ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ

লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাস নির্মূল কমিটির আহ্বায়ককে গুলি করে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাস নির্মূল কমিটির আহ্বায়ককে গুলি করে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর, ১ সেপ্টেম্বর ॥ লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাস নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুককে (৪০) গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নবগঠিত চন্দ্রগঞ্জ থানার ‘মোস্তফার দোকান’ নামে এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। জানা যায়, ওমর ফারুক চা খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে ‘মোস্তফার দোকান’ এলাকায় আসেন। সেখানে আসার পর তিনজনকে অস্ত্র হাতে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা থেকে নামতে দেখেই ফারুক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পালানোর সময় তিনি একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে লক্ষ্য করে ৫-৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে সন্ত্রাসীরা সিএনজিতে করে ভৈরবনগরের আমানী লক্ষ্মীপুরের সড়ক দিয়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে ফারুক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনরা তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। নোয়াখালী নেয়ার পথে তিনি মারা যান। নিহতের বাড়ি চন্দ্রগঞ্জে থানার পশ্চিম লতিফপুর গ্রামে। নবগঠিত থানা থেকে মাত্র এক কিমি দূরে এ হত্যাকা-ের ঘটনায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এদিকে একই সময় চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোঃ ইসমাইলকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। এ সময় তিনি পুকুরের পানিতে লাফিয়ে পড়লে প্রাণে বেঁচে যান। গুলি করার পর সন্ত্রাসীরা ভৈরবনগর আমানী-লক্ষ্মীপুর সড়ক হয়ে সিএনজিতে করে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, ওমর ফারুক ছিলেন ‘চন্দ্রগঞ্জ থানা সন্ত্রাস নির্মূল কমিটি’র আহ্বায়ক এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার পিতার নাম আবদুল মান্নান। উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় নবগঠিত চন্দ্রগঞ্জ থানার নতুন ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আইজিপি (প্রশাসন) মোঃ মোখলেছুর রহমান বিপিএম (বার), চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এলাকার সন্ত্রাস নির্মূলে জোর দেন ওমর ফারুক। দলীয় সূত্রের দাবি, সম্প্রতি র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বিএনপি সমর্থিত জিসান বাহিনীর সদস্যরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। উল্লেখ্য, চন্দ্রগঞ্জে গত দু’বছরে সন্ত্রাসীদের হাতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। এলাকার মানুষ চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, লুট, চুরি, ডাকাতিসহ সন্ত্রাসীদের কবলে জিম্মি হয়ে পড়ে। এলাকার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হওয়ায় সেখানে নতুন ‘চন্দ্রগঞ্জ থানা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সোমবার সন্ধ্যায় থানার নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নাছিম মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যে কোন উপায়ে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা হবে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নিজামউদ্দিনের নেতৃত্বে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা চন্দ্রগঞ্জ উপশহরে দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি রায়পুর-ঢাকা মহাসড়ক ও উপশহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এরপর বেলা দেড়টার বিক্ষোভকারীরা আবার রায়পুর-ঢাকা মহাড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অবরোধ চলে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এক বিবৃতিতে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
×