ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রানা প্লাজা দুর্ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১ জুলাই ২০১৫

রানা প্লাজা দুর্ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা

এম শাহজাহান ॥ রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে বাংলাদেশ সরকার ও তিন বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে সিভিল মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার বাদী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক আব্দুর রহমান। সরকারের পাশাপাশি এই মামলায় আসামি করা হয়েছে-জেসি পেনি কর্পোরেশন, দ্য চিলড্রেন প্লেস ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়ালমার্ট স্টোর। এই তিন প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রফতানি হয়ে থাকে। মামলা পরিচালনার ধরনটি কি হতে পারে, আদৌ সরকারের বিরুদ্ধে অন্য একটি দেশের আদালতে মামলা হতে পারে কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই মামলার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছে সরকার। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এর ফলে তৈরি পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে না। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে পারে রানা প্লাজা দুর্ঘটানর ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য তাদের পক্ষে আব্দুর রহমান নামে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এক বাংলাদেশী নাগরিক দেশটির ডিস্ট্রিক কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক অব কলম্বিয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও তিন বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিভিল মামলা দায়ের করেছে। এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবহিত হওয়ার পর মঙ্গলবার জরুরী আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মূলত সিভিল মামলার বিষয়ে করুণীয় নির্ধারণে এই বৈঠক করা হয়। বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, আইন ও বিচার এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবরা অংশগ্রহণ করেন। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে বাংলাদেশ সরকারসহ বিদেশী তিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিভিল মামলা দায়ের করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানতে পেয়ে আমরা করুণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেছি। বিষয়টি এখন আইন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তিনি বলেন, একটি দেশের বিরুদ্ধে আরেকটি দেশের আদালতে মামলা হতে পারে কি না সেটাও জানার বিষয়। অতীতে এ ধরনের মামলার মুখোমুখি হয়নি। তিনি বলেন, এটি ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশের তৈরি পোশাক খাত যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন প্রতিনিয়ত এ খাত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে না। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। মামলা পরিচালনায় যদি আইনজ্ঞ নিয়োগ করতে হয় তাও করবে সরকার। জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল ডিস্ট্রিক কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক অব কলম্বিয়ায় মামলাটি দায়ের করেন আব্দুর রহমান। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিক শরীফা বেগম ও মাহমুদুল হাসানের ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবেও আব্দুর রহমান মামলায় উল্লেখ করেছেন। মামলায় অভিযোগ করে বলা হয়েছে-রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় কারখানাটিকে নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রমমান রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ও অগ্নিঝুঁকির মধ্যে শ্রমিকরা কাজ করছেন। রানা প্লাজা এরকম একটি কারখানা যেখানে বিল্ডিং কোড না মেনে পোশাক কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। এ কারণেই এত বড় দুর্ঘটনা হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত ও এক হাজারের বেশি শ্রমিক পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, রানা প্লাজার পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের মানবাধিকারও লঙ্ঘন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নজরে আনেনি বা আমলে নেয়নি। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি থাকার পরও জেসি পেনি কর্পোরেশন, দ্য চিলড্রেন প্লেস ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়ালমার্ট স্টোর রানা প্লাজায় পোশাক তৈরি করাত। অবশ্য এই তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা মামলায় কত ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে, সে অঙ্ক মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। প্রসঙ্গত, দেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। নয় তলা রানা প্লাজা ধসে মারা যান ভবনটিতে অবস্থিত পাঁচ পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন ১ হাজার ১৬৭ জন শ্রমিক, গুরুতর আহত ছিলেন ৮১ জন শ্রমিক। দেশের তৈরি পোশাক খাতে এটি সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
×