ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩০ জুন ২০১৫

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনায় বিভোর সর্বত্র ধর্মপ্রাণ মুসলমান। প্রতি রজনীতে তাদের অশ্রুতে সিক্ত হয় তারাবিহর জায়নামাজ। একই সঙ্গে প্রায় ১৫ ঘণ্টার উপবাসব্রত পালনের সময় আকাশ থেকে মেঘমালা ও বর্ষণময় পরিবেশ শীতল আমেজ বুলিয়ে দেয় রোজাদারের দেহমনে। এ বর্ষা পানির সহজলভ্যতার সুযোগ এনে দিয়েছে মুমিনের ঘরে ঘরে। চতুর্দিকে সৃষ্ট সবুজ শ্যামল বনবনানীর দখিনা হাওয়া প্রবাহে নিয়ে এসেছে নন্দন পরশ। এর জন্য কি আমাদের শুকরিয়ার প্রয়োজন নেই? হ্যাঁ! এ জন্য আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতাও জানাতে হবে আর প্রয়োজনীয় নেক আমল করতে হবে। সূরা ওয়াকেয়াতে খোদাওয়ান্দ ইরশাদ করেছেন : তোমরা যে পানি পান কর সে পানি সম্পর্কে কি ভেবে দেখেছ? তা কি তোমরা আকাশ থেকে বর্ষণ কর নাকি আমরাই বর্ষণকারী?’ তবুও কেন তোমরা আমার শুকরিয়া করো না? মহানবী (স.) বলেছেন : মাহে রমজান শোকর ও সবরের মাস। এ মাসে সিয়াম সাধনা ও কিয়াম সাধনা বা নফল ইবাদত বন্দেগীর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহ মনে পরিবার পরিজন ও দেশ দুনিয়ায় যে অফুরান্ত নেয়ামত আল্লাহ মহান দিয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা জানানোর মৌসুম এবং বিপদ আপদ দুর্যোগ এগুলো তো আমাদের পাপ ও পরীক্ষার ফসল, মহামহিম প্রভুর কাছে এসব থেকে পানাহ চাওয়ার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে আকাশ ম-লী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।’ Ñসূরা আম্বিয়া আয়াত (৩০)। আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণমতো, অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম। এরপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্য এতে প্রচুর ফল আছে তোমরা তা থেকে আহার করে থাক এবং ঐ বৃক্ষ সৃষ্টি করেছি যা সিনাই পর্বতে জন্মায়, আহারকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন উৎপন্ন করে।’Ñ সূরা মুমিনূন আয়াত ১৮-২০। বস্তুত: মেঘ আল্লাহর এক সাক্ষাত কুদরতী দৃশ্য। অসময়ে আকাশে মেঘ উঠলে মানুষের মন দুরু দুরু করে ঝড়-তুফানের আশঙ্কায়, সঙ্গে বিদ্যুত চমকানি ও বজ্রপাতের ভয়েও সবাই থাকে তটস্থ, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করে এদিক-সেদিক। আবার প্রয়োজনের সময় মেঘের জন্য আকুতির শেষ নেই, বৃষ্টি না হলে চাষাবাদ, ক্ষেত-খামার সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, জীবন-জীবিকা হয়ে পড়বে দুর্বিষহ। কুরআনুল কারীমের একটি সূরার নামই রয়েছে ‘রা’দ’ বা মেঘের গর্জন।’ উল্লেখ্য, এটি মাক্কী সূরা এবং এর আয়াত সংখ্যা ৪৩। অবশ্য ‘মেঘের গর্জন’ নামকরণের অর্থ এই নয় যে, এতে শুধু মেঘ সম্পর্কিত আলোচনাই এসেছে। এতে স্থান পেয়েছে অন্যান্য বহু বিধিবিধান। সে সব বিষয় বাংলা তরজমার কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে এ মাস থেকে আমরা আমল করার চেষ্টা করব। সূরা রা’দ কুরআনের ১৩তম সূরা। এর ১৩তম আয়াতে রা’দ শব্দটি রয়েছে। যার কারণে এর নামকরণ। আমরা এখানে আমাদের বোঝার সুবিধার্থে ১৩ নং আয়াতটি এবং তৎসংলগ্ন পূর্ববর্তী আয়াতটি উদ্ধৃত করি : তিনিই তোমাদের বিদ্যুত দেখান ভয়ের জন্য এবং আশার জন্য আর উত্থিত করেন ঘন মেঘমালা। তার প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং ফেরেস্তা, সভয়ে। তিনি বজ্রপাত করেন, অতঃপর যাকে ইচ্ছা, তাকে তা দ্বারা আঘাত করেন, তথাপি তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিত-া করে, অথচ তিনি মহা শক্তিশালী। (১৩:১২,১৩)। আসুন পাঠকবৃন্দ বর্ষার এ শীতল মৌসুমে সিয়াম সাধনার এ স্বর্গীয় পরিবেশে আমরা আকাশ ও জমিনের সৃষ্টিকুলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মহান সষ্টা রহমানুর রাহীমের দরবারে বেশি বেশি করে তাসবিহ তাহলিল, দরুদ ও ইস্তিগফারে সময় গুজরান করি এবং সম্ভব হলে ফলদ ও ঔষধি গাছ লাগাই। এটি নফল ইবাদত। আর সকলেই জানি এ মাসে একটি নফল ইবাদতের সওয়াব অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমতুল্য।
×