ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় হবে ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১ জুলাই ২০১৫

কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি সই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল। এতে ব্যয় হবে ৭০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মঙ্গলবার চীনের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বেজিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সফরে স্বাক্ষর হয় অনেক প্রত্যাশিত এই চুক্তি। প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেল নির্মাণ কাজ শুরু হবে আগামী এপ্রিল মাসে। ২০১৮ সালের মধ্যে টানেল দিয়ে যান চলাচল শুরু হবার কথা রয়েছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে এটিই হবে কোন নদীর তলদেশে দেশের সর্বপ্রথম সুড়ঙ্গপথ। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও চীনের পরিবহন মন্ত্রী ইয়াং চুয়ান চাং-এর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। আর চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানার চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিসিসিসি) পক্ষে চুক্তিতে সই করেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান লিউ কিচাও। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, বেজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক রুহুল আমিন সিদ্দিকী ও সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমদ উপস্থিত ছিলেন। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশের কৃষি, সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কর্ণফুলী টানেল একটি স্বপ্নের প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র বদলে যাবে। তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে চীন সরকারের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন। বহুল প্রতীক্ষিত এ টানেল বাস্তবায়িত হলে তা সংযুক্ত করবে কর্ণফুলীর দু’পাড়কে। ফলে কর্ণফুলীর দক্ষিণেও গড়ে উঠবে নতুন শহর। নদীর দু’পাড়ে শহর গড়ে উঠলে চট্টগ্রাম শহর রূপ পাবে অনেকটা সাংহাই সিটির আদলে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠের জনসভায় শেখ হাসিনা এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজ হাতে তুলে নিলাম। টানেলটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম নগরী যুক্ত হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে, যা পরোক্ষভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে সারাদেশকে সংযুক্ত করবে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে তাঁরই উপস্থিতিতে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এবার নির্মাণের চুক্তিও স্বাক্ষর হওয়ায় এ টানেল নির্মাণে আর কোন অনিশ্চয়তা থাকল না। সরকার আশা করছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কর্ণফুলী টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনাটি প্রথম গ্রহণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। চউকের তত্ত্বাবধানেই যাবতীয় সমীক্ষা কাজ সম্পন্ন হয়। চীন ও হংকংয়ের দুটি প্রতিষ্ঠান টানেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এতে ব্যয় হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। কিন্তু এর বাস্তবায়ন কাজ সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিধায় পরে তা ন্যস্ত হয় সড়ক বিভাগের উপর। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট পুনরায় ক্ষমতায় এলে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা আরও এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় চীন সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদানে সম্মত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে কানেক্টিভিটি গড়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উপরে রয়েছে শাহ আমানত সেতু, যা চট্টগ্রামকে কক্সবাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। কালুরঘাটে আরেকটি রেল সেতু থাকলেও তা অনেক পুরনো এবং জরাজীর্ণ। আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও সুগম করতে হলে কর্ণফুলীর উপরে আরও সেতু প্রয়োজন। কিন্তু তা করা হলে নদীতে পলি জমে বন্দরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সে কারণে তলদেশে টানেল নির্মাণই যুক্তিযুক্ত মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
×