ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাল থেকে বাস, ৯ জুলাই থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২ জুলাই ২০১৫

কাল থেকে বাস, ৯ জুলাই থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ঘরে ফেরা যাত্রীদের জন্য অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছে সরকারী-বেসরকারী পরিবহন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহ। এর মধ্যে ৯ জুলাই থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হচ্ছে। চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রথম দিন ১৩ জুলাইয়ের টিকেট বিক্রি হবে। প্রতিদিন অন্তত দুই লাখ যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য ঠিক করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৬০ রুটে কাল শুক্রবার থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারী বিভিন্ন বাস কোম্পানি। ১০ জুলাই থেকে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন রুটের লঞ্চের টিকেট বিক্রি শুরুর সিদ্ধান্ত হবে তিন জুলাই। তবে প্রতি বছরের মতো এবারও টিকেট কালোবাজারি রোধ, যাত্রী হয়রানি, বাড়তি ভাড়া আদায়, নিরাপত্তা ও যানজটের দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না ঘরে ফেরা মানুষদের। নয় জুলাই থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট ॥ আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ৯ জুলাই থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হচ্ছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের তিনটি কারখানায় ইঞ্জিন ও কোচ মেরামত করে ঈদের সময় অতিরিক্ত ট্রেন দেয়া হবে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানান, স্বাভাবিক সময়ে রেলে এক লাখ ৭০-৮০ হাজার যাত্রী দিনে পরিবহন করা হয়। ঈদের সময় প্রতিদিন রাজধানী থেকে আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছুটির দিনে আন্তঃনগরসহ সকল কোচ চলবে ঈদের সময় পর্যন্ত। ঈদে রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের ছুটি বাতিলের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রেল স্টেশনে ভিজিলেন্স ও মনিটরিং টিমের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খোলা হবে কন্ট্রোল রুম। টিকেট কালোবাজারি ও নাশকতা রোধে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই রেল স্টেশনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ৯ জুলাই প্রথম দিন বিক্রি হবে ১৩ জুলাইয়ের টিকেট, ১০ জুলাই বিক্রি ১৪ জুলাইয়ের, ১১ জুলাই ১৫ জুলাইয়ের, ১২ জুলাই ১৬ জুলাইয়ের ও ১৩ জুলাই বিক্রি হবে ১৭ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকেট। একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। অনলাইনে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা থাকছে। নৌ-পথে অতিরিক্ত যাত্রী ও বাড়তি ভাড়া নয় ॥ সম্প্রতি ঈদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক বৈঠকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, ঈদের সময় নৌ-পথে অতিরিক্ত যাত্রী ও বাড়তি ভাড়া নেয়া হবে না। কেউ নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ঈদের সময় আবহাওয়া খারাপ থাকলে লঞ্চ বন্ধ থাকবে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ মাওয়া রুটে সকল সমস্যা সমাধান করা হবে। দেশের ১৪ ফেরিঘাটে ইজারা না নেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, টোলের টাকা ফেরির টিকেট নেয়ার সময় পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন লঞ্চঘাটেই ইজারাদার থাকবে না। সঙ্গত কারণে গাড়ি সিরিয়ালের নামে কারো দুর্নীতির সুযোগ থাকছে না। ঘাটে যানজটও হবে না। ঈদের ৭-১০ দিন আগে সব ফেরি সচল হওয়ার কথা জানান তিনি। শুক্রবার থেকে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে বাসের টিকেট ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে কাল শুক্রবার থেকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হচ্ছে। এদিন ভোর থেকে প্রায় ৬০টি রুটে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। পাওয়া যাবে ফিরতি টিকেটও। তবে মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও কোন অগ্রিম টিকেট দেয়া হবে না। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল জনকণ্ঠকে জানান, সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার সকাল থেকেই একযোগে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। বাড়তি ভাড়া রোধ ও যাত্রী হয়রানি ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে ভিজিলেন্স টিম। তিনি জানান, বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হবে। কেউ বাড়তি বাড়া নিলে সমিতির পক্ষ থেকে কিংবা বিআরটিএ পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এসব রুটের কাউন্টার রয়েছে। যে কোন কাউন্টার থেকে যাত্রীরা ইচ্ছা করলে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। হানিফ পরিবহনের যাত্রীদের জন্য যেতে হবে গাবতলী বালুরমাঠ, বাগবাড়ী মিরপুর শাখায়। শুক্রবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। ডিপজল পরিবহনের টিকেট পাওয়া যাবে টেকনিক্যাল সোহরাব পেট্রোল পাম্পের কাছে। ন্যাশনাল ট্রাভেলসের টিকেট পাওয়া যাবে টেকনিক্যাল মোহনা পেট্রোল পাম্পের কাছে। এছাড়া নাবিল পরিবহনের গাবতলী কাউন্টার, এসআর পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টার এবং শ্যামলী পরিবহনের টিকেট পাওয়া যাবে গাবতলী মাজার রোড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামলী, কল্যাণপুর কাউন্টারে। এবার বেশ কিছু পরিবহন অনলাইনে টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া কিছু পরিবহন বিকাশের মাধ্যমে টিকেট বিক্রি করবে। ন্যাশনাল ট্রাভেলস থেকে ১৬২৮৭/০১৭২৭৫৪৫৪৬০ নাম্বারের সাহায্যে বিকাশের মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। এই নম্বরে কল করে ভ্রমণের তারিখ সময় বলতে হবে। একইভাবে যাত্রীর নাম, মোবাইল নাম্বার, যাত্রী কোন কাউন্টার হতে উঠবেন, কোথায় নামবেন এসব তথ্য এজেন্টদের জানাতে হবে। এরপর একই বিকাশ ওয়ালেট নাম্বারে সমপরিমাণ ভাড়া পরিশোধ করলেই পাওয়া যাবে টিকেট। অনলাইনে টিকেট বুকিং সেবা দিচ্ছে সোহাগ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহন, এসআর পরিবহন। অনলাইন টিকেট বিক্রির প্রতিষ্ঠান সহজ এর সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে অনেক পরিবহন কোম্পানি। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, আমরা বাস মালিকদের নিয়ে বসেছি। সবাইকে নির্দেশ দেয়া আছে সরকারী নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার জন্য। এরপরও যদি কারও বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার রুট পারমিট সাময়িকভাবে বন্ধ করা হবে। এছাড়া ওই মালিকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, টিকেট প্রাপ্তির জন্য যাত্রীরা যেন কোন হয়রানির শিকার না হন সে জন্য আমাদের ৩০ সদস্যের একটি ভিজিলেন্স টিম রয়েছে। তারা সর্বক্ষণিক টার্মিনাল পরিদর্শন করবেন। এছাড়াও থাকবে র‌্যাব, পুলিশের বিশেষ টহল টিম। তাই এবার অতিরিক্ত ভাড়া বা কোন রকম হয়রানি করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যেহেতু তেলের দাম বাড়েনি তাই অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার প্রশ্নই আসে না। এদিকে অগ্রিম টিকেট কালোবাজারি বা যাত্রীদের হয়রানি ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য গাবতলী এলাকার নিরাপত্তায় পাঁচ/সাতটি ওয়াচ টাওয়ার ও ১৫-২০ সিসিটিভি বসানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ১০ জুলাই থেকে বিআরটিসির অগ্রিম টিকেট বিক্রি ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য ১০ জুলাই থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি) বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করবে। সরকারী এই সংস্থাটির মোট নয় শতাধিক বাসের মধ্যে ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে চলবে সাড়ে ৪০০ বাস। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে চলবে চার শতাধিক বাস। এছাড়াও ৫০ বাস রিজার্ভ রাখা হবে। যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী এসব বাস বিভিন্ন রুটে চলবে। ১০ জুলাই পাওয়া যাবে ১৫ জুলাইয়ের টিকেট। পর্যায়ক্রমে ১৮ তারিখের টিকেট বিআরটিসির কমলাপুর, কল্যাণপুর, জোয়ারসাহারা ও নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। এবার গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে রিজার্ভ বাস ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, যাত্রী পরিবহনের জন্য যে কোন প্রতিষ্ঠান গাড়ি চাইলে রিজার্ড ভাড়া দেয়া হবে। এজন্য কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দ্রুতই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি। ঈদ কেন্দ্র করে ১৫ অথবা ১৬ জুলাই থেবে বিশেষ সার্ভিসগুলোর শুরুর কথা জানিয়ে বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে বাস রিজার্ভ নেয়ার যোগাযোগ করলে বাসগুলো স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। দূরপাল্লার জেলাসমূহে দেয়া হবে ভাল বাস। যেসব বাস নষ্ট সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ঈদ উপলক্ষে কত রুটে বাস চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব রুটে যাত্রী চাহিদা বেশি সেখানেই বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এর ওপর ভিত্তি করেই রুট নির্ধারণ হবে। তিন জুলাই লঞ্চের অগ্রিম টিকেটে বিক্রির সিদ্ধান্ত হবে ॥ লঞ্চের টিকেট কবে থেকে ছাড়া হবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ জন্য আগামী তিন জুলাই মালিক সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থার সচিব সিদ্দিক পাটোয়ারী জনকণ্ঠকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদ কেন্দ্র করে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী তিন জুলাই মালিক সমিতির বৈঠকে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের টিকেট ছাড়ার তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে। উল্লেখ্য, ঈদ উপলক্ষে রাজধানী থেকে নৌ-পথে ঘরে ফেরা মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। নিরাপদ যাত্রা বিবেচনায় নৌ-পথকে বেছে নেন যাত্রীরা।
×