ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উবাচ

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৩ জুলাই ২০১৫

উবাচ

ডিজিটাল পাগলা... স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখনও ছাত্রজীবনের সব থেকে আনন্দের সময় এসএসসি পরবর্তী মুহূর্ত। দুরন্ত কৈশোরে নেচে-গেয়ে পরীক্ষা পাসের আনন্দ উপভোগই বলে দেয় এমন মুহূর্ত জীবনে বার বার ধরা দেয় না। এরপর কলেজে ভর্তি শিক্ষার নতুন স্তরে প্রবেশ একটা অন্যরকম অনুভূতি নিজের মধ্যে কাজ করে। তবে এবার সেই আনন্দ প্রায় পুরোটাই বিষাদে রূপ নিয়েছে এক ডিজিটাল পাগলের কারণে। সরকারের শিক্ষা সচিব তিনি। নাম যার এনআই খান, সংক্ষেপে অনেকে তাঁকে নাই খান বলেও চেনেন। বহুদিন আগে থেকে তাঁর কর্মকা- আর কথাবার্তায় মনে হয় উনি শুধু সরকারের সচিব নন পুরো সরকারই তিনি চালান। খোদ মন্ত্রীর আদেশ নিজের এক হেয়ালি ইচ্ছায় বদলে দিয়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থীকে দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছেন। এখন ছেলেদের কলেজে মেয়ারা আর মেয়েদের কলেজে ছেলেদের ভর্তি হতে বলেছে তাঁর সফটওয়্যার। আর শিক্ষামন্ত্রী বলে যিনি দায়িত্বে আছেন সেই নুরুল ইসলাম নাহিদ দূরে দাঁড়িয়ে হয়ত মুচকি হাসছেন। কিন্তু এই ১২ লাখ শিক্ষার্থীকে যে দুর্ভোগে ফেললেন নাই সাহেব, তিনি কি এজন্য কিছুই বলবেন না। শুধু হেসেই খুন হবেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী? নাকি এই দায়ের কিছুই বর্তায় না শিক্ষামন্ত্রীর ওপর। নাই সাহেবের ভাষ্যমতে তিনিই তো নায়েমে এই প্রক্রিয়া উদ্বোধন করে বৈধতা দিয়েছিলেন। সকলের বেশ মনে আছে কলেজে ভর্তির তালিকা প্রকাশ করে নাই সাহেব বললেন, এই প্রক্রিয়ার সব দায় আমার। দম্ভ করে আঙ্গুল উঁচিয়ে সাংবাদিকদের বললেন, লেখেন পারলে আমার বিরুদ্ধে লেখেন। কলেজে ভর্তির তালিকা দেয়া হয় গভীর রাত্রে। তাও আবার একবার নয়, বার বার দিন-তারিখ বদলে বদলে। এ যেন গোপন সমঝোতা হচ্ছে, রাত ছাড়া সম্ভবই নয়। সকলের নিশ্চয়ই মনে আছে শেষ দিনের কথা যেদিন তিনি রাতে বুয়েটে গিয়ে বললেন, শোনেন যন্ত্রের বিষয় আনসার্টেনিটি তো থাকবে, সফটওয়্যারের বিষয়ের কথা কি কেউ বলতে পারে? বুয়েটের আরেক ডিজিটাল পাগলা নাই সাহেবের পাশে দাঁড়িয়ে মাথা দোলান। ভাবখানা এমন ধারা যা বলছে নাই সাহেব ঠিক আছে। আর দুর্ভাগা শিক্ষার্থীদের চোখ ফেটে বেদনার অশ্রু ঝরে। অবাক বাংলাদেশ! খালেদার সেলফ সেন্সরশিপ স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেগম খালেদা জিয়া এখন নিজেই নিজেকে সংশোধন করছেন। আজ যে কথা বলছেন, হয়ত আগামীকাল বলছেন যা বলছি অতটা না অতটা না, কিছুটা কিছুটা ঠিক ছিল। বেগম খালেদা জিয়া সম্প্রতি এই সেলফ সেন্সরশিপ চালু করেছেন। অন্তত তাঁর কথাবার্তায় তেমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দলীয় চিকিৎসকদের ফোরম ড্যাবের ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি বললেন, আজকাল পুলিশের হাত সরকারের চেয়ে লম্বা হয়ে গেছে। তারা যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, চরম অত্যাচার ও চরম দুর্নীতির সঙ্গে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। আজকে পুলিশ মানুষ গুম করে তাদের কাছেই টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাদের হয় ক্রসফায়ারে দেবে, না হলে জেলে নিয়ে যাবে। আজ পুলিশ আর সেবক নয়। তাদের হাত অনেক লম্বা হয়েছে। আগে আমরা শুনতাম, আইনের হাত অনেক লম্বা। কিন্তু এখন পুলিশের হাত অনেক বেশি লম্বা হয়েছে। তাদের হাত সরকারের চেয়ে বেশি লম্বা। এ সপ্তাহেই তার দল থেকে রাজনৈতিক দীক্ষা নিয়ে কর্নেল অলির দল এলডিপির ইফতার পার্টিতে গিয়ে বললেন, না না এই রকম সব পুলিশ না, কোন কোন পুলিশ এসব করেন। কোন কোন পুলিশ খুব খারাপ, তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলে কথা! স্টাফ রিপোর্টার ॥ বস যা বলেন তাই ঠিক। ভুল বললেও বসই ঠিক, আর ঠিক বললে তো বস আরও ঠিক। এই চর্চা উপমহাদেশে বহুকাল আগে থেকে চলে আসছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিপজ্জনকভাবে ইতিহাস বদলে দিতে চাইলেও তার অধস্তনরা বিষয়টি ঠিক হচ্ছে না বলে ধরিয়ে দেননি। উল্টো তারা মুখ্যমন্ত্রীর নামে বিজ্ঞাপন বানিয়ে ছেপে দিয়েছেন, যাতে সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসই বদলে গেছে। শুধু বিদ্রোহের ইতিহাসই নয়, তার সঙ্গে বিদ্রোহের নেতৃত্বেও এতকাল পর এসে কাটছাঁট করে পরিবর্তন করে দিয়েছে মমতার রাজ্য সরকার। দেশটির এক নম্বর বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার এ খবর ছেপেছে। পত্রিকাটির খবরে বলা হচ্ছে, ‘নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর হুল দিবস উদ্যাপন। সিধো-কানহো ডহরে সাঁওতাল বিদ্রোহের শহীদ স্মরণের অনুষ্ঠানে সিধো ও কানহো মুর্মুর উত্তরসূরিদের সংবর্ধনা দেয়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজ করেছিলেন, ‘ডহরবাবু’র পরিবারের লোক কেউ আছেন কি-না। সেটা ২০১১-এর ৩০ জুনের ঘটনা। ডহর বা চলার পথকে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের কোন শহীদের নাম। গত মঙ্গলবার বছরের হুল দিবসে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ‘সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর শহীদ সিধো-কানহো-বিরসা’র প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তবে নিজের মুখে নয়, তাঁর সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপক বিজ্ঞাপনটি দিয়েছে। সেখানেই সিধো-কানহোর পাশে বসানো হয়েছে বিরসা মুন্ডার নাম। ঘটনাচক্রে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরও মমতারই হাতে রয়েছে। রাজ্যের বিজ্ঞাপন বিরসাকে সাঁওতাল বিদ্রোহের ‘অমর শহীদ’ বলে অভিহিত করলেও ইতিহাস কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। প্রথমত, বিরসা সাঁওতাল নন। ফলে সাঁওতাল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা। দ্বিতীয়ত, সাঁওতাল বিদ্রোহ আর মুন্ডা বিদ্রোহের সময়কালও এক নয়। ফলে হুল দিবসে বিরসাকে স্মরণ করার যুক্তি নেই। সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা ১৮৫৫-এর ৩০ জুন আর শেষ ১৮৫৬-এর জানুয়ারিতে। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, বিরসার জন্ম হয় সাঁওতাল বিদ্রোহের ২০ বছর পর, ১৮৭৫ সালে। তাঁর নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহের সময়কাল ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সাল। ‘ক্যানসেল মাই লাস্ট এ্যানাউন্সমেন্ট’ স্টাফ রিপোর্টার ॥ একদা তিনি সামরিক শাসক ছিলেন, ইংরেজীতে যাকে বলা হয় চীফ মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্ট্রেটর সংক্ষেপে (সিএমএলএ)। তিনি এইচএম এরশাদ। দেশের বহুকালের সব থেকে আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি। কেবলমাত্র তাঁর উবাচের কারণে তিনি ফিরে ফিরে আসেন সংবাদের শীর্ষে। জন্ম দেন বিতর্কের। তিনি হয়ত এখন যা বলছেন ১০ মিনিট পরে গিয়ে তা বদলে দিচ্ছেন। বলছেন, না না ওভাবে না, এভাবে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলা হয়ে গেছে অন্যভাবে। সঙ্গত কারণে অনেকেই সামরিক শাসন জারি থাকার সময় ‘সিএমএলএ’-কে বলতেন এটার আসল পূর্ণরূপ হচ্ছে ক্যান্সেল মাই লাস্ট এ্যানাউন্সমেন্ট। অর্থ আমার আগের কথাটা বদলে দাও। এখনও তিনি ভুলে যান তিনি আর সিএমএলএ নেই। এখন যদি কথা বলেন, ১০ মিনিট পরে বলেন যাও বদলে দিয়ে আস, তাঁর কথা কেউ শুনবে না। এখন কে বলবেন স্যার আসলে ওটা বলতে চাননি। ওটা ওভাবে না, এভাবে হবে। তাই এখন নিজের স্ত্রী রওশনকেই ক্ষমা চাইতে হচ্ছে। সম্প্রতি এরশাদ নারী নেতৃত্বকে বলেছেন ‘শো পিস’। আর এতেই গোল বাধে। তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে জাতীয় সংসদে। তিনি ওই সময় আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমরা কথায় কথায় বলি আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পীকার নারী, সংসদের উপনেতা নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী। এরা তো ‘শো পিস’। বাইরে কিন্তু এই অবস্থা না।’ এরশাদের কথায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হওয়ার পর তিনি বললেন, না এভাবে তো বলতে চাইনি। তিনি পত্রিকা অফিসে অফিসে নিজে ফোন করে বললেন, দেখ দেখ সরি। আমি কিন্তু এভাবে বলিনি। আমার না তোমাদের ভুল হচ্ছে, আমি এই কথা বলিনি। তোমরা বদলে দাও। কিন্তু এখন সিএমএলএ’র কথা আর কেউ রাখছেন না। কেউ আর তাঁর শেষ ঘোষণা বদলে দিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু এরপরও কি এই মিস্টার সিএমএলএ’র পরিবর্তন হবে? তা তিনি পন করেছেন এরশাদের কোন বদল হবে না।
×