ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩ জুলাই ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

সাম্প্রদায়িক হামলা কিংবা সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু কাল স্মৃতি আমাদের আছে বৈকি। মাঝে মাঝেই বাংলা মায়ের বদনখানী মলিন হয়। অন্যের ধর্মের ওপর আক্রমণ করে বসে দুর্বৃত্তের দল। অথচ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ইতিহাস। হাজারো উদাহরণ আছে। তবে এই রমজানে বিশেষভাবে বলতে হয় বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারের কথা। রাজধানীর এ বিহার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বহু মানুষ সারাদিন রোজা রাখলেও ইফতারের সময় ভাল কিছু মুখে তোলার সামর্থ থাকে না। সেই তাদের জন্য এখানে প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। শুরু হয়েছে রমজানের প্রথম দিন থেকে। বিকেল ৫টা বাজতেই এখানে আসতে শুরু করেন গরীব মানুষ। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ হতদরিদ্র মানুষ এখানে ইফতার করছেন। প্রত্যেকের হাতে একটি করে ইফতার প্যাকেট তুলে দেয়া হচ্ছে। বৌদ্ধ ধর্মগুরু সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের নিজহাতে কাজটি করছেন। সঙ্গে থাকছেন বিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধপ্রিয় মহাথের। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দৃশ্যটি দেখে সত্যি মন ভরে যায়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ যেন এখানে দৃশ্যমান হয়। ধর্মগুরুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইফতারের শুরুটা করেছিলেন সিঙ্গাপুরের এক নাগরিক। নামÑ ভিক্টর লি। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো ইফতারের আয়োজন করেন তিনি। এবার ইফতার করানো হচ্ছে বিহারের পক্ষ থেকে। প্রতিদিন দীর্ঘ লাইনে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে ইফতার সংগ্রহ করছেন সারাবছর অর্ধাহারে অনাহারে থাকা মানুষ। রমজানে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সমিতির পক্ষ থেকেও প্রতিদিনই কোন না কোন ইফতারে আয়োজন করা হচ্ছে। এসব আয়োজনে একসঙ্গে বহু মানুষ যোগ দিচ্ছেন। পাশাপাশি বসে ইফতার করছেন। কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকের সঙ্গে দেখা নেই, এখানে দেখাটা হয়ে যাচ্ছে। কথা হচ্ছে। চলছে আদান-প্রদান। সাধারণ রোজাদার থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিচ্ছেন ইফতারের আনুষ্ঠানিকতায়। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে ইফতার করেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও বিভিন্ন ইফতারে যোগ দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার হোটেল পূর্বাণীতে ইফতারে অংশ নেন তিনি। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ইফতারের আয়োজন করছেন আজ শুক্রবার। ওয়েস্টিন হোটেলে রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকদের সৌজন্যে এ ইফতার পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে প্রতিদিনই কোন না কোন ইফতার আয়োজন থাকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়। ঢাকার কর্পোরেট হাউসগুলোও মোটামুটি দাঁড় করিয়ে ফেলেছে ইফতার সংস্কৃতি। মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিঙ্ক গত মঙ্গলবার ওয়েস্টিন হোটেলে ইফতার পার্টির আয়োজন করে। এভাবে গোটা ঢাকায়ই চলমান আছে ইফতার সংস্কৃতি। এবার রাজধানী ঢাকার বাড়ি ভাড়া প্রসঙ্গ। বাড়ি একটা গড়ে নিতে পারলেই হলো। এরপর যত খুশি ভাড়া নির্ধারণ কর। কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা নেই, ভাড়া বৃদ্ধি কর। করে যাও। এভাবে ভাড়াটিয়ারা যখন অতিষ্ট তখন একটি প্রশংসনীয় একটি রায় দিল হাইকোর্ট। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের আইন কার্যকরের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে দায়ের করা রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার আদালত এ আদেশ দেন। রায়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ছয় মাসের মধ্যে সাত সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্বতন্ত্র কমিশন গঠনে সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সংস্থা বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আলোচনা করে এলাকাভিত্তিক মানসম্মত বাড়িভাড়া নির্ধারণ করবে। কমিশনে আইন ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও আইনজ্ঞের সমন্বয়ে একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠনের জন্য বলা হয়েছে। কমিশন দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে ভাড়া নিয়ে যে বিরোধের সৃষ্টি হয় তার কারণ উদ্ঘাটন করবে। পর্যালোচনা করে সরকারের নিকট একটি সুপারিশ পেশ করবে। সুপারিশে এলাকাভিত্তিক সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। হ্যাঁ, এমন খবর কিছুটা হলেও স্বস্তির। বিশেষ করে ঢাকার ভাড়াটিয়ারা এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সবাই এখন রায়ের বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায়।
×