ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রপাহাড়ী অঞ্চলে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে বাপেক্স

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৭ জুন ২০১৫

রপাহাড়ী অঞ্চলে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে বাপেক্স

রাশিদ মামুন ॥ পাহাড়ী এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানে যৌথ উদ্যোগে কাজ করার সিদ্ধন্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানে ফের উদ্যোগ নেয়া হলো। এতদিন চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির বিস্তীর্ণ এলাকা তেল গ্যাস অনুসন্ধানের বাইরে ছিল। পাহাড়ী এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতা না থাকায় বাপেক্স তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞ কোন কোম্পানিকে চাইছে। এক্ষেত্রে পুরোপুরি এই ব্লকগুলো আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) হাতে ছেড়ে না দিয়ে যৌথ উদ্যোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় তেল গ্যাস কোম্পানির মালিকানা ব্লকগুলোতে বজায় থাকবে। একই সঙ্গে দেশের পাহাড়ী এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা হবে। যার ভিত্তিতে দেশের অন্য পাহাড়ী এলাকায় কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তেল গ্যাস অনুসন্ধান চালানো হবে পটিয়া, জালদি, কাছালং এবং সিতা পাহাড় এলাকায়। জানতে চাইলে জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, বাপেক্স পেট্রোবাংলার অনুমতি নিয়েই ব্লকগুলোতে কাজ করার জন্য অভিজ্ঞ কোম্পানির কাছ থেকে আগ্রহপত্র চেয়েছে। এখন আগ্রহপত্র পাওয়ার পরই বোঝা যাবে আইওসি কেমন শর্তে কাজ করতে চায়। পর্যালোচনায় লাভজনক হলেই আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করব। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় কাজ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা হয়নি। এখন আমরা বিশাল এই এলাকাতে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বাপেক্স চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একই এলাকায় যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগ নেয় ২০১১ সালের দিকে। কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি আর আগায়নি। এখন নতুন করে আগ্রহপত্র চাওয়ার ক্ষেত্রে বাপেক্স বলছে ৫০ দশকের গোড়ার দিকে পটিয়াতে একটি বিদেশী কোম্পানি গ্যাস কূপ খনন করার কাজ শুরু করে। কিন্তু তখন ওই এলাকা দুর্গম এবং নিরাপত্তাহীন হওয়ার পাশাপাশি গ্যাসের বাজারও ছিল না। এসব কারণে ওই আইওসি কাজ ফেলে চলে যায়। এছাড়া ৬০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে জালদি এবং ৮০ দশকে সিতা পাহাড়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। একটি আইওসি কাছালংয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, এই এলাকায় অতীতে যে জরিপ করা হয়েছে তার তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে রয়েছে। এর ভিত্তিতে জায়গাগুলোকে সম্ভাবনাময় বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাসের ব্যাপক ঘটতি রয়েছে। এসব এলাকায় গ্যাস পাওয়া গেলে সে সঙ্কট দূর হবে। সাঙ্গু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বন্দরনগরীতে গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। দেশের অন্য এলাকা থেকে গ্যাস নিয়ে সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাসের বিপুল ঘাটতি শিল্প এবং বাণিজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাপেক্স সূত্র জানায়, ২০১১ সালের দিকে সিনোপ্যাকের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি অনেকটা চূড়ান্ত হলেও তা আর আগায়নি। ওই সময়ও বলা হয়েছিল যৌথভাবে চট্টগ্রামের পটিয়া, জলাদি এবং সিতাকু-ে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করা হবে। জয়েন্টভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের পরপর সিতা পাহাড়ে সিনোপ্যাক সাংহাই কাজ করতে পারবে। এছাড়াও রাশিয়ান তেল গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম দেশে প্রথম ঠিকাদার হিসেবে কূপ খনন করার সময় জানিয়েছিল তারা বাপেক্সের সঙ্গে বিদেশে কাজ করবে। এতে বাপেক্স আন্তর্জাতিক পরিম-লে কাজ করার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর বাস্তব হয়ে ধরা দেয়নি। উপরন্তু এখন বাপেক্সের নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্রেই এখন কূপ খনন করছে গ্যাজপ্রম। ওই সময় যৌথভাবে কাজ করার জন্য রাশিয়া, চীন, ভারত, মালেশিয়া এবং থাইল্যন্ডের আটটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আগ্রহপত্র চায়। এর মধ্যে ভারতের ওএনজিসি এবং চীনের সিনোপ্যাক প্রস্তাব জমা দেয়। কিন্তু ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাব অসম্পূর্ণ হওয়ায় তা বাতিল করা হয়। মালেশিয়া, থাইল্যন্ড এবং রাশিয়ান কোম্পানিগুলো জয়েন্টভেঞ্চার এগ্রিমেন্টে কাজ করতে আগ্রহ দেখায়নি।
×