদি হয়, তাহলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। আর ঐতিহাসিকভাবেই চট্টগ্রামের উন্নয়নের গুরুত্ব স্বীকৃত। তাই চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে সারাদেশের উন্নয়ন চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এমএম নাসিরউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে ব্রিটিশ সরকার শহরটির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছিল। কিন্তু এরপর অনেক বছর কেটে গেলেও চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন হয়নি। ফলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়তে থাকায় শহরের ওপর চাপ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের উন্নয়নের বিকল্প নেই। বেসরকারী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে চিহ্নিত করে এর উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। সেভেন সিস্টার্স ও মিয়ানমারের সঙ্গে সংযোগ বাড়িয়ে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশের সব অঞ্চলকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। সারাদেশের বাজারগুলোকে কিভাবে সংযুক্ত করা যায়, আমাদের পরিকল্পনায় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকারকে আরও বেশি কার্যকর করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, আঞ্চলিক উন্নয়নকে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখেন। এমনটি ঠিক নয়। কারণ আঞ্চলিক উন্নয়নের হাত ধরেই জাতীয় উন্নয়ন সম্ভবপর হয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সূতিকাগার চট্টগ্রাম। কিন্তু অনেকে দেখা যাচ্ছে যে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করছেন। নিজেরা যদি নিজেদের শহরকে মূল্যায়ন না করি তাহলে এর উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোঃ নাসিরউদ্দিন, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সাবেক সচিব ড. মাহবুবুর রহমান, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আবদুল হক, ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগির, ডাঃ রেহেনা আক্তার প্রমুখ
×