ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগে ফের অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২ জুলাই ২০১৫

এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগে ফের অনিশ্চয়তা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বন্দর নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে (এনসিটি) অপারেটর নিয়োগ কার্যক্রম আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল। জনস্বার্থে দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন অপারেটর নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ প্রদান করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে গত মঙ্গলবার আদেশের কপি এসে পৌঁছেছে। ফলে টেন্ডার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গেলেও এনসিটি নিয়ে জটিলতা সহজে কাটছে না। এনসিটির ৪ ও ৫ নম্বর বার্থে অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া একেবারেই চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষের আহ্বান করা টেন্ডার মূল্যায়নে যোগ্য বিবেচিত হয়েছিল সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড (জেভি)। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত ২৫ জুন চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়ে যায়। ফলে এনসিটি অপারেশনের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশ এসে পড়ায় প্রক্রিয়াটি থমকে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ জাফর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু আদালত থেকে একটি আদেশ এসেছে সেহেতু সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এর বেশিকিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন্দর কর্তৃপক্ষ এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগের টেন্ডারে এমন শর্ত আরোপ করে যে, এতে করে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানই কাজ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। এ ব্যাপারে জনস্বার্থে একটি রিট মামলা দায়ের করেন হাইকোর্টের আইনজীবী রিদোয়ান আহমেদ। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুন আদালত বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর একটি রুল জারি করেন। এতে এনসিটির ২ ও ৩ এবং ৩ ও ৪ নম্বর বার্থে দরপত্রে অংশ নেয়ার জন্য বন্দরে কর্মরত সকল বার্থ অপারেটরকে সুযোগ দেয়ার আদেশ হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপীল দায়ের হলে চেম্বার জজ হাইকোর্টের আগের আদেশকে স্থগিত করে। এরপর ২১ জুন মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বন্দরের পক্ষে ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস এবং রিট পিটিশনার রিদোয়ান আহমেদের পক্ষে এ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন করে এনসিটির অপারেটরের চূড়ান্ত নির্বাচন ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিতের আদেশ দেন। এদিকে, আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশ থাকা সত্বেও দ্রুততার সঙ্গে অপারেটর নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া শেষ করে আনা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মামলায় বাদী পক্ষের কৌসুলি এ্যাডভোকেট হাসান মোহাম্মদ রিয়াদ জানান, সুস্পষ্ট আদেশের পরও বন্দর কর্তৃপক্ষ এনসিটির ৪ ও ৫ নম্বর বার্থে অপারেটর নিয়োগের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। সূত্র জানায়, ২১ জুনে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ হওয়ার পরও ২২ জুন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি রিপোর্ট সাইন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সেদিন বন্দরের বোর্ড মিটিংও হয়েছে। ২৩ জুন মন্ত্রণালয় এনসিটির ৪ ও ৫ নম্বর বার্থের জন্য সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডসহ দুই প্রতিষ্ঠানের দরপত্র ও বন্দরের প্রতিবেদন চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে। সে অনুযায়ী ২৪ জুন বন্দর কর্তৃপক্ষ সাইফ পাওয়ার টেক জেভিকে নোটিফিকেশন এ্যাওয়ার্ড প্রদান করে এবং পরদিন ২৫ জুন এনসিটি অপারেশনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডের সঙ্গে এনসিটির এ দুটি বার্থে যৌথ দরদাতা হিসেবে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মালিকানা মেসার্স এমএইচ চৌধুরী এবং নোয়াখালীর আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর মালিকানার মেসার্স এ এ্যান্ড জে ট্রেডার্স। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগের জোর দাবি ছিল আমদানি রফতানিকারক এবং বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থার। বার্ষিক প্রায় ১৫ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতাসম্পন্ন এনসিটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেখানে অপারেটর নিয়োগ হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর আবারও বিষয়টি ঝুলে গেল বলে ধারণা করা হচ্ছে। টেন্ডারে অংশগ্রহণের সুযোগ বঞ্চিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, এনসিটির চারটি বার্থে অপারেটর নিয়োগের জন্য চাওয়া হয়েছে টার্মিনাল অপারেটরের অভিজ্ঞতা। ওই অভিজ্ঞতা রয়েছে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের। এতে করে বন্দরের অন্যান্য বার্থ অপারেটররা দরপত্র প্রতিযোগিতায় আসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড এবং আরও দুটি বার্থ অপারেটর যৌথভাবে একটি দরপত্র দাখিল করে, যাতে দর প্রদান করা হয় ৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্যতার বিবেচনায় টিকতে না পারায় এ দরপত্রটিই যোগ্য হিসেবে মূল্যায়িত হয়।
×