ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

আওয়ামী লীগ থাকুক আওয়ামী লীগেই

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১ জুলাই ২০১৫

আওয়ামী লীগ থাকুক আওয়ামী লীগেই

একক শক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিশাল সাফল্য অর্জন করেছিল। পাকিস্তানী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নির্বাচনী জোট গঠন করার পথে যায়নি দলটি। কিন্তু একুশ শতকে এসে দলটি আবার একক শক্তিতে ক্ষমতাসীন হওয়ার মতো শক্তিমত্তা অর্জন করতে পারেনি। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দলটিতে ভাঙ্গন এবং দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া নেতাদের আরও দল গঠন এই একক শক্তি অর্জনের পথে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তিন দফা দলটি ক্ষমতায় এসেছে। ১৯৯৬ সালে প্রায় একক শক্তি নিয়ে দলটি বিজয়ী হওয়ার পর অন্য দলের সহায়তায় সরকার গঠন করেছিল। ২০০১ সালে নির্বাচনী জোট করেও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জোট গঠন করে বিজয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করতে হয়েছে। অবশ্য এটা এক ধরনের কোয়ালিশন। দেখা যাচ্ছে, দিন দিন দলটির একক শক্তি অর্জনের ক্ষেত্রটি সঙ্কুচিত হয়েছে। অর্থাৎ দলের সাংগঠনিক শক্তি হ্রাস পেয়েছে। এর কার্যকারণও রয়েছে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে সরকার গিলে ফেলেছে। সরকার আর দল একীভূত যেন। তাদের পৃথক সত্তা মেলে না। ভারতে সরকার ও দল পৃথক সত্তা এবং সরকার পরিচালনায় দলের ভূমিকা রয়েছে। সরকারী নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে দলের চাপ থাকে। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর সরকার নীতিগত অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। দলের যারা দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকেন তারা সরকারে যোগ দেন, এমনটা নয়। আর যদি অংশ নেন তবে দলীয় পদ ছেড়েই তা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করলেও দলকে সরকারের মধ্যে টেনে নেননি। বঙ্গবন্ধু দলকে দলের মতোই রেখেছেন। সরকারপ্রধান হওয়ার পর নিজে দলীয় সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। দলের সাধারণ সম্পাদক কখনও সরকারের মন্ত্রী হননি। কিন্তু একালে দল ও সরকার একাকার হওয়ার ফলে দলীয় সাংগঠনিক শক্তি ক্রমশ লোপ পাচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশই মন্ত্রিসভার সদস্য বা সরকারী অন্যান্য পদে রয়েছেন। একই সঙ্গে সরকার ও দলে থাকায় সংগঠনটির পৃথক অস্তিত্ব মেলে না। সাংগঠনিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়ায় সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। যেন সব কিছু ফ্রিস্টাইলে চলছে। দলে নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব যেমন গড়ে উঠছে না, তেমনি নতুন প্রাণশক্তির সম্মিলনও হচ্ছে না। আর তা না হওয়ায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে বরণ করা হচ্ছে। আর এই দল ভারির প্রচেষ্টা মূলত সাংগঠনিক ভিত্তিকেই দুর্বল করছে। ছাত্র ও যুব সংগঠন রাজনীতিতে কোন ভূমিকা রাখতে না পারলেও সুনাম ক্ষুণœ হওয়ার মতো অনৈতিক সহিংস কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে নিজেদের লুটেরা চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে। এরা সরকারের অর্জন ও সাফল্যকে ম্লান করে দিতে তৎপর। সারাদেশে সংগঠন বা সাংগঠনিক শক্তি তেমন নেই, এমন যুব সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী গত ছয় বছরে হানাহানি এবং দলীয় কোন্দলে প্রাণ হারিয়েছেন। দলে নতুনদের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ থাকায় নানা নামে সংগঠন গজিয়ে উঠেছে। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জায়গা-জমি দখলসহ নানাবিধ অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রতিদিনই মিলছে। খোদ ঢাকা মহানগরীতে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি যেমন নেই, তেমনি বহু জেলায় এক দশক ধরে সম্মেলনও হয় না। সাংগঠনিক এই স্থবিরতা আওয়ামী লীগকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, একক শক্তি নিয়ে দলটি আগামীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে এমনটি নয়। ক্ষমতায় থেকেও দলকে শক্তিশালী করা না গেলে ক্ষমতাকে সংহত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। বরং নিয়ন্ত্রণহীন দলীয় নেতাকর্মীদের অপকর্মের মাসুল অতীতে বহুবার দিতে হয়েছে দলকে। দৃশ্য ও অদৃশ্য নানা উপাদান ও উপকরণ নিয়ে হাজার বছরে গড়ে ওঠা বাঙালী জাতির জাতিগত টানাপোড়েনের এক ঐতিহাসিক মুুহূর্তে আওয়ামী লীগ বাঙালী জাতির জাতীয়তা রক্ষা ও বিকাশের লক্ষ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করেছিল। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অন্যতম দল আওয়ামী লীগ মূলত একটি সংগ্রামী রাজনৈতিক গণসংগঠন। দলটি শুধু বাংলাদেশ ভূখ-ের বাঙালী জাতীয়তাবাদী সংগঠনই নয়, দেশপ্রেমিক সংগ্রামী প্রতিবাদী, নির্ভীক ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধাবমান অসাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন। যে দলটি গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ব্যয় করেছেন। জেল জুলুম হুলিয়া নির্যাতনকে বরণ করেছেন। ক্ষমতার মোহে কখনও অন্যায়ের কাছে আপোস করেননি। তিলে তিলে শ্রম দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য দলকে সংগঠিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই শ্রম নিষ্ঠায় গড়া দলটি লুটেরা, মধ্যস্বত্বভোগী আর বাঙালী সত্তার বিরোধীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে, তা দেশ ও জনগণ কেন মেনে নেবে? বঙ্গবন্ধুর বাঙালী শ্রমিক-কৃষকের প্রতি দরদকে উপেক্ষা করে ধনাঢ্য, বিত্তবানদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার কাজটি করবে আওয়ামী লীগ, তা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু এসবের বিরুদ্ধেই লড়াই-সংগ্রাম করেছেন পাকিস্তানের ২৪টি বছর। ১৯৭০ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন কথাও উঠেছিল যে, বঙ্গবন্ধু কেন জোট গঠন না করে এককভাবে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু সে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘বলা হচ্ছে, নির্বাচনী ঐক্যজোটে সম্মত না হয়ে আমরা বাংলার স্বার্থেরই ক্ষতি করছি। কিন্তু বাংলার স্বার্থের নিশ্চয়তা বিধানের জন্যই আমরা নির্বাচনী ঐক্যজোটে আর বিশ্বাসী নই। অতীতে বহুবার, এমনকি ১৯৫৪ সালে ঐক্যজোট গঠনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। বাংলার মানুষ গভীর আশায় বুক বেঁধে যুক্তফ্রন্টকে জয়যুক্ত করেছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি, যুক্তফ্রন্টের নাম নিয়েই আওয়ামী লীগ সদস্যরা ছাড়া আর সব দলের সদস্যরাই কেন্দ্রের সেই ধিকৃত দলটিতে ভিড়ে গিয়েছেন, যে দলকে দু’দিন আগে বাংলার সর্বস্তরের মানুষ বাংলার মাটি থেকে সমূলে উৎখাত করেছে। ফলত সর্বনাশ হয়েছে বাংলার আর বাঙালীর। সর্বনাশ হয়েছে এ দেশের মানুষের। তাই এবার আমরা ভিন্ন চিন্তাদর্শের মানুষের সঙ্গে ঐক্যজোট গঠন করে সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষ্যের প্রতিফলন পরবর্তীকালেও পরিলক্ষিত হয়েছে। ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট গঠন করেছিল। দেখা গেছে, শরিক দল বাকশালের সদস্যরা জাতীয় পার্টিতে এবং সিপিবি ও ন্যাপ সদস্যরা বিএনপিতে যোগ দিয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা মার্কা নিয়ে এরা নির্বাচন করেছিল। এখনকার বাস্তবতায় অবশ্য শরিক দলের অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা তাদের চিন্তাভাবনা ও দলীয় আদর্শ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগকে যে ব্যবহার করছে, তা তো বোঝা যায়। শরিক দলের নেতা কিংবা অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারীদের মধ্যে যারা মন্ত্রী, এমপি বা অন্যান্য পদ পেয়েছেন, তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কাহিনী প্রচার পাচ্ছে। এরা মূলত আওয়ামী লীগের জন্য বোঝাস্বরূপ। অনেক অদক্ষ, অযোগ্য নেতা দলের সামনের সারিতে এমনভাবে আসন গেড়ে বসেছেন যে, যোগ্যরা হালে পানি পাচ্ছেন না। স্মর্তব্য, দেশের সমস্যা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সমাধানের জন্য বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ’৭৫ সালের ২৬ মার্চ এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন, তা স্পষ্ট করে যে, বাকশাল গঠনের পেছনে তাঁর চারটি লক্ষ্য ছিল : দুর্নীতি দমন, উৎপাদন বৃদ্ধি, জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় ঐক্য রচনা। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন যে, ‘উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি গ্রামে কো-অপারেটিভ বা সমবায় গড়তে হবে। জমি রাষ্ট্রায়ত্ত করা না হলেও ফসল পাবে সবাই। আর জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য দেশে একটি মাত্র দল থাকবে।’ মূলত তিনি চেয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্র, সরকার যেখানে হবে কেবল পার্টির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অস্ত্র। কিন্তু আজকে দেখা যাচ্ছে, সরকার ও দল একাকার। যে কারণে মফস্বল থেকে আসা দলীয় নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাক্ষাত পান না। দলীয় নির্দেশনাও জানতে পারেন না। দিন বদলের পালায় আওয়ামী লীগের দৈন্যদশা দিনকে দিন প্রকট হয়ে উঠছে। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় মুখপত্রের নামটি পর্যন্ত ধার করা। ঢাকা মহানগর ছাত্র ইউনিয়নের মুখপত্র ‘উত্তরণ’ দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ হয়ে আসছিল। সেই সংগঠন থেকে আসা নেতারা বর্তমানে এই নামটিকেই আওয়ামী লীগের মুখপত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন, যা দলটির ভঙ্গুর দৈন্যদশাই প্রকাশ করছে। এমনকি দেখা গেছে, ১৯৭৩-৭৪ সালে যে নেতারা ন্যাপ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবকে সাম্রাজ্যবাদীদের পোষ্য বলে উপহাস করে বলতেন, ‘ছাগল নাচে খুঁটির জোরে, মুজিব নাচে কিসের জোরে?’ তারাই আজ শেখ মুজিবের জীবনী রচয়িতা। কিংবা মার্কসবাদ-লেনিনবাদে যারা মুক্তি খুঁজতেন, ছয়দফাকে সাম্রাজ্যবাদের দলিল বলতেন, তারাই রহস্যজনকভাবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস রচয়িতা বনে যায়। আওয়ামী লীগ চিন্তা ও বুদ্ধির বিকাশের ক্ষেত্রে এক দেউলিয়াপনা অবস্থানে রয়েছে। শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করতে যারা সশস্ত্র বেশ ধারণ করেছিলেন, তারা আজ বীরদর্পে শেখ হাসিনার জয়গানে মুখরিত। এ যেন মুজিববিরোধিতা থেকে মুজিবভক্তির নিদর্শন। একাত্তরের দখলদার বাহিনীর বেতার-টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠান করত, সেসব কোলাবরেটররা গণভবনে আমন্ত্রিত হয়, বিভিন্ন পদকও পায়। এতে শঙ্কা জাগে বৈকি। আওয়ামী লীগ তার নাম থেকে মুসলিম শব্দটি মুছে ফেলে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। আজ স্বাধীন বাংলাদেশে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিব প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে বহাল রাখা যায়নি। স্বাধীন দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার পর যেভাবে ‘ধর্ম গেল, ধর্ম গেল’, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা’ বলে চিৎকার শুরু হয়েছিল, তা বস্তুত পাকিস্তানী দর্শনেরই ছায়া মাত্র। সেই একই ধারা প্রবহমান পঁচাত্তরপরবর্তী সময় থেকে। সব ধর্মের সহাবস্থানে যে ধারাবাহিকতা এ দেশে অতীত থেকে বিরাজিত, তাকে রক্ষা করার মতো সাংগঠনিক অবস্থান আওয়ামী লীগে না থাকায় তাকে তার নির্ধারিত জায়গা থেকে পিছু হটতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ছিল আধুনিক। তিনি ধাবিত হয়েছেন পুরো জাতিকে নিয়ে। তাঁর অর্থনীতি, উৎপাদন, সমাজ বিকাশ, সংস্কৃতি সব কিছু নিয়ে বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্যগত ধারাবাহিকতাকেই তাঁর রাজনীতির মৌলিক প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করেছেন। সুতরাং বাঙালী জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে যখনই ঝাঁকুনি এসেছে, তখন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান মুসলমান সকলেই নিজেদের বাঙালী হিসেবে সগর্বে ঘোষণা জারি করে অস্তিত্বের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী জাতি পরিচয় বদলে বাংলাদেশী করা হয়। বাঙালী জাতিসত্তাকে সামনে এনেই বঙ্গবন্ধু লড়াই করেছিলেন জীবনভর। আর এখন আওয়ামী লীগকে এই জাতীয়তাবাদ নিয়ে নতুন করে তৎপর হতে দেখা যায় না। বাঙালী জাতির বাংলাদেশী হয়ে যাওয়ার পেছনে কোন নৃতাত্ত্বিক, ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক চেতনা না থাকলেও তা পাকিস্তানী মানসিকতারই উদ্গিরণ। বাঙালী সত্তার প্রতি পাকিস্তানীদের সব সময় বিরোধিতা ছিল। এখানেও একটি অসৎ উদ্দেশ্য কাজ করেছে। জাতীয় চার মূলনীতির সমাজতন্ত্র আওয়ামী লীগ সংবিধানে পুনর্বহাল করেছে, যা পঁচাত্তর পরবর্তী জান্তারা বিলোপ করে সামাজিক ন্যায়বিচার নামক বায়বীয় তত্ত্ব সামনে আনে। সাম্যবাদের ধারায় সকল মানুষের মৌলিক অধিকার বহাল করার লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করা হয়েছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য নিয়ে এসেছে। তাতে সমাজ, শ্রেণীগত বিভেদ, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা গেছে, তা নয়। তাই পশ্চাদপদদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসহায় মানুষের পাশে রাষ্ট্রকে দাঁড় করালেও দলকে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়নি। মানুষের দু’বেলা দু’মুঠো খাদ্যের ব্যবস্থা করতে শেখ হাসিনার সরকার সর্বাত্মক সচেষ্ট থাকায় দেশ থেকে মঙ্গা দূর করা গেছে। কিন্তু সমাজে লুটেরা শ্রেণীর যে বিস্তার ঘটেছে, তার রাশ টেনে ধরতে পারেনি। বরং দলের নেতাকর্মীদের অর্থলোলুপ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি বেশ সক্রিয়। তাই দেখা যায়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের অনৈতিক অবস্থান। তারা ব্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। সাংগঠনিক কর্মকা- হয়ে পড়ছে স্থবির। ফলে নতুন রিক্রুটমেন্ট নেই। নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে সম্পদ অর্জনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এতে যেমন বেড়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, তেমনি হানাহানি থেকে প্রাণহানি। দলের যুব ও ছাত্র সংগঠন, যাদের রাজনীতিতে দেয়ার কিছু নেই বরং সুনামহানি হয়, এমন সব কাজে লিপ্ত থেকে সরকার ও মূল দলের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করে আসছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে অপশক্তির কোন ষড়যন্ত্রই ক্ষতির কারণ হয় না। হবেও না। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পর ৬৬ বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩৪ বছরই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন শেখ হাসিনা। এ দীর্ঘ সময়ে তাঁকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। যেমন হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। দেশের জন্য এই দলটির যত নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, পৃথিবীর আর কোন দলের এমন ত্যাগের নজির নেই। শেখ মুজিব কত বড়মাপের মহান নেতা ছিলেন, তা আওয়ামী লীগাররা বুঝতে পারেননি। যেমন একালে আওয়ামী লীগাররা বুঝতে পারেন না শেখ হাসিনা কত বড় মাপের নেত্রী। যদি বুঝতেন, তবে নেত্রীর নির্দেশ মেনে চলতেন। দলকে সংগঠিত করতেন। বাঙালী জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক আওয়ামী লীগ। তাই দলটি থাকুক নিজস্ব রাজনীতির আলোকে বাঙালীর জীবনচর্চায়। [email protected]
×