ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাঁপাইয়ে আম চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ কর্মকর্তা কর্মচারী

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ৩ জুলাই ২০১৫

চাঁপাইয়ে আম চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ কর্মকর্তা কর্মচারী

ডি. এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ গণহারে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারী-বেসরকারী অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা ইত্যাদি। কোন কিছুই বাদ নেই। বড় কর্তার অর্থাৎ অফিসের বসের হুকুমে চাঁদাবাজির আওতায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা অন্তর্ভুক্ত। কিসের চাঁদা? অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ঢাকার কর্মকর্তাদের বায়না চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের। তাই অফিস প্রধান খুব বাধ্য হয়েই মাথা পিছু চাঁদা ধরে বসেছেন সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর। শুধু জেলা শহরে নয় চাঁদাবাজির এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা পর্যন্ত। পাঁচ উপজেলার কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে বাধ্য হয়ে টাকা বের করে দিচ্ছে। এর মধ্যে আবার জেলা অফিস ও উপজেলা অফিস বা প্রধান শাখা ব্রাঞ্চ শাখাতেও চলছে প্রতিযোগিতা করে আম পাঠানোর হিড়িক। কোন অফিস নিম্নে ২০ ঝুড়ি আর উপরে শতাধিক পেরিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ শত শত মণ আমের ঝুড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যাচ্ছে সন্তুষ্টি সাধনে। ইউনিয়ন পর্যন্ত অফিসও রয়েছে চাঁদাবাজির আওতায়। গত জুনে এই ধরনের ঝুড়ির সংখ্যা কয়েক সহস্রাধিক ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। একটি বড় উপজেলার জনৈক কর্মকর্তা (কাকুতি মিনতি করে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ রেখেছেন) বলেন, সরাসরি ঢাকাতে আম পাঠিয়েও চাঁদা দিতে হয়েছে জেলা অফিসকে। ফলে বাধ্য হয়েই কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় কিংবা অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে আমের ঝুড়ি পাঠাতে হচ্ছে। তবে কিছু কিছু অফিসের নিজস্ব আম বাগান রয়েছে যা নিলামে ডাক না দিয়ে রেখে দিয়েছিল ঢাকার বায়না পূরণের জন্য। এ ধরনের এক কর্মকর্তা জানান, তার গাছগুলো বিক্রি করলে সরকার কম করেও পাঁচ লাখ টাকার রাজস্ব পেত। বাধ্য হয়েই তা বিক্রি না করে সেই সব গাছের আম ভ্যাট হিসেবে পাঠানো হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অফিসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরসহ উপজেলায় এই ধরনের আম বাগান ও গাছ বিক্রি করলে সরকার রাজস্ব পেত প্রায় ৩০ কোটি টাকা। অনেক অফিস কর্মকর্তা তার চত্বরের ও বাসার আঙ্গিনায় থাকা আম গাছ বিক্রি না করে তা ব্যক্তিগত ভোগদখল করে থাকে। জেলা শহরের এই ধরনের প্রায় ৫০টি অফিস চত্বর বা সরকারী আবাসিক এলাকায় একাধিক আম গাছ রয়েছে। জেলার কোন কোন কর্মকর্তা নির্দিষ্ট বাসা চত্বরের বাইরেও অস্থায়ী বেড়া দিয়ে আম গাছ নিজের দখলে রেখেছে। আবার কিছু কর্মকর্তা সরকারের বেঁধে দেয়া বাস ভবন চত্বরের অধিক এলাকা দখলে নিয়ে রেখেছে একাধিক আম গাছ, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এদিকে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারাও আমের ঝুড়ি পাঠানো রোগে আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত একটি ব্যাংক শতাধিক ঝুড়ি পাঠিয়েও উর্ধতন কর্মকর্তার মন জয় করতে পারেনি বলে জানান। জেলার প্রধান শাখা মিলিয়ে শাখাসহ শতাধিক ব্যাংক রয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই আমের ঝুড়ি পাঠাতে হচ্ছে। অনেক ব্যাংক অর্থের ব্যাপারে নিজে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ব্যবসায়ী লোন গ্রহণকারী পার্টির কাছ থেকে টাকা আদায় করে আম পাঠাচ্ছে ঢাকা বা চট্টগ্রামে। এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি শুধু আম কেনার জন্য একটি ব্যাংককে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছে। অর্থাৎ যে সব ব্যবসায়ী ব্যাংকে লোন পার্টি তারা কেউ বাদ পড়েনি চাঁদার হাত থেকে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, ঢাকা বা চট্টগ্রামের বেশ কিছু কর্মকর্তা নানান অজুহাত খাড়া করে ম্যাংগো টুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কর্মকর্তার কাছে আমের ঝুড়ি নিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছে লম্বা তালিকা। তাদের নামেও যেন আম পাঠানো হয়।
×