ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৫ জুলাই ২০১৫

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মুবারক মাহে রমজান। কৃচ্ছ্রতা সাধন ও দিবারাতের কঠিন নিয়মে স্র্রষ্টা ও সৃষ্টিকে নতুন করে উপলব্ধির এ এক বিশ্ব মৌসুম। আজ বলব আল্লাহকে তাওয়াক্কুল ও তাকদীর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা। সৃষ্টি জগতের মধ্যে কার কি আকৃতি, কার কি প্রকৃতি, কার কি কর্ম, কার কি দায়িত্ব, কার কি গুণাগুণ, কার কি বৈশিষ্ট্য হবে। কার জন্ম, মৃত্যু কোথায় কখন কিভাবে হবে ইত্যাদি বিষয় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে সৃষ্টির কোন ইখতিয়ার নেই। আল্লাহর এ নির্ধারণকে ‘তাকদীর’ বলে। আল্লাহ তায়ালা মাখলুকের ভালমন্দ সকল অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত। পৃথিবীতে আল্লাহর ইলমের বাইরে কিছুই ঘটে না ও ঘটতে পারে না। মু’মিন হওয়ার জন্য তাকদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ। কারণ আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাসের ন্যায় তাকদীরের উপর বিশ্বাস করাও ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। বহু সহীহ হাদিসে তাকদীরে বিশ্বাস স্থাপনের নির্দেশ বিদ্যমান। যেমন হযরত উমার (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে ঈমানের মৌল বিষয়গুলোর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাকদীরের ভালমন্দ সকল কিছুর উপর বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। (মুসলিম শরীফ)। হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) বলেন, তাকদীরে বিশ্বাস কেবল আল্লাহর ইলমে আযালীকে মেনে নেয়ার প্রয়োজনেই নয়, বরং স্র্রষ্টার সহিত সৃষ্টির সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার জন্যও তাকদীরে আস্থা স্থাপন করা আবশ্যক। তিনি প্রমাণ করেছেন, এ বিশ্বাস ব্যতিরেকে স্রষ্টার সহিত সৃষ্টির সম্পর্ক গড়ে উঠে না। তাকদীরকে অস্বীকারকারীদের মন্দ পরিণাম সম্পর্কে কতিপয় হাদিস বিদ্যমান রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) বলেন, তাকদীরে অস্বীকারকারীরা যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর পথে ব্যয় করে তবুও যতক্ষণ না তারা তাকদীরে বিশ্বাস করছে আল্লাহ তাদের দান কবুল করবেন না।’ (সহীহ মুসলিম)। তাকীদের উপর ঈমান আনার ব্যাপারটি কেবল দর্শনগত প্রয়োজনেই নয়, বরং নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রেও এ বিশ্বাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বিশ্বাস মানুষকে তার মানবীয় বহু দুর্বলতার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং মানুষের নৈতিকতা ও মননশক্তির উন্নতি সাধনে অদ্ভুত শক্তি যুগিয়ে দেয়। যেমনÑ ক. হর্ষোৎফুল্ল কিম্বা বিমর্ষিত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা। মানুষের প্রকৃতি হলো এমন যে, সে কোন কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে নিজের ইচ্ছা ও শক্তির প্রয়োগ করে। পূর্বেই বলা হয়েছে, তার এ ইচ্ছাশক্তি আদৌ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছা ও শক্তির অধীন। অথচ এ অসম্পূর্ণ ইচ্ছা ও শক্তি প্রয়োগের পর সফলতা অর্জিত হলে সে হর্ষোৎফুল্ল হয়ে উঠে আবার কখনও ব্যর্থতা দেখলে সে বিমর্ষ হয়ে পড়ে। মানব চরিত্রের এ দুটি অবস্থাকে নীতি বিজ্ঞানীগণ নৈতিক দুর্বলতা এবং ত্রুটি বলে চিহ্নিত করেছেন। তাকদীরে বিশ্বাস মানুষকে উভয় প্রকারের দুর্বলতা থেকে হিফাযত করে। খ. কঠিন বিপদে মানসিক দুর্জেয় শক্তিলাভ। তাকদীরে বিশ্বাসী মানুষ কঠিন থেকে কঠিনতর কোন বিপদে পড়ে গিয়েও কখনও মনোবল হারায় না। অধিকন্তু এ বিশ্বাস চরম বিপদেও মননশক্তিকে অধিকতর দৃঢ় করে তোলে। মু’মিন ব্যক্তি কোন বিপদে পতিত হলে আল্লাহ তায়ালা তাকে তাকদীরে বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
×