ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেনশন প্রক্রিয়া আটকে গেছে বিচারপতি মানিকের

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পেনশন প্রক্রিয়া আটকে গেছে বিচারপতি মানিকের

আরাফাত মুন্না ॥ পেনশন প্রক্রিয়া আটকে গেছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর নিকট নিষ্পত্তিকৃত মামলার (হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগ) অপেক্ষমাণ রায় স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত তাঁর পেনশনসংক্রান্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে বিষয়টি অবহিত করা হয় বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এদিকে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এই সিদ্ধান্তটি নজিরবিহীন উল্লেখ করে তিনি প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠি দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি শাসুদ্দিন চৌধুরী। মঙ্গলবার দুইটি চিঠির অনুলিপিই জনকণ্ঠের হাতে আসে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর এই চিঠিতে দেখা গেছে, এর অনুলিপি, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, আগামী ১ অক্টোবর অবসরে যাবেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তবে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রীমকোর্টের অবসর শুরু হওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বরই তার শেষ কর্মদিবস। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ওই চিঠিতে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের কোন রায় আমার কাছে অপেক্ষমাণ নেই। এছাড়া রায় অপেক্ষমাণ থাকা অবস্থায় কোন বিচারপতির পেনশনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না, বলে কোন বিধি বিধান আছে কিনা, তাও আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, কোন বিচারপতির পক্ষের অবসরে যাওয়ার আগে সব রায় শেষ করা সম্ভব নয়। আর কোন বিচারপতি অবসরের আগে তাঁর সকল রায় লেখা শেষ করেছেন, এমন নজির পৃথিবীর কোন দেশেই নেই। তিনি আরও বলেন, একজন বিচারপতি অবসরে যাওয়ার আগে সব রায় শেষ করবেন এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব। প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী চিঠিতে বলেন, আপনিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রায় লিখতে মাসের পর মাস সময় নিয়েছেন। আপনি যখন অবসরে যাবেন, তখন আপনিও যে সব রায় শেষ করে যেতে পারবেন না, এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কারণ কোন রায় রাতারাতি লেখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রায় লিখতে হয় আদালতের সময়ের পর। অনেক রায়ে গভীর গবেষণামূলক কাজও থাকে। আবার অনেক রায়ের মাধ্যমে আইনের অনেক জটিলতার ব্যাখ্যা দিতে হয় (যেমন যুদ্ধাপরাধ মামলা), যা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক চিঠিতে বলেন, আমার পেনশনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে যেমন বাধা দেয়া হয়েছে অতীতে কোন বিচারপতির ক্ষেত্রেই এ ধরনের কোন নিদর্শন নেই। এ বিষয়ে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরে গিয়েছিলেন ২০১১ সালের ১৭ মে। তাঁর সব রায় শেষ করতে কয়েক বছর সময় লেগেছিল। তাঁর পেনশন প্রসেস করতেও কোন বাধা দেয়া হয়নি। সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম অবসরে গিয়েছিলেন ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি তাঁর রায় শেষ করেছেন কয়েক মাস আগে। তারও তো পেনশন আটকে যায়নি। সম্প্রতি অবসরে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এখনও তাঁর রায়গুলো লিখছেন। তাঁর পেনশন প্রসেস হতেও তো কোন বাধা আসেনি। এরা ছাড়াও অবসরে যাওয়া সকল বিচারপতিই অনেক পরে তাঁদের রায় শেষ করেছেন। তাদের কারোরই পেনশন আটকানো হয়নি। সুতরাং বলা যায়, প্রত্যেক বিচারপতিরই রায় শেষ করতে সময় প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, শুধু আমার পেনশনসংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণেই কেন এই ধরনের শর্ত জুড়ে দেয়া হলো বিষয়টি আমার বোধগম্য হয়নি। প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে চিঠিতে তিনি আরও বলেন, আপনার এই সিদ্ধান্ত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অধিকার এবং আইনগত দিকগুলো আরও জটিল করে তুলবে এবং ভবিষ্যতে এটা আরও জটিল আকার ধারণ করবে বলেই আমি মনে করি। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনার এই সিদ্ধান্তের আইনগত এসব অস্পষ্টতার প্রেক্ষিতে আমি আপনাকে অনুরোধ করব এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অবিলম্বে আমার পেনশন প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেবেন। আপনি এটাও খেয়াল রাখবেন আইনগত অস্পষ্টতা রাখার কারণে আপনার শপথের শর্ত যেন লঙ্ঘন না হয়। আপনার কোন বেআইনী সিদ্ধান্তের কারণে যেন আমি আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য না হই সেই দিকে দৃষ্টি রাখাতেও চিঠিতে প্রধান বিচারপতিকে বলেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
×