ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার মাটিতে দীর্ঘ ২২ বছর পর টেস্ট সিরিজ জয়ের প্রতিক্রিয়া ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির

‘দেখিয়েছি আমরাও পারি’

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

‘দেখিয়েছি আমরাও পারি’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ২২ বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত। শচীন টেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলী, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো জাদরেল অধিনায়ক যা পরেননি, নেতৃত্বের শুরুতেই সেটি করে দেখালেন বিরাট কোহলি! আড়াই দিন পর্যন্ত এগিয় থেকে প্রথম টেস্ট হারের পর গ্রেট সুনীল গাভাস্কার ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আগে ক্রিকেট শেখো, তারপর আগ্রাসী মনোভাব দেখাও!’ মুচকি হেসে, কোহলির জবাবটা ছিল নিজেরই মতো, ‘ফল যাই হোক, আমি আক্রমণে বিশ্বাসী!’ সময় লাগল না। হার দিয়ে শুরুর পর টানা দুই জয়ে ২-১এ ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। যথারীতি নিজের স্টাইলে ভারত অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া, ‘ফাঁকা বুলি নয়, করে দেখিয়েছি, যে আমারও পারি!’ সাফল্যে বোলারদেরই বেশি কৃতিত্ব দিয়েছেন কোহলি। কলম্বোয় সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টেস্টে ১১৭ রানের বড় জয়ের পর ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘০-১এ পিছিয়ে পড়ার পর ২-১এ সিরিজ জেতাটা সহজ নয়। এমনিতে বিদেশের মাটিতে আমাদের ইতিহাস ভাল নয়, সেখানে ২২ বছর পর লঙ্কানদের হারানোর কৃতিত্ব দলের সবার। বোলারদের কথা বিশেষভাবে বলতে হবে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ইশান্ত শর্মা, অমিত মিশ্ররা অসাধারণ করেছে। পাশাপাশি ব্যাট হাতে নিজেদের উজার করে দিয়েছে রোহিত শর্মা, চেতেশ্বর পুজারা, লোকেশ রাহুল আর শিখর ধাওয়ান।’ বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে হুট করে ধোনি অবসরে যাওয়ায় টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পান কোহলি। বাংলাদেশ সফর ছিল তার প্রথম পরীক্ষা। ফতুল্লার একমাত্র টেস্টটি বৃষ্টিতে ড্র হয়। সে অর্থে দীর্ঘদিন লঙ্কার মাটিতে ব্যর্থ ভারতের হয়ে এটাই ছিল অধিনায়ক কোহলির সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি বলে আসছিলেন, টেস্ট জেতার জন্য বোলারদের ওপর ভরসা করবেন, আক্রমণাত্মক খেলবেন। কথার সঙ্গে কাজের মিল দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। সিরিজ জয়ের পরও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, নিজের পাঁচ বোলার তত্ত্ব থেকে সরে যাবেন না তিনি, ‘আপনারা যেভাবেই দেখুন না কেন... পাঁচ বোলার বা চার বোলার এক অলরাউন্ডার থিওরি কাজে দিয়েছে। আমি আগেও বলেছি, টেস্ট জিততে হলে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট তুলে নিতে হবে। সেটাই করা হয়েছে। ভবিষ্যতে দলের ভালর জন্য এভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ ভারতীয় বোলারদের ভূমিকা কতটা তার একটা চিত্র তুলে ধরা যাক। সিরিজে শীর্ষ পাঁচ উইকেট শিকারির তিনজনই ভারতের। সর্বাধিক ২১ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ শিকার অপর স্পিনার অমিত মিশ্রর। চতুর্থ সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট ইশান্ত শর্মার, এর মধ্য দিয়ে অষ্টম ভারতীয় হিসেবে টেস্টে ২শ’ উইকেট শিকারের মাইলফলক ছুঁয়েছেন এই পেসার। বল হাতে উমেশ যাদব-স্টুয়ার্ট বিনিও ছিলেন দারুণ কার্যকর। শীর্ষ দুই রান সংগ্রহক শ্রীলঙ্কার এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও দীনেশ চান্দিমাল। ২৩৩, ২০২ ও ১৭৮ রান নিয়ে পরের তিন স্থানে ভারতের কোহলি, রোহিত ও রাহানে। মাঠের বাইরে যাকে ঘিরে এত বিতর্ক, দায়িত্ব পেয়ে সেই কোহলি কী আসলেই বিরাট (ম্যাচিউরড) হয়ে উঠেছেন? ‘এভাবে ভাবছি না। আমি যদি বলি পরিণত হয়েছি, পরে একটা ভুল করলেই শিশুতে পরিণত হব!’ প্রেস মিটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মজার ছলে কোহলির উত্তর। কোহলির নেতৃত্বের প্রশংসা করে সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গুলী বলেন, ‘ওকে আমি সবসময় গুরুত্ব দেই। ওর নেতৃত্বে ভারত জিতেছে এটা দারুণ বিষয়। ২২ বছর দীর্ঘ সময়। হয়ত একটা সময় এটা হতোই। আমরা পাকিস্তানে, ইংল্যান্ডের মাটিতেও জিতে ছিলমা। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশে এই সাফল্যটা এলো প্রায় পাঁচ বছর পর (২০১১Ñএ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর)।’ কুমার সাঙ্গাকারা, মহেলা জয়াবর্ধনের মতো গ্রেটকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট অনেকটাই নড়বড়ে। সে অর্থে ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজটা অধিনায়ক কোহলির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের পসরা সাজিয়ে সেখানেও নিজের জাত চেনাতে প্রস্তুত নতুন সেনাপতি বিরাট কোহলি।
×