ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা ওয়াসার ২৬ খালের অর্ধেকই প্রভাবশালীদের দখলে

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৯ জুন ২০১৫

ঢাকা ওয়াসার  ২৬ খালের অর্ধেকই প্রভাবশালীদের দখলে

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীতে ওয়াসার ২৬ খাল। কিন্তু অস্তিত্ব আছে ১৩ খালের। বাকি খালের অনেকাংশই গিলে খেয়েছে প্রভাবশালীরা। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীতে তৈরি হচ্ছে সীমাহীন জলাবদ্ধতা। দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারে ওয়াসা চেষ্টা করেও পারছে না। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করার বিকল্প নেই। খাল উদ্ধার করতে না পারলে ঢাকা শহর ভবিষ্যতে বসবাসের উপযুক্ততা হারাবে। এক সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তখন হাজার চেষ্টা করেও নগরীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না। সূত্র জানিয়েছে, খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ওয়াসার নিয়মিত কাজ। কিন্তু এই কাজ এখন বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিনের মধ্যে আবার সাবেক অবস্থায় ফিরে আসছে। অবৈধ স্থাপনার পেছনে রয়েছে ওয়াসার একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাত। তাদের সহযোগিতায় খালের ওপর ফের স্থাপন হয় অবৈধ স্থাপনা। সরকারী অর্থ খরচ করে সাময়িক সময়ের জন্য খালকে মুক্তি দেয়া হয় মাত্র। বাকি সময় খাল ঢাকা থাকে অবৈধ স্থাপনার নিচে অথবা চলে যায় প্রভাবশালীদের দখলে। ওয়াসার বেদখল খালগুলোর মুক্তি না মিললে একদিন কোন রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা খালগুলো বিলীন হবে। খাল উদ্ধার করার পর আবার তা দখলে চলে যাচ্ছে। রামপুরা, রূপনগর ও কল্যাণপুর খালের ওপর স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পর আবার ওইসব খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই তিন খাল থেকেই ওয়াসার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়াসার খাল উদ্ধার নামের কাজ শেষ হওয়ার পরই ধীরে ধীরে এই বাণিজ্য চলতে থাকে। টাকার বিনিময়ে অবৈধ স্থাপনাসহ খালের জায়গাও ছেড়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে উদ্ধার অভিযানে বেশি খরচ দেখিয়ে লুটে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ বছর খাল উদ্ধারের জন্য ওয়াসার বরাদ্দ রয়েছে ৬ কোটি টাকা। খাল উদ্ধারে থাকেন ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের কর্মকর্তারা। উদ্ধার অভিযানের সময় তারা বলেন, খালের জায়গা ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। বরং অভিযানে দখল হয়ে যাওয়া খালের ৩০ ফুট পর্যন্ত পাড়ও উদ্ধার করা হবে। অনেকের বাড়ির দেয়াল ও ভবনের অংশ পর্যন্ত ভেঙ্গে দেয়া হয়। টাকার বিনিময়ে কাউকে এক ফুট জায়গাও দেয়া হয়নি। জানা গেছে, রাজধানীর রূপনগর খালের ৩ কিলোমিটার এলাকায় কয়েক শ’ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। খালের জায়গা দখল করে তারা বহুতল ভবন নির্মাণ করে আছে। অভিযোগ আছে উদ্ধার অভিযান চালানোর আগে অবৈধ দখলদারদের ওয়াসার কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী খবর পৌঁছে দেয়। খবর পেয়ে অনেক দখলদার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যাদের সঙ্গে বনিবনা হয়ে যায় ওই এলাকায় অভিযানের দলকে নেয়া হয় না। রূপনগর খালের দুই পারে এ ধরনের শতাধিক বাড়ি রয়েছেÑ যারা খালের জায়গা দখল করে বহাল তবিয়তে আছে। যেসব দখলদারদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে-তাদের জায়গায় ওয়াসার ম্যাজিস্ট্রেটকে নেয়া হয় না। কৌশলে অন্য জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এভাবে চলছে ওয়াসার খাল উদ্ধার বাণিজ্য। এদিকে মোহাম্মদপুর কাটাসুর খালের দখল হয়ে যাওয়া অংশ উদ্ধার করার সময়ও একই কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খালগুলো উদ্ধার করে পানি প্রবাহের উপযোগী করার জন্য ঢাকা ওয়াসা এই কার্যক্রম পরিচালনা করলেও একটি খালেও পানি প্রবাহ হচ্ছে না। একদিকে বিরাট অংকের টাকা ব্যয় করে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যায় ওয়াসা-অন্যদিকে উদ্ধার কৃত জায়গা আবার কয়েক দিনের মধ্যে বেদখলে চলে যায়। খাল উদ্ধার করে ওয়াসা স্থায়ীভাবে সীমানা না দেয়ায় এমন কাজ চলছেই। কোন খালই ওয়াসা উদ্ধার করে ধরে রাখতে পারছে না। প্রতি বছর অভিযানের নামে শুধু ওয়াসার টাকাই খরচ হচ্ছে। আর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়াসা জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত ১৩টি খাল ক্রমান্বয়ে অবৈধ দখলমুক্ত করার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রশাসনের সহায়তায় খালগুলো থেকে সিএস দাগ অনুযায়ী অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। পুনঃদখল ঠেকাতে খালগুলোর পাড় বাঁধানোর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বৃষ্টির পানি সহজে নিষ্কাশনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার খাল উদ্ধার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। খালগুলো উদ্ধার হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে। ওয়াসা রাজধানীর ২৬টি খালের রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছে। ওয়াসার নিজস্ব তহবিল থেকে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানটি চলমান থাকবে।
×