ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশ এখন মধ্যম  আয়ের দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এরই মধ্যে ‘জননেত্রী’ ‘দেশরতœ’ ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছেন। সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আওয়ামী লীগকে সফল নেতৃত্ব দিয়ে তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে। দলকে যেভাবে সংগঠিত করে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশকেও সার্থক নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছেন। আজ বাংলাদেশ ফুলে-ফলে, ধান-কাউনে, মাছে-ভাতে এক শান্তির নীড়ে পরিণত হতে চলেছে। ‘বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ।’ টার্গেটের অনেক আগেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। টার্গেট ছিল মধ্যম আয়ের দেশ হবে ২০২১ সালে। সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের ক্ষমতা বলেই। শেখ হাসিনা যা বলেন তা বাস্তবায়ন করেন। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বা ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করবেন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করে। সরকারের ১০ বছরের প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। এখন ২০১৫ এরই মধ্যে তার টার্গেট অর্জিত হয়েছে। ডেইলি স্টার-এর শিরোনাম ছিল- ইধহমষধফবংয মড়বং ড়হব ংঃবঢ় ভড়ৎধিৎফ. ঘড়ি ধ ষড়বিৎ সরফফষব রহপড়সব পড়ঁহঃৎু, ংধুং ডই. সংবাদে বলা হয়, ‘ইধহমষধফবংয ুবংঃবৎফধু মৎধফঁধঃবফ ভৎড়স ঃযব ষড়ি রহপড়সব ংঃধঃঁং ঃড় ষড়বিৎ সরফফষব রহপড়সব হধঃরড়হ (খগওঈ), সববঃরহম ঃযব ড়িৎষফ ইধহশং ৎবয়ঁরৎবসবহঃং পড়হভড়ৎঃধনষু. ঞযরং রিষষ নব ংববহ ধং ধ মরধহঃ ষবধঢ় ভড়ৎধিৎফ ভড়ৎ ঃযব পড়ঁহঃু ঃড় নবপড়সব ধ সরফফষব রহপড়সব হধঃরড়হ ধভঃবৎ নবরহম নৎধপশবঃবফ ধং ধ ষড়ি রহপড়সব পড়ঁহঃৎু ভড়ৎ ফবপধফবং’. দৈনিক প্রথম আলোর বৃহস্পতিবারের সংখ্যার প্রধান সংবাদ হলো ‘বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ’। পত্রিকাটির ইকোনমিক এডিটর শওকত হোসেনের রিপোর্ট অনুযায়ী ‘নি¤œ আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায়। বিশ্বব্যাংক গত বুধবার এ তালিকা প্রকাশ করেছে।’ অবশ্য এ পর্যায়ে ভারত, পাকিস্তানও রয়েছে। এবার অবশ্য বাংলাদেশসহ ৪টি দেশ নি¤œ আয়ের দেশ থেকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে উঠে এসেছে। বাকি ৩টি হলো মিয়ানমার, কেনিয়া ও তাজিকিস্তান। সব মিলিয়ে এখন নি¤œ আয়ের দেশ ৩১, নি¤œ মধ্য আয়ের দেশ ৫১টি, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ৫৩টি এবং উচ্চ আয়ের দেশ ৮০টি। সাধারণত মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে এই স্ট্যাটাস অর্জিত হয়। যে সব দেশের মাথাপিছু আয় ১০৪৬ ডলার থেকে ৪১২৫ মার্কিন ডলার, সে সব দেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ। বিশ্বব্যাংক একটি বিশেষ পদ্ধতিতে এই হিসাবটি করে থাকে। এখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৩১৪ মার্কিন ডলার। এটি যেদিন ৪১২৫ ডলার ছাড়িয়ে যাবে সেদিন বাংলাদেশ হবে ‘উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং সেদিকে দ্রুততর গতিতে এগিয়ে চলেছি। জাতি হিসেবে এ অর্জন আমাদের জন্যে গৌরবের এবং উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পথে মাইলফলক বটে। বস্তুত রাষ্ট্র পরিচালক যদি সৎ, দূরদর্শী, মেধাবী হয় তাহলে দেশ এগিয়ে যাবেই। শেখ হাসিনা তারই প্রতীক। আমরা হয়ত আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। কিছু মানুষের বিরোধিতার নামে কিছু মানুষের ক্ষমতাশীলতার নামে কখনও কখনও এগিয়ে চলার গতি শ্লথ হলেও থেমে থাকেনি, থেমে থাকছে না। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০০৬ সালে খালেদা জিয়ার ক্ষমতাকালে মাথাপিছু আয় ছিল ৬শ’ ডলারেরও নিচে, আজ তা দ্বিগুণেরও বেশি। একটা ব্যাপার খুবই ইন্টারেস্টিং, খালেদা জিয়া ক্ষমতা থেকে যাওয়ার সময় খাদ্য ঘাটতি, বিদ্যুত ঘাটতি, অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে ঘাটতি রেখে যান। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তা পূরণ করে দেশকে এগিয়ে নেন। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতাচ্যুত হন তখন খাদ্য ঘাটতি ছিল ৩০ লাখ টন, বিদ্যুত উৎপাদন ছিল ১৬০০ মেগাওয়াট। ঐ বছরই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন এবং ৫ বছরে খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে ২৬ লাখ টন খাদ্য মজুদ রেখে এবং বিদ্যুত উৎপাদন ১৬০০ থেকে ৪২০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করে ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গেলে দেশ ঘাটতির দিকে চলে যায় আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে দেশ সর্বক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত অবস্থায় উঠে আসে। কেবল যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে তা নয়, কয়েকদিন আগে কাগজে দেখলাম ‘বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ।’ আমরা যদি পেছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যা করে বাংলাদেশকে যেভাবে আবার পাকি-পশ্চাৎপদ ধারার দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা হয়েছিল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা থেকে পুরোপুরি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় ফিরিয়ে না আনা গেলেও অনেকখানি যে উদ্ধার হয়েছে তা সবাই স্বীকার করবেন। সেনা শাসক জিয়া যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন, একাত্তরের দালাল-রাজাকার-আলবদর-আলশামস তথা নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতির মাঠে নামিয়ে দেশের শান্তি বিনষ্ট করার চক্রান্ত করেছিলেন তা থেকেও বাংলাদেশ আজ মূলধারায় ফিরে আসার পথে। কি গভীর ছিল জিয়ার চক্রান্ত! শাহ আজিজুর রহমানের মতো রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী, আলীম-মান্নানদের এমপি মন্ত্রী বানিয়ে, পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযম গংকে বাংলাদেশে এনে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ৬ লাখ মা-বোনের সভ্রমহানির প্রতি নির্মম ঠাট্টা করেছিলেন। তার স্ত্রী খালেদা প্রধানমন্ত্রী হয়ে জিয়ার পথেই হাঁটেন। তিনিও দুই আলবদর নিজামী-মুজাহিদের গাড়িতে শহীদের রক্তরঞ্জিত পতাকা তুলে দিয়ে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেন। অর্থনৈতিকভাবেও দেশকে পঙ্গুত্বের পর্যায়ে নিয়ে যান। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে ঐ বছর ১৭ মে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা প্রথমেই ১৫ আগস্ট এবং ৩ নবেম্বরের আঘাত থেকে শক্তি সঞ্চয় করে দলকে সংগঠিত করার কাজে মন দেন। এভাবে স্বৈরাচারী মিলিটারি জিয়া, স্বৈরাচারী মিলিটারি এরশাদ ও অযোগ্য অশিক্ষিত খালেদা জিয়ার দুর্নীতির হাত থেকে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনেন। তারপর ২০০১ সালে ভুয়া ভোটের (১ কোটি ২৪ লাখ) চক্রান্তে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও লড়াই করতে হয়েছে খালেদা জিয়ার মা-বেটার গুণ্ডা বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে। ২০০১-২০০৬ সময়কাল বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষ, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের জন্য ছিল কালো অধ্যায়। সে সময় কেবল আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ায় বহু মানুষের হাত-পা কাটা, চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, ক্ষেতের-গোলার ধান, গোয়ালের গরু, পুকুরের মাছ, বাগানের গাছ লুট করেছে মা-বেটার বাহিনী। হাওয়া ভবন-খোয়াব ভবনের কথা কে না জানে! শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যে ১৯ বার চেষ্টা করা হয়। সবচে’ ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। এক ডজনেরও বেশি গ্রেনেড হামলায় দলীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও তাঁর এক কানের শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রেনেডের স্পিøটার নিয়ে মারা যান ঢাকার প্রথম নির্বাচিত ও সফল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। এ প্রেক্ষাপট এ জন্যে বর্ণনা করলাম যে, এমনি এক বৈরী পরিবেশে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি করতে হয়েছে, সরকার পরিচালনা করতে হয়েছে। সাড়ে ১১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন। তার মধ্যে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে প্রথমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার এবং জেলখানায় ৪ নেতা হত্যার বিচার করেন। মোশতাক-জিয়া বঙ্গবন্ধু ও ৪ নেতার হত্যার বিচার করা যাবে না অর্থাৎ খুনীদের দায়মুক্তি দিয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। দালাল আইন বাতিল করে দিয়ে সেনা শাসক জিয়া সকল যুদ্ধাপরাধীকে জেলখানা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল করে যুদ্ধাপরাধী বিচার শুরু করেছিলেন। তখন ৩৮ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১১ হাজারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছিল এবং ফাঁসি, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে ৬ শতাধিক অপরাধীর সাজা হয়েছিল। জিয়া তাদের সকলকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পাপ পাপই, শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেন। এর মধ্যে ১৮ জনের বিচারের রায় হয়েছে। তন্মধ্যে দুই জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত দুইজন কারাগারে মারা গেছে, বাকিদের চূড়ান্ত রায় অপেক্ষাধীন। এ গেল একদিক। বাংলাদেশ এমনি এমনি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়নি। আজ মানুষের মাথাপিছু আয় ১৩১৪ মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, খাদ্য উৎপাদন বাড়তে বাড়তে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কেবল উদ্বৃত্ত নয়, রফতানি করা শুরু হয়েছে। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বহু দেশের জন্যে ঈর্ষণীয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ও ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বাংলার জনগণের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তি হয়, যা ‘মুজিব-ইন্দিরা’ চুক্তি নামে খ্যাত। কিন্তু ৩৭ বছর কেউ তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শেখ হাসিনাই ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করেন। ছিটমহলের মানুষেরা আজ তাদের দেশ পেয়েছে, পতাকা পেয়েছে, ভোটাধিকার পেয়েছে। শুধু তাই নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রেখে ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা আদালতে মামলা করে বঙ্গোপসাগরে আমাদের জলাঞ্চল তথা সমুদ্রসীমাও নির্ধারণ করেছেন। গঙ্গার পানির হিস্সা আদায় করেছেন, তিস্তার পানির হিস্সাও আদায় হবে। আজ বাংলাদেশের যানবাহন সরাসরি নেপাল-ভুটানও যেতে পারবে। এমনিভাবে বলতে গেলে গ্রন্থ রচনা করতে হবে। তবে সবচে’ বড় ব্যাপার হলো বিশ্বব্যাংকের চক্রান্ত মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। পেট্রোলবোমাবাজ, জঙ্গীবাদ দমনে শেখ হাসিনার সাহস ও জিরো টলারেন্স আজ বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে। শেখ হাসিনা গত বুধবার স্বাধীনতার পক্ষের সাংবাদিক ইউনিয়নের ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে প্রেসক্লাবে আসেন। তিনি প্রেসক্লাবের বর্তমান অবস্থা দেখে পরামর্শ দেন যে, এখানে বিশ্বমানের একটি আধুনিক জাতীয় প্রেসক্লাব থাকা দরকার। একটি পরিপূর্ণ নকশার ভিত্তিতে বহুতল ভবনে আধুনিক মিলনায়তন, একাধিক রেস্টুরেন্ট, খেলাধুলার সুযোগ এবং ওপরে বিদেশী সাংবাদিকদের থাকার জন্যে ডরমিটরি থাকা দরকার। এজন্য তিনি সবরকম সহযোগিতা দেয়ারও আশ্বাস দেন। শেখ হাসিনার এ ঘোষণায় ক্লাবের কিছু সাবেক দখলবাজ কর্মকর্তা বলতে শুরু করেছেন- ‘প্রেসক্লাব নির্মাণে জিয়া পরিবারের অবদান নাকি সবচে’ বেশি।’ শুনে আমি অবাক হলাম। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, এ প্রেসক্লাবের জমিন দিয়ে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অবশ্য বঙ্গবন্ধু সরকারের কেউ কেউ এখানে সচিবালয়ের সম্প্রসারণের কথা বললেও বঙ্গবন্ধু তা শোনেননি, জায়গাটা প্রেসক্লাবকেই দিয়ে যান। কিন্তু তৎকালীন নেতৃত্ব তা রেজিস্ট্রি করে নেননি। মিলিটারি জিয়া গড়হবু রং হড় ঢ়ৎড়নষবস বলে প্রেসক্লাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও বর্তমান ভবন নির্মাণে এক পয়সাও দিয়ে যাননি। বিচারপতি সাত্তার প্রেসিডেন্ট হলে সাংবাদিক ইউনিয়ন তাকে প্রেসক্লাবে দাওয়াত দিলে তিনি আসেন এবং বর্তমান ভবন নির্মাণে ২৪ লাখ টাকা দেন। এর সঙ্গে আগা খানের দেয়া ১০ লাখ টাকা যোগ করে ক্লাব ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন পৌনে ৩ একরের মধ্যে মাত্র এক একর ১২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়। যেহেতু পুরো জায়গার এলটমেন্ট দেয়া হয়নি, তাই খণ্ডিতাংশ রেজিস্ট্রি না করে এমনিতেই কাজ শুরু করা হয়। মিলিটারি এরশাদ ক্ষমতায় এলে তিনি প্রেসক্লাবে আসেন এবং ভবন নির্মাণের দায়িত্ব নেন। তখন পূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত চীফ ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানে ও এরশাদ সরকারের অর্থায়নে বর্তমান ভবন নির্মিত হয়। অবশ্য এরশাদ সাহেব চেয়েছিলেন তিনি উদ্বোধন করবেন। কিন্তু একদল সাংবাদিক স্বাক্ষর সংগ্রহের ফলে তিনি আর আসতে পারেননি। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, তাহলে কোথায় জিয়া পরিবারের অবদান? বরং জিয়া পরিবারের অনুসারীরা ক্লাবের দখলে থাকা এক একর ছেড়ে দিলে সরকার তাতে ট্রান্সপোর্ট পুল নির্মাণ করে। তবে আমি তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং সফল সাহসী রাষ্ট্রনায়ক। তিনি একবার যখন বলেছেন প্রেসক্লাবের আধুনিকায়নের কথা তখন বিশ্বমানের আধুনিক প্রেসক্লাব হবে। ঢাকা ॥ ৩ জুলাই ২০১৫ লেখক : সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×