ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার অপরাধ কি সরকার মাফ করে দিতে যাচ্ছে?

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২ জুলাই ২০১৫

খালেদার অপরাধ কি সরকার মাফ করে দিতে যাচ্ছে?

খালেদা জিয়া বলেছেন, এই সরকারকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খালেদা তাঁর এই বক্তব্যের ভেতর দিয়ে তাঁর কর্মীদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিলেন, তাঁর নেতৃত্বে বিএনপির আর ক্ষমতায় যাবার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ ‘দীর্ঘদিন’ মানে, অনেক সময়...। অন্যদিকে সরকারকেও তিনি একটা বার্তা দিলেন যে, তিনি আর ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করবেন না। খালেদার এমন বার্তা দেয়ার পেছনেও যথেষ্ট বড় কারণ আছে। ব্রিটেনে ক্যামেরন সরকার নতুন যে আইন করতে যাচ্ছে, এ আইন তার অন্যতম কারণ। অতি উদার গণতন্ত্রের নামে ব্রিটেন যে সন্ত্রাসীদের একটি অভয়ারণ্য হয়েছেÑ দেশটির জনগণ হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছেন। ক্যামেরন তাই ব্রিটেনে গণতন্ত্রের নামে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় নেয়ার বিরুদ্ধে কঠোর আইন তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকারের এ আইন পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারেক রহমান সেখানে একজন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হবে। ব্রিটিশ সরকার তাকে হয় সন্ত্রাসী হিসেবে গ্রেফতার করে তাদের জেলে রাখবে, না হয় বাংলাদেশ সরকার যেহেতু ইন্টারপোলে নির্দেশ দিয়ে রেখেছে তাই তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। বাংলাদেশে তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি। যে মামলায় খালেদার অবস্থান জানতে চেয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একান্ত বৈঠকের সময়। কারণ, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার নিষ্পত্তি ও অপরাধীদের সাজা ভারতের জন্যও প্রয়োজন। ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য এই আঞ্চলিক অস্ত্র চোরচালানিদের সাজা হওয়া দরকার। আর মোদি সরকার যে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য কতটা শক্ত অবস্থান নিতে পারে তার প্রমাণ সম্প্রতি মিয়ানমারে অভিযান। এর থেকে বোঝা যায় তারেক রহমানকে তারা কোন দৃষ্টিতে দেখে। বর্তমান রাজনীতির এই বাস্তবতা বেগম জিয়াও সঠিক বুঝেছেন। এ অবস্থায় তাঁর এখন সব থেকে বড় চেষ্টা তারেককে রক্ষা করা। তিনি এও বুঝতে পারছেন, ব্রিটেনের দিকে তাকিয়ে এখন যদি কেউ শেখ হাসিনার পরিবার ও তাঁর পরিবারকে চিন্তা করে তাহলে কি তাঁর আর রাজনীতি থাকে? শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে সে দেশের পার্লামেন্টে মেম্বার- অন্যদিকে তাঁর ছেলে সন্ত্রাসী হিসেবে সেখানে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাই বেগম জিয়ার এখন সব থেকে বড় চিন্তা তারেককে রক্ষা করা। আবার পাঁচ জানুয়ারির পরের তিন মাস দেশজুড়ে সহিংসতা সৃষ্টি করে শেষ অবধি বেগম জিয়া খালি হাতে বাসায় ফিরে গেছেন। শূন্য হাতে ফিরে যাওয়া এই খালেদা সরকারের জন্য এখন আর কোন রাজনৈতিক চাপ নয়। আর এখানেই প্রশ্ন, সরকার কি এখন বিষয়টি শুধু তাদের রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি হিসেবেই দেখবে? রাজনৈতিকভাবে সরকার জিতে গেছে। বেগম জিয়া তাদের জন্য আর কোন রাজনৈতিক চাপও নয়, দৃশ্যত অর্থনীতির ক্ষতি করার কোন শক্তিও আর রাখেন না। সরকার তাদের মেয়াদ অবধি শান্তিপূর্ণভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- চালিয়ে যেতে পারবে। এখানেই সন্তুষ্ট থাকবে সরকার! এমতাবস্থায় একদিকে বেগম জিয়া বলছেন, এই সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা চলছে অন্যদিকে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে বিচার করার কোন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়নি। তাই সরকার ও বেগম জিয়ার এই অবস্থান কিন্তু স্বাভাবিকই সন্দেহের জন্ম দেবে সাধারণ মানুষের মনে। বেগম জিয়া রাজনৈতিকভাবে শেষ হয়ে গেছেন বলে তিনি ৮০ জনের অধিক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা ও কয়েক শত মানুষকে পঙ্গু করে দেয়ার অপরাধ থেকে মুক্তি পাবেন? প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আগুনে পোড়া মানুষের পরিবারকে সহায়তা দেয়ার সময় বলেছেন, কোন অপরাধীই মাফ পাবে না। এই সন্ত্রাসীদের এমন শাস্তি দেয়া হবে যে, ভবিষ্যতে কেউ আর কখনও এ দেশে এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস পাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর এ দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আছে। কারণ, যে অগ্নিকু-ের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন তা চিন্তা করাও কঠিন। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশে দ্বিতীয় কেউ নেই যে এই চাপের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি এ কাজ করতে পারবেন। জীবন ও ক্ষমতার ওপর যার বিন্দুমাত্র মোহ আছে তার পক্ষে এ কাজ করা দুষ্কর। তাই এখনও দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, পেট্রোল বোমায় নিহত পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করে এই হত্যার হুকুমের আসামি খালেদার বিচার অবশ্যই শেখ হাসিনা করবেন। কিন্তু শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পরেও কয়েকটি বিষয় মানুষকে দোলাচলে ফেলে দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের বিচার করার জন্য যে বিশেষ আদালত গঠন করার কথা সরকারের তরফ থেকে বলা হলো সেখান থেকে আইনমন্ত্রী কেন পিছিয়ে গেলেন? তিনি কেন সে উদ্যোগ না নিয়ে সাধারণ ফৌজদারি কোর্টে এর বিচার করার কথা বলছেন? তাছাড়া, আগুনে পুড়িয়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের হত্যার তদন্ত কাজে সে ধরনের ত্বরিত গতি নেই কেন? ২০১৩ সালের সন্ত্রাসীদের বিচার কাজ দ্রুত এগোয়নি। যার ফলে ২০১৫তে এসে খালেদা আবার একই সন্ত্রাস করার সাহস পেলেন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেছেন, তাঁরা ২০১৪ তে ক্ষমতায় এসে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশি মনোযোগী ছিলেন বলেই এ বিচারগুলোর কাজ এগোয়নি। যার ফলে ২০১৫’র সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই কথার ভেতর দিয়ে যেমন সরল স্বীকারোক্তি আছে, তেমনি তিনি অতি সহজে জাতিকে বলে দিয়েছেন, তাদের একটা ভুল হয়ে গেছে। তাই এক ভুল দু’বার করার কোন সুযোগ নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়ার জন্যে ২০১৫’র সন্ত্রাসীদের বিচার ও শাস্তি দেয়ার কাজটিতে বিলম্ব করার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারকে একটি বিষয় কিন্তু মনে রাখতে হবে, বেগম জিয়া এখন আর কোন রাজনৈতিক শক্তি নন ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তিনি একটি ক্যান্সার। এই ক্যান্সার যতক্ষণ শরীরের ভেতর থাকবে ততক্ষণ বাংলাদেশ শঙ্কামুক্ত নয়। বেগম জিয়ার আর কোন রাজনৈতিক শক্তি নেই। ইচ্ছে করলে আর কোন রাজনৈতিক আন্দোলনও করতে পারবেন না। এ সবই সঠিক। কিন্তু সন্ত্রাস করার ক্ষমতা তাঁর আছে। প্রথমত দেশের ভেতর অবস্থান নেয়া যাবতীয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপ এখন তাঁর আশ্রয়ে। অন্যদিকে আইএস, আল কায়েদা, বোকো হারাম ও পাকিস্তানী আইএসআই-এর অর্থে বেগম জিয়া পরিচালিত হন। তাই বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে সন্ত্রাস চলছে, দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই সন্ত্রাস চালানোর জন্য তারা বেগম জিয়াকে ব্যবহার করবে। যে সব গণতান্ত্রিক দেশ একদিকে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে আবার তারা নিজ স্বার্থে সন্ত্রাসীকে বাঁচিয়ে রাখছে তারাই খালেদাকে এখানে রক্ষা করতে চায়। খালেদার শরীরে গণতন্ত্রের আলখেল্লা চাপিয়ে তাঁকে ঢেকে রাখতে চায়। এ কারণে বর্তমান সরকার যদি দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিবেচনা করে বেগম জিয়ার সন্ত্রাসী ও জঙ্গী অপরাধের বিচারের গতি কমিয়ে দেয় তাহলে ভুল হবে। বরং সরকার যত দ্রুত তার বিচার করে, শাস্তি দিয়ে বাংলাদেশের শরীর থেকে এই ক্যান্সার দূর করতে পারবে- ততই দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল। এই ক্যান্সার যতদিন বাংলাদেশের শরীরে আছে ততদিন কিন্তু সত্যি অর্থে বিদেশী-দেশী কেউ এখানে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে যাবে না। সবার ভেতর একটি আশঙ্কা কাজ করে, এ দেশ তো যে কোন মুহুর্তে জঙ্গীকবলিত হতে পারে। এ আশঙ্কা দূর করেই সরকারকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথকে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য প্রথম ও প্রধান কাজ আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারী খালেদার বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা। [email protected]
×