ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যস্ততা বেড়েছে ভৈরবের পাদুকা কারিগরদের

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ১ জুলাই ২০১৫

ব্যস্ততা বেড়েছে ভৈরবের পাদুকা কারিগরদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব, ৩০ জুন ॥ ভৈরবের একটি সম্ভাবনাময় খাত পাদুকা শিল্প। এই শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ৮ হাজার ছোট-বড় কারখানা। যাতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার পাদুকা কারিগর। ঈদ আসলেই কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সারা বছর যা বিক্রি হয় তার সিংহভাগই হয় ঈদ উপলক্ষে। এ সময় পাদুকার পাইকারি দোকান ও কারখানাগুলোতে সারাদেশ থেকে আসা ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে এ বছর তারা পাদুকার সঠিক দাম পাচ্ছেন না পাদুকা শিল্পের উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও বিদেশী জুতা আমদানির কারণে। বন্দরনগরী ভৈরবে পাদুকা শিল্পের কারখানা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানে গড়ে উঠেছে ৪০-৫০টি মার্কেট। পৌর এলাকার কমলপুরসহ উপজেলার গজারিয়া, মানিকদী, কালিকাপ্রসাদ, শিমুলকান্দি, বাঁশগাড়ির ২০টি গ্রামে ছোট বড় ৮ হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে। কারিগর ও মালিকগণ জানান, এ সম্ভাবনাময় খাতকে প্রসারের জন্য সরকারীভাবে কোন উৎসাহ উদ্দীপনা এবং সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়ায় তারা হতাশ। প্রতি বছর রমজান আসলেই বেড়ে যায় পাদুকা তৈরির বিভিন্ন উপকরণের দাম। কিন্তু বাড়ে না তাদের উৎপাদিত পাদুকার দাম। তা ওপর বিদেশী পাদুকা বিশেষ করে বার্মা ও চায়না থেকে আমদানিকৃত নিম্নমানের পাদুকার আগ্রাসনে ভৈরবের পাদুকা শিল্প হুমকির মুখে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩৫ সালের দিকে ভৈরব এলাকার অসংখ্য শ্রমিক কলকাতার বিভিন্ন পাদুকা কারখানায় কাজ করত। ১৯৪৭ সালে পাক ভারত বিভক্তির পর তারা কলকাতা ছেড়ে এসে এদেশে পুরান ঢাকায় পাদুকা কারখানা গড়ে তোলেন। সেই থেকেই ভৈরবের লোকজন পাদুকা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। পরবর্তীতে এসব শ্রমিকরা ভৈরবের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলেন পাদুকা কারখানা। কেউ কাগজের তৈরি পাদুকা বক্স, কেউ জুতার হিল, কেউ ম্যাটেরিয়ালস, কেউ পাদুকার লেভেল ছাপা, কেউ সোল তৈরির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। পাদুকা শিল্পকে কেন্দ্র করে ভৈরবে প্রায় শতাধিক ম্যাটেরিয়ালস এর দোকান গড়ে উঠেছে। বক্স, জুতার হিল, জুতার সেলাই ঘর, লেভেল ছাপার দোকান ঘরের সংখ্যাও প্রায় শতাধিক বলে ব্যবসায়ীরা জানায়। ভৈরবের কারখানাগুলোতে সব বয়সী নারী পুরুষ, কিশোর ও শিশুরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। সব কারখানায় নিত্য নতুন ডিজাইনের স্যান্ডেল, সু, পাম্পিহিল, হাই হিল ও ফ্ল্যাট পাদুকা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত পাদুকার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভৈরব শহিদুল্লাহ কায়সার পাদুকা মালিক সমিতির সম্পাদক মজিবুর রহমান জানান, ভৈরবে এখন পাদুকা শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিদেশী জুতা আমদানি। দেশের এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে বিদেশী জুতা আমদানি বন্ধ করতে হবে। ভৈরবে গড়ে উঠেছে একাধিক বিক্রয়ের পাইকারি মার্কেট। স্থানীয় পাদুকা কারখানার মালিক হাবিবুর রহমান জানান, পাদুকা শিল্পকে বাঁচাতে ভৈরবে একটি বৃহত্তর পাইকারি পাদুকা বিক্রি মার্কেট নির্মাণসহ কারখানার মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে এ দেশে পাদুকা চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি করা যেত।
×