ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইন মানছে না পরিবহন শ্রমিক, হকার ও মার্কেট মালিক

চট্টগ্রামে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ফুটপাথ হকারদের দখলে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৪ জুলাই ২০১৫

চট্টগ্রামে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ফুটপাথ হকারদের দখলে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনা মানছে না পরিবহন শ্রমিক, হকার ও মার্কেটের মালিকরা। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে, ফুটপাথ দখল করে হকারদের পসরা ও মার্কেট মালিকরাও হকার বসিয়ে মার্কেটের সামনের জায়গা দখল করে নিয়েছে। ফলে রমজানে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে এ ধরনের অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন গত ২৩ জুন সিএমপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এ ধরনের অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অথচ, পনের রমজান শেষ হলেও এ পর্যন্ত সিএমপির পক্ষ থেকে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মার্কেট মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা পুলিশের দোহাই দিয়ে নিজের অবস্থান চাঙ্গা রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সিএমপির পক্ষ থেকে জানা গেছে, গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ও চালকরা নির্ধারিত স্থানে যাত্রী উঠানামা করবে। মহানগরীর অভ্যন্তরে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পণ্যবাহী পরিবহন যত্রতত্র পার্কিং করবে না। এক্ষেত্রে বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত শহরে এ ধরনের গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকায় দূর পাল্লার আন্তঃজেলা বাস ও জরুরী পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া কোন ধরনের যাত্রীবাহী বা পণ্যবাহী গাড়ি সকাল আটটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত মহানগরীতে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নগরীর বাণিজ্য কেন্দ্র খাতুনগঞ্জ এলাকার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান জেলরোড হয়ে চলাচল করবে। এদিকে, সকল মার্কেট, বাণিজ্য কেন্দ্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাস বা গাড়ি এবং ব্যক্তিগত গাড়ি মূল সড়কের উপর পার্কিং করতে পারবে না। প্রয়োজনে তারা ব্যক্তিগত পার্কিং ব্যবহার করবে। প্রত্যেক মার্কেট কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্স ও কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে যানজট নিরসনসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। রাস্তায় বা ফুটপাথে ভ্যান গাড়ি বা ঠেলাগাড়ি দিয়ে কোন ধরনের মালামাল ক্রয় বিক্রয় থেকে বিরত থাকবে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও রাস্তার পাশে গ্যারেজ, ওয়ার্কশপসহ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাস্তায় কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। রমজান মাসের জন্য এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে। অভিযোগ উঠেছে, সিএমপির পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পার্কিং, ফুটপাথ ও বিভিন্ন স্থানে জটলা বন্ধ না করে বরং অর্থ আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে নগরীর যত্রতত্র যানজট সৃষ্টি যেমন হচ্ছে, ফুটপাথ দিয়েও পথচারীদের চলাচলে বিঘœ ঘটছে। শুধু তাই নয় নগরীর এমন কোন সড়ক নেই যেখানে ফুটপাথে হকারের অবস্থান নেই। এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে হকার বিতাড়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মাসোহারা আদায়ের কারণে শেষ পর্যন্ত সিএমপির পক্ষ থেকে স্টল নির্ধারণ করতে গিয়ে ফুটপাথের উপরই স্থায়ীভাবে এসএস স্টিল দিয়ে বসানো হয়েছে। ফলে হকার উচ্ছেদের বিষয়টি চাপা পড়ে গেছে। এ ব্যাপারে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে গত বছরের প্রথম দিকে হকার উচ্ছেদের পরিকল্পনা করা হয় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাথ থেকে। সে অনুযায়ী কয়েকদফা অভিযানও পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হকারদের তোপের মুখে পড়ে পুনরায় ফুটপাথে হকার বসানোর ব্যবস্থা করা হয়। অর্থ আদায়ের বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, মূলত ওইসব এলাকায় যাদের টহল ডিউটি পড়ে তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত অসাধু পন্থা অবলম্বন করতে পারে। বিভিন্ন মার্কেটের সামনে থেকে ফুটপাথ উচ্ছেদের বিষয়ে সিএমপিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাও নারাজ স্ব স্ব দোকানের সামনের হকার উচ্ছেদে। কারণ, এসব হকারদের কাছ থেকে তারাও ভাড়া আদায় করে।
×