ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভয়াশ্রমেই ১২০ প্রজাতি বিলুপ্ত ॥ দক্ষিণাঞ্চলেও দেশী মাছের আকাল

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৯ জুন ২০১৫

অভয়াশ্রমেই ১২০ প্রজাতি বিলুপ্ত ॥ দক্ষিণাঞ্চলেও দেশী মাছের আকাল

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ নদী ও খালের অঞ্চল বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকেই দেশী প্রজাতির মৎস্য ভা-ার হিসেবে খ্যাতি ছিল। কিন্তু সময়ের ঘূর্ণিপাকে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছের প্রজননকাল চৈত্র-বৈশাখ মাসে পুকুর-জলাশয় সেচ করে ডিমওয়ালা মাছসহ সকল মাছ শিকারের মহোৎসব, বিদেশী মাছের চাষ, পানিতে লবাণক্ততা বৃদ্ধি, জলাশয় পুকুর ভরাট ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিভিন্ন জলাশয় থেকে আজ একের পর এক দেশী মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। দেশীয় মাছ রক্ষায় ১৯৫০ সালে মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন করা হলেও এখন পর্যন্ত তার কোন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ফলে দিনে দিনে মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলে দেশী মাছের সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করছে। এককালের চিরচেনা শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, পুঁটি, দারকিনা, পাবদা, বোয়াল, চিতল, রিঠা, বাইন, শোল, গজার, নিন্দাল, টাকি, ডানকিনে, খৈলশে, বাটা, কালিবাউশ, ঢেলা, আইড়, টেংরা, শালবাইন, কানিপাবদা, মধুপাবদা, পাবদা, চেকা, কৈ, তিতপুঁটি, আইড়, তারাবাইন, ফলি, বামোশ, টাটকিনি, কাজুলি, গাং মাগুর, মেনি, লাউয়া, নামাচান্দা, ঘাউড়া, পাঙ্গাশ, নান্দিনা, টিলাশোল, সরপুঁটি, মহাশোল, চান্দা, চেলা, ইচা, মেনিসহ অন্যান্য মাছ বংশ বিস্তার করতে পারছে না। বর্ষাকালে নির্বিচারে যত্রতত্রভাবে জেলেরা ডিমওয়ালা মাছ ধরার ফলেও মাছের বংশ বিস্তারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে ক্রমেই মাছের দেশ দক্ষিণাঞ্চলে দেশী মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে মেঘনা, কালাবদর, জয়ন্তী, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, পয়সারহাট, পালরদী, নয়াভাঙ্গনী, মাছকাটা, লতা, আইরখালী, পায়রা, ভাষানচর, বাগরজা, শিন্নিরচর, তেঁতুলিয়া, বাকেরগঞ্জের তুলাতলা, তান্ডব, খয়রাবাদ, বেবাজ, কাতিভাঙ্গা, রাঙ্গামাটি তুলাতলী নদীসহ সর্বত্র অসংখ্য পুকুর, ডোবা-নালা ও খাল-বিল থাকলেও তাতে আগের মতো দেখা মিলছে না দেশীয় মাছ। সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার জলাশয়, নদী ও খাল-বিল থেকে একসময় দেশী মাছ ধরে বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন এলাকার বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী। এ জন্য দক্ষিণের বিভিন্ন জনপদে গড়ে উঠেছিল মাছ বিক্রির আড়ত। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার মৎস্যজীবীরা নদী, পুকুর, খাল-বিল থেকে নিয়মিত দেশীয় মাছ ধরে হাট-বাজারে বিক্রি করে দিনাতিপাত করতেন। দিন-রাত ও ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলেরা মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই ছিলেন। কিন্তু নির্বিচারে পোনা মাছ আহরণ, জমিতে রাসায়নিক সার ও অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, শিল্প কারখানার বর্জ্যে পানি দূষণ ইত্যাদি কারণে দেশী মাছের বংশ বিস্তারে ব্যাঘাত ঘটায় গোটা দক্ষিণাঞ্চল থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে দেশী মাছ। নদী, খাল-বিল ও পুকুরে আগের মতো দেশী মাছ না থাকায় ইতোমধ্যে জেলেরা তাদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। আবার অসংখ্য জেলে বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপনও করছেন। বানারীপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার জানান, প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে একাধিক খাল, বিল, পুকুর, ডোবা-নালা সেচের মাধ্যমে ডিমওয়ালা মাছসহ বিভিন্ন প্রকারের মাছ শিকার করা হয়। যেসব পুকুর সেচ দিয়ে মাছ শিকার করা হয় সেসব পুকুরগুলোতে চিরতরে অস্তিত্ব হারায় দেশী মাছ। এছাড়াও প্রভাবশালীরা পুকুর সেচের পর রাতারাতি তা ভরাট করে সেখানে মার্কেটসহ বাড়িঘর তৈরি করেন। সূত্রমতে, হাউজিং কোম্পানির রমরমা ব্যবসায় এখন পুকুর ছাড়িয়ে কীর্তনখোলাসহ বিভিন্ন নদী পর্যন্ত দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে জলের বাসিন্দা মাছ আর বেঁচে থাকার স্থান খুঁজে পায় না। বিএম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মতিয়ার রহমান জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছর পর আর দেশীয় মাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ভয়াল ঘূর্ণিঝড়, সিডর ও আইলায় দেশীয় ৬০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এরপর লবণাক্ততা গ্রাস করছে দেশী মাছ। প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশের কারণেই মিঠা পানির অধিকাংশ দেশী মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মৎস্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী এ বিভাগে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে দীঘি, পুকুর ও ডোবা রয়েছে ৮৬ হাজার ২শ’। এর আয়তন সাড়ে ২৩ হাজার হেক্টর। ৯’শ হেক্টরের লেক রয়েছে ৫। এছাড়াও সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জলাশয়ে দেশী ও ছোট প্রজাতির মাছ বিচরণ করে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এসব জলাশয় থেকে ১৩ হাজার মেট্রিক টন ছোট প্রজাতির মাছ উৎপাদিত হয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে উৎপাদন এসে দাঁড়ায় ৮ হাজার মেট্রিক টনে। পরবর্তী বছরগুলোর হিসাব নেই কারও কাছে। হঠাৎ করে দেশী প্রজাতির মাছের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসার ব্যাপারে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, সুপার সাইক্লোন, সিডর ধ্বংস করে দিয়ে গেছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের দেশী প্রজাতির মাছ। মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশী মৎস্য সম্পদকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে কয়েকটি জেলার পুকুরে বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষের প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এতে বদ্ধ জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে। তবে চৈত্র-বৈশাখ মাসে ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধ রাখতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন। ভোর সাড়ে চারটায় তখনও পুরোপুরি ভোর হয়নি। শুরু হয়নি জেলেদের আনাগোনা। কেবল দু’একজন করে ঘাটে আসছে। ঘাট থেকে সামনে চোখ মেললেই কীর্তনখোলা নদীর জলরাশি। এই ঘাটটি বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। নগরীর লঞ্চ টার্মিনালসংলগ্ন এ ঘাটের অবস্থান। এখানেই বসে জেলেদের রাতভর কষ্ট করে ধরে আনা মাছের পাইকারি বাজার। আগের মতো নদীতে মাছ না পাওয়ায় এখন রাত জেগে কষ্টই সার। এমনটাই আক্ষেপ জেলে মোতাহার আলীর (৫০)। তিনি বলেন, নদীতে কি আর আগের মতো মাছ আছে? বাইটকা নাই, নান্দিয়াল, সোনালি বাইন মাছ তো একেবারেই নাই। আইড়-ঢেউস, বোয়াল অনেক কমে গেছে। আগের মতো আর সরপুঁটিও পাওয়া যায় না। তার আক্ষেপ, মাছের দেশে মাছের আকাল হয়েছে। রবিবার ভোরে সরেজমিনে নগরীর পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বড় পাইকারি বাজারে গেলে মাছ নিয়ে জেলেদের এমন আক্ষেপের কথাই শোনা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ২৬০ থেকে ২৭০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে সুস্বাদু অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ৫৪ প্রজাতির দেশী মাছ চরম বিপন্ন। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে ১২০ প্রজাতির মাছ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগৃহীত তথ্য ও গবেষণা মতে, বিপন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা আরও বেশি। এর সংখ্যা কমপক্ষে শতাধিক হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা ৫৪ প্রজাতির মাছকে বিপন্ন ঘোষণা করেছে। বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে ডানকিনে, চিতল, টিলা, খোলশে, বাটা, কালিবাউশ, ঢেলা, আইড়, টেংরা, শালবাইন, কানিপাবদা, মধুপাবদা, পাবদা, চেকা, কৈ, গজার, তিতপুঁটি, আইড়, তারাবাইন, ফলি, বামোশ, টাটকিনি, কাজুলি, গাং মাগুর, মেনি, টাকি, লাউয়া, নামাচান্দা প্রভৃতি। এছাড়া চরম বিপন্ন প্রজাতি মাছের মধ্যে রয়েছে, রিঠা, ঘাউড়া, পাঙ্গাশ, বাটা, নান্দিনা, টিলাশোল, সরপুঁটি, মহাশোল, চান্দা, চেলা প্রভৃতি। পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের একাধিক পাইকাররা জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির নামে কৈ, তেলাপিয়া, মাগুর, পাঙ্গাশ, কোরাল এমনকি রিঠা মাছও উৎপাদন হচ্ছে। কোন স্বাদ না থাকলেও জীবন বাঁচাতে এখন মানুষ এসব মাছ খেতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব মাছের নামের পূর্বে যুক্ত হয়েছে চাষের মাছ। চাষের কৈ মাছ থেকে শুরু করে চাষের পাঙ্গাশ মাছ পর্যন্ত এ অঞ্চলের মানুষের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এখন স্থান করে নিয়েছে। তারা আরও জানান, একসময়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর চাহিদা মিটিয়ে মিঠা পানির সুস্বাধু মাছ ট্রাকভর্তি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হতো। এখন সেখানে মাছের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন ময়মনসিংহ ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চাষের মাছ এখানকার বাজারে বিক্রির জন্য ট্রাকভর্তি করে আনা হয়। প্রত্যেহ ভোরে বরিশাল, ভূরঘাটা, মোস্তফাপুর-মাদারীপুর, গৌরনদী, মাহিলাড়া, বামরাইল, বাটাজোর, ইচলাদী ও টরকীসহ মহাসড়কের পাশে থামছে এসব চাষের মাছভর্তি ট্রাক। সেখান থেকে পাইকাররা চাষের মাছ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শামসুদ্দীন বলেন, চলতি গবেষণায় দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ প্রজাতির দেশী মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আগে ৫ প্রজাতির চান্দা মাছ পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় ৪ প্রজাতির। ১২ প্রজাতির পুঁটির মধ্যে এখন ১ প্রজাতি পাওয়া যায় না। এছাড়া নান্দিল, তিলা শোলসহ অনেক প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে এসব দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও, নদীর সঙ্গে বিলের সংযোগ স্থাপনকারী ক্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া, দেদার বিদেশী মাছ চাষ, জমিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে ওসব দ্রব্য নদীতে গিয়ে দেশী মাছে পচনধরে মরে যাওয়ায় বংশ বিস্তার কমে গেছে। এছাড়াও বিদেশী বিভিন্ন মাছ চাষের ফলেও দেশী মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আফ্রিকান মাগুর চাষ নিষিদ্ধ করা হলেও এখনও তা দেদার চাষ হচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয়ে দেখভাল করার কেউ নেই। সূত্রমতে, আশির দশকের প্রথম দিকেও এদেশের ভূ-প্রকৃতি প্রাকৃতিক মাছের অনুকূলে ছিল। জলজ উদ্ভিদে ভরপুর প্লাবনভূমি যতদিন ছিল ততদিন বিচিত্র মাছে ভরপুর ছিল দেশ। বর্তমানে জলজ উদ্ভিদ সমৃদ্ধ প্লাবনভূমি না থাকার কারণে দেশী মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। যেসব দেশী মাছ এখন পাওয়া যাচ্ছে তাও উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া বিদেশী নানা জাতের রাক্ষুসে মাছ সাবাড় করে ফেলছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশে চাষ হচ্ছে এমন প্রায় ২৪টি বিদেশী মাছ দেশী মাছের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এর মধ্যে পিরানহা, আফ্রিকান মাগুর, তেলাপিয়া, কার্ফু ও থাই সরপুঁটি অন্যতম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। একসময় দেশে আশ্বিন-কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর পলো, জালি, ঝাঁকিজাল, লাঠি, কোঁচ নিয়ে গ্রামের মানুষ একসঙ্গে বিল ও হাওড়-বাঁওড়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠত। মাছ ধরার উৎসবের সেই জৌলুস আজ ম্লান হয়ে গেছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক মৎস্যবিদ বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা যে করা হয়নি তা নয়। মুক্ত জলাশয়ে প্রতিবছর মাছের পোনা অবমুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে পানি না থাকায় সে মাছ আর বড় হয় না। নদী খনন ও মজা হাওড়-বাঁওড় খাল-বিলকে সজীব করে তুলতে না পারলে এ সকল চেষ্টা কোন কাজে আসবে না। নগরীর পোর্ট রোডের মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, আগে প্রতিদিন এ আড়ত থেকে সারাদেশের মোকামে প্রায় কোটি টাকার দেশী মাছ সরবরাহ করা হতো। এখন ইলিশ ছাড়া এ মোকামে আর মাছ আসে না। তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর আগেও যে দেশী মাছ পাওয়া যেত এখন তা সচরাচর চোখে পড়ে না। শিলং, দেশী পাঙ্গাশ, পাবদা, টাকি, শোল জেলেদের জালে ধরা পড়ে না বললেই চলে। তিনি নদীসহ সকল জলাশয়ের নাব্য রক্ষায় বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেশী মাছকে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে অধিক প্রজননক্ষম করার জোর দাবি করেন। এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিপন্ন মাছগুলো পুনরুদ্ধার করতে হাওড়-বাঁওড়, বিল ও নদীতে অসংখ্য অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি জলাধার পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
×