ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনা-গোমতী সেতু ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মেঘনা-গোমতী সেতু ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রকল্প

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ ফের ঝুঁকিতে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ মেঘনা ও গোমতী সেতু। পুনর্বাসন ও মেরামতের প্রায় দুই বছরের মধ্যে আবারও সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৪১ কোটি ৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে মেঘনা সেতুর পিয়ার বা পিলারের কাছের মাটি সরে গিয়ে বড় ধরনের গর্ত স্থানে বিশেষ প্রটেকশন এবং দুই সেতুর হিঞ্জ বিয়ারিং ও এক্সপানশন জয়েন্টগুলোর পিরিয়ডিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যে কোন ধরনের ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা না মেনে মেঘনা সেতুর নিচ থেকে বালি উত্তোলন এবং ঘূর্ণি স্রোতের কারণে পিলারের পাশে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনের গতি বেশি থাকলে ঝাঁকুনির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ট্রাক, লরি, বাস কিংবা যে কোন ভারী যানবাহন অতিক্রম করলে সেতুটি কেঁপে ওঠে। এ জন্য সেতুটি মেরামতে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে জরুরী ভিত্তিতে ৪২ কোটি ১৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভার সুপারিশ অনুযায়ী প্রস্তাবিত ব্যয় কমিয়ে ৪১ কোটি ৫ লাখ টাকা করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সূত্র জানায়, মেঘনা এবং গোমতী সেতু রক্ষায় দুই বছর আগে ৪৩৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। সেতু দুটির পুনর্বাসন কাজ ২০১৩ সালের জুনে শেষ হয়। মেঘনা সেতুতে ৩৬টি হিঞ্জ বিয়ারিং ও ১৩টি সম্প্রসারণযোগ্য সংযোগ এবং গোমতী সেতুতে ৬০টি হিঞ্জ বিয়ারিং ও ১৭টি সম্প্রসারণযোগ্য সংযোগ প্রতিস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি মেঘনা সেতুর তিনটি পিয়ারের তলদেশে গর্ত বন্ধ করা হয়। এ জন্য সাত, আট এবং নয় নম্বর পিয়ার ঝুঁকিমুক্ত করতে বালির বস্তা ও বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। সিসি ব্লকও ফেলা হয় কয়েক হাজার। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সেতু দুটি মেরামতের ২০১২ সালে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। দুই বছর পার না হতে একই ধরনের কাজের জন্য আবার অর্থ নেয়া হচ্ছে। ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় মেঘনা সেতুর পিলারের কাছে গর্ত বন্ধ এবং মেঘনা সেতু ও গোমতী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দিতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অধীনে ৯৩০ মিটারের মেঘনা সেতু নির্মাণ করা হয় ১৯৯১ সালে এবং ১ হাজার ৪১০ মিটারের গোমতী সেতু ১৯৯৫ সালে চালু করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে সহায়তা করে জাপান সরকার। সেতু দুটির স্থায়িত্ব ১০০ বছর ধরা হলেও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় দ্রুতই ঝুঁকিতে পড়ে। এছাড়া যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন সেতু নির্মাণেও সহযোগিতা করছে জাপান। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আগে যেসব পিয়ারে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়েছিল সেখানে কোন সমস্যা নেই। নানা কারণে অন্য পিয়ারের পাশে গর্ত তৈরি হয়েছে, যা আগে ছিল না। এ জন্য নতুন করে মেঘনা সেতু ঝুঁকিতে পড়েছে।
×