ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সোহেল ৫ দিনের রিমান্ডে

কোকেন আমদানিতে জড়িত আরও দু’জন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১ জুলাই ২০১৫

কোকেন আমদানিতে জড়িত আরও দু’জন গ্রেফতার

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ তরল কোকেন আমদানির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা থেকে আরও ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত কক্সবাজারের প্রাইম হ্যাচারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক গাজী গোলাম মোস্তফা সোহেলকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে চট্টগ্রাম সিএমএম আদালত। এদিকে, কোকেন সংক্রান্তে দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য বন্দর থানা পুলিশের কাছ থেকে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তের নতুন আইও নিয়োগ দেয়া হয়েছে এসি ডিবি (নর্থ) কামরুজ্জামানকে। সোমবার রাতেই গ্রেফতারকৃত আসামিদের গ্রহণ করতে তাঁকে ঢাকায় ডেকে নেয়া হয়েছে। সোমবার রাতে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ গুলশান ও বনানীতে অভিযান চালিয়ে আটক করে আতিক ও মোস্তফা কামাল নামের দুজনকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে ভোজ্য তেলের চালানের সঙ্গে কোকেন আমদানির বিষয়টি। তবে গ্রেফতারকৃত গোলাম মোস্তফা সোহেল এখনও স্বীকার করেননি যে তিন্ িএ ঘটনায় জড়িত। তবে খান জাহান আলী গ্রুপের কাগজপত্র জাল করে এলসি ছাড়াই সূর্যমুখী ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেলের এ চালান দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া থেকে আনা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এদের প্রত্যেককে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত মূল গডফাদারদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হবে। শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশী বকুল ও ভারতীয় নাগরিক রাজু এ চালানের মাস্টারমাইন্ড। এ দুজন অপর লন্ডন প্রবাসী ফজলুর যিনি গোলাম মোস্তফার খালাত বোনের স্বামী তার মাধ্যমে এ চালানটি বাংলাদেশে আনার কাজে সহায়তা করেন। ফজলুর এ চালানটি আনার ক্ষেত্রে বেছে নেন গোলাম মোস্তফাকে। গোলাম মোস্তফা লোভের বশবর্তী হয়ে খান জাহান আলী গ্রুপের কাগজপত্র জাল করেন। উল্লেখ্য, প্রাইম হাচারি লিমিটেড খান জাহান আলী গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্তে বন্দর থানা পুলিশ নিজে বাদী হয়ে গত রবিবার গোলাম মোস্তফা সোহেল ও খান জাহান আলী গ্রুপের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আসামি হয়ে নুর মোহাম্মদ গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, নুর মোহাম্মদের অজ্ঞাতসারে তার প্রতিষ্ঠানের প্যাড ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ, কোন ধরনের এলসি ছাড়া সূর্যমুখী ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেলের এ চালানটি এসেছে। যার মধ্যে একটি ড্রামে ইতোমধ্যে প্রায় ১৬৫ কেজি তরল কোকেন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তরল কোকেন থাকার বিষয়টি ঢাকায় দুটি ল্যাবে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া থেকে সূর্যমুখী ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেলের এ চালান আসার বিষয়টি ব্যবসায়ী মহলকে বিস্মিত করেছে। কেননা, সেখান থেকে এ তেল এনে বাংলাদেশে মুনাফা করা যায় না। আর এ কারণেই ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের কেউ এ ব্র্যান্ডের তেল আনেন না। অথচ খান জাহান আলী গ্রুপের নাম ব্যবহার করে ১০৭ ড্রাম বোঝাই সূর্যমুখী তেলের চালানটি এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর একটি ড্রামে যে তরল কোকেন পাওয়া গেছে তা ভোজ্য তেলের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, তরল কোকেনের এ চালানটি উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ বা যুক্তরাজ্যের যে কোন দেশে যাওয়ার জন্য ট্রানজিট রুট হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইন্টারপোলের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশী হস্তক্ষেপে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা তদন্ত চালিয়ে তরল কোকেনের সন্ধান লাভে সমর্থ হয়। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে তরল কোকেন আসার এটাই প্রথম ঘটনা। পাউডার হিসেবে কোকেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে ধরা পড়ার ঘটনা রয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এ তরল কোকেন পুনরায় রিএক্সপোর্ট হতো, না দেশেই ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে তা এখনও রহস্যময়। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’দফায় ল্যাব টেস্টের পর প্রথমবার ধরা না পড়লেও শেষবারের পরীক্ষায় কোকেনের আলামত মিলেছে। এ তরল কোকেন আনার নেপথ্যে যুক্তরাজ্যের ৩ জন ও বাংলাদেশের ২ জন যে জড়িত তা এখন পরিষ্কার। তবে এর সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত রয়েছেন। তারা আশা করছেন, রিমান্ডে আনার পর আসামিদের কাছ থেকে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। সোমবার রাতে ঢাকায় গ্রেফতারকৃত আতিক ও মোস্তফা কামালের বিস্তারিত কোন পরিচয় জানা যায়নি। তবে তারা তরল কোকেন আনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে স্বীকার করার পর লন্ডনে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিক বকুল, ফজলুর ও ভারতীয় নাগরিক রাজুর ব্যাপারে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। এদিকে, কোকেন আটকের এ ঘটনা নিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাদক সংক্রান্তে অভিজ্ঞ দুটি টিম সহসা বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। লন্ডনে মনিটর করছিলেন বকুল ও ফজলুর ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, চট্টগ্রামে খালাস করতে না পেরে কোকেনের চালান ভারতে পাচারের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও পাচারকারিরা সফল হতে পারেনি। এ কোকেনের চালানটি কখন কোথায় কিভাবে খালাস করা হবে সেটা লন্ডন থেকে মনিটর করছিলেন বকুল ও ফজলুর রহমান নামে দুই প্রভাবশালী। কোকেনের চালান আটকের ঘটনায় আটককৃত দুই যুবক এমনই তথ্য প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার তাদের রাজধানীর উত্তরা ও গুলশান থেকে আটক করা হয়। তারা হলেন আতিকুর রহমান খান ও মোস্তফা কামাল। তারা সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। তাদের বাড়ি মৌলভীবাজার। লন্ডন প্রবাসী বকুলও তাদের ঘনিষ্ট আত্মীয়। এছাড়া তাদের দেয়া তথ্যমতে পরে কয়েক ঘণ্টার পরই গ্রেফতার করা হয় এ কে আজাদ নামের আরও একজনকে। তিনি শিপিং কোম্পানি কসকোর ম্যানেজার। এ নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় তিনজনকে আটক করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা তাদের সবাইকে আটকের পর সদর দফতরে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের আটকের ব্যাপারে বিস্তারিত ব্রিফিং দেন মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান। এ সময় আটক আতিকুর রহমান খান ও মোস্তফা কামালকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় সাংাদিকদের জানানো হয়, এই দুজনই ঢাকায় বসে লন্ডনে বকুলের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ করতেন। এ জন্যই তাদের আটক করা হয়। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেন। তাদের দেয়া তথ্যমতে আরও দুইজনকে আটকের চেষ্টা চলছে। জানা যায়, এ দুজনকে আটকের প্রয়োজনীয় ক্লু পাওয়া যায় চট্টগ্রামেই। এ ঘটনায় গঠিত চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুসেইন আহমেদ প্রথমেই সন্দেহভাজনদের আটকের উদ্যোগ নেন। সানফ্লাওয়ার ভোজ্য তেলের আড়ালে কোকেনের চালানটি যেই শিপিং কোম্পানির মাধ্যমে আনা হয়, সেই কোম্পানি কসকোর ম্যানেজার জামালকে প্রথমে আটক করা হয়। তাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। তারপর তার মাধ্যমে উত্তরার ম-ল গ্রুপে হানা দেয়া হয়। এখানেই আটক করা হয় আতিকুর রহমান খানকে। পরে তার মাধ্যমে ফোনে ডেকে আনা হয় তার চাচা মোস্তফা কামালকে। তাদের শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন, বকুল তাদেরও আত্মীয়। তিনি লন্ডনে বসে তাদের চট্টগ্রাম থেকে খালাসের দায়িত্ব দেন। চালনাটি আটকের পরও কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে সে কৌশল নিয়েও ফোনে পরামর্শ দিতেন বকুল। এ সময় ঢাকার বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে দেন দরবারে তৎপর হন আটক দুজন। এ সম্পর্কে ডক্টর মইনুল খান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, কোকেনের এ বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। একাধিক ভাগে কাজ করতে হচ্ছে। প্রথমত হচ্ছে আটক দুজনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক আরও তিনজনকে আটক করা হয়। দ্বিতীয়ত এ চালানের নেপথ্য নায়কদের শনাক্ত করা। তৃতীয়ত আটক কোকেনের পরিমাণ ও গুণগত মান সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণের দ্বারা আরও পরীক্ষা করা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জাতিসংঘের মাদক সংক্রান্ত বিভাগকে রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে একটি চিঠি লিখা হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ওই টিম আসবে। তারা নিজস্ব যন্ত্রপাতি নিয়েই ঢাকা আসবেন। তখন এ কোকেনের সাবির্ক মান ও পরিমাণ বোঝা যাবে। এর পাশাপাশি ঢাকায় আটককৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বাকিদের আটক করা। বিশেষ করে উত্তরার ম-ল গ্রুপের মালিককে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে লন্ডনের বকুল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। তিনি জানান, বলিভিয়ার অরিজিন হলেও কোকেনের এ চালান আসে উরুগুয়ে থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টাগ্রাম পৌঁছার পর পরই শুল্ক গোয়েন্দা নিশ্চিত হয় এ চালানে কোকেন আছে। তারপর খান জাহান আলী ট্রের্ডাসের মাধ্যমে মাল খালাসের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এ সময় শিপিং কোম্পানি কসকোর দুই কর্মকর্তা, খান জাহান আলী ট্রেডার্স ও ম-ল গ্রুপের লোকজন সমন্বিত চেষ্টা চালায় মাল খালাসের। কিন্তু এ চালানের এলসি না থাকায় আর শুল্ক গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর ফলে ওদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। এরপর চক্রটি ওই চালান ভারতে নেয়ার চেষ্টা চালায়। রাজু নামের এক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে আটক আতিকুর রহমান ও মোস্তফা কামাল যোগাযোগ করেন। লন্ডন থেকে বুকল সেটা সার্বিক মনিটর করেন। এ অবস্থায় তারা আটক হয়ে যান। ডক্টর মইনুল খান সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রটি বাংলাদেশকে খুব দুর্বল দেশ হিসেবে মনে করে নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে নির্ভর করত বলেই কোকেনের চালানটি পাঠায়। কারণ বাংলাদেশ থেকে কোন শিপমেন্ট সহজেই উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলোতে ঢুকতে পারে সন্দেহাতীতভাবে। বলিভিয়া থেকে কোন চালান কলম্বিয়া কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে সহজে ছাড় পায় না। সেগুলোকে কোকেন সন্দেহে সবার শীর্ষে রাখা হয়। এ জন্যই তারা বাংলাদেশের রুটকে বেছে নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের বতর্মান সরকারের সুশাসনের দরুন প্রশাসনিক তৎপরতা খুবই কঠোর বলেই ধরা পড়ছে এ জাতীয় চালান। শুল্ক গোয়েন্দার অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসেইন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন চট্টগ্রামের খান জাহান আলী ট্রেডার্সের মালিক নুর মোহাম্মদ, কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, ঢাকায় আতিকুর রহমান খান, মোস্তফা কামাল ও শিপিং কোম্পানির কর্মকর্তা আজাদ। তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই এ রহস্য অনেকটাই উদঘাটিত হবে। মঙ্গলবার রাতেই ঢাকায় আটক তিনজনকে চট্টগ্রামের বন্দর থানার উদ্দেশেই নিয়ে রওনা হয় পুলিশ। জনকণ্ঠের এক প্রশ্নে মইনুল খান বলেন, মোস্তফার কাজিন মোঃ বকুল ইংল্যান্ডে থাকেন। বকুলই মোস্তফাকে বলে ওই কন্টেইনারটি ভারতে রি-এক্সপোর্ট (পুনঃরফতানি) করার জন্য। তখন মোস্তফা কন্টেইনারটি ভারতে রি-এক্সপোর্ট করার জন্য আতিকুরের কাছে যান। তবে রি-এক্সপোর্টে সহায়তার জন্য রাজু নামের এক ভারতীয় নাগরিকের চট্টগ্রামে আসার কথা ছিল। কিন্তু যেদিন রাজু আসবে সেদিন অপারেশন চালানোয় সে আর আসেনি। আটক দুজনই টাকার বিনিময়ে এ কাজ করতে চেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তরলের নমুনা পরীক্ষায় বলিভিয়া থেকে আসা একটি ভোজ্যতেলের কন্টেইনারে কোকেনের অস্তিত্ব থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে কি পরিমাণ কোকেন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কন্টেইনারে থাকা ৯৬ নম্বর ড্রামের ১৮৫ কেজি ভোজ্যতেলের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ তরল কোকেন। তবে কোকেনের প্রকৃত পরিমাণ বের করতে হলে ৫০ মিলিগ্রাম কোকেন প্রয়োজন। যার ঘনত্বের সঙ্গে তুলনা করে ড্রামে তেলের কোকেনের পরিমাণ বের করা সম্ভব। ড. মঈনুল বলেন, ড্রামে তেলে কোকেনের পরিমাণ বের করার জন্য আমরা এনবিআরের মাধ্যমে ইউএনওডিসির আঞ্চলিক কার্যালয় ভারতে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। ইউএনওডিসি থেকে একটি দল এসে তেলে কোকেনের নমুনা সংগ্রহ করবে এবং তারা তা পরীক্ষা করে কোকেনের কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি সম্পর্কে আমাদের জানাবে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক ড্রাগ ডিলারদের হাত রয়েছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ড্রাগ ডিলারদের এজেন্টদের অনেকের নাম জানা গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত ৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে থাকা একটি কন্টেনারে অভিযান চালিয়ে এ কোকেনের সন্ধান পায় শুল্ক গোয়েন্দা ও পুলিশের এসবি শাখা। বলিভিয়া থেকে উরুগুয়ে ও সিঙ্গাপুর হয়ে এ চালানটি আনা হয় সানফ্লাওয়ার তেলের নামে। কিন্তু ব্রিটিশ গোয়েন্দাসহ অন্যান্য দেশীয় গোয়েন্দাদের তৎপরতায় কন্টেনারটি খোলা হয়। তারপর ঢাকায় এনে দুটো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় তাতে কোকেনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তেলের সঙ্গে মিশিয়ে এ কোকেন আনা হয়। পরে তেল থেকে কোকেন আলাদা করে বিশ্ববাজারের ছাড়ার টার্গেট ছিল মাফিয়া চক্রের। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোস্তফার কাজিন মোঃ বকুল ইংল্যান্ডে থাকেন। বকুলই মোস্তফাকে বলে ওই কন্টেইনারটি ভারতে রি-এক্সপোর্ট (পুনঃরফতানি) করার জন্য। তখন মোস্তফা কন্টেইনারটি ভারতে রি-এক্সপোর্ট করার জন্য আতিকুরের কাছে যান। তবে রি-এক্সপোর্টে সহায়তার জন্য রাজু নামের এক ভারতীয় নাগরিকের চট্টগ্রামে আসার কথা ছিল। কিন্তু যেদিন রাজু আসবে সেদিন অপারেশন চালানোয় সে আর আসেনি। আটক দুজনই টাকার বিনিময়ে এ কাজ করতে চেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে।
×