ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইমারত নির্মাণ বিধিতে বাধ্যবাধকতা না থাকায় সমস্যায় রাজউক

ড্যাপ এলাকায় সব ভবনে এসটিপি স্থাপন সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৭ জুন ২০১৫

ড্যাপ এলাকায় সব ভবনে এসটিপি স্থাপন সম্ভব নয়

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানী ঢাকার ডিটেইলস এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন সকল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সরকার গত বছর ঢাকা ও এর আশপাশের সকল নদী ও পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি নতুন ও পুরনো ভবনে এসটিপি স্থাপন ও নতুন নকশা অনুমোদনে এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় এসটিপি স্থাপনের বাধ্যবাধকতা না থাকা, নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জনবল সঙ্কট ও সকল নতুন পুরাতন ভবনে এসটিপি স্থাপন বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় অবাস্তব এ সিদ্ধান্ত রাজউকের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজউকের মতে, পুরনো সকল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে বিশেষ করে ছোট আয়তনের ইমারতে এসটিপি স্থাপন করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। রাজউক সূত্র জানায়, ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় ছোট বড় প্রায় ১২ লাখ ইমারত বা ভবন রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ভবন। বাকি সাড়ে ৬ লাখ ভবন রয়েছে রাজধানীর আশপাশের এলাকায়। এর মধ্যে যেসব ভবনে এসটিপি স্থাপন করা হয়নি সেগুলোকে চিহ্নিত করে এসটিপি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা অত্যন্ত কঠিন। রাজউকের হিসাব মতে, ড্যাপ এলাকায় বর্তমান জনবল দিয়ে এসটিপি স্থাপন করতে কয়েক দশক লেগে যাবে। এছাড়া বর্তমানে নকশা অনুমোদন করতে গেলেই রাজউকের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী ও দালাল কর্তৃক গ্রাহকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। আর এসব সুযোগসন্ধানী পুরনো ভবনে এসটিপি স্থাপনের বাধ্যবাধকতা ও নতুন সকল ভবনে নকশা অনুমোদনে এসটিপি স্থাপনের শর্ত জুর্ড়ে দিলে ভবনের নকশা অনুমোদন অনেকটা কঠিন ও অসম্ভব হয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৪ জুন সচিবালয়ের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কেন্দ্রে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) রিভিউসংক্রান্ত কমিটির এক বৈঠকে ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় ইমারত নির্মাণের নকশা অনুমোদনকালে এসটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক থেকেই রাজউককে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী। বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নদী ও পরিবেশ রক্ষার জন্য এখন থেকে কোন নতুন ইমারত (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) নির্মাণ করতে হলে এসটিপি স্থাপন করা বাধ্যতামূলক। কেউ ইমারত নির্মাণ করতে চাইলে ভবনের নকশা অনুমোদনকালে এসটিপি স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এসটিপি ছাড়া ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় ইমারত নির্মাণের অনুমোদন দেবে না রাজউক। পূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, রাজধানীতে যেসব ভবন রয়েছে, সেগুলো পরিদর্শন করতে বিশেষ দল পাঠাবে রাজউক। যেসব ভবনে শুধু সেপটিক ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে কিন্তু ভবনের বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য এসটিপি স্থাপন করা হয়নি, সেসব ভবনেও এসটিপি স্থাপন করতে বাধ্য করা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু রাজউকের বর্তমান জনবল দিয়ে ও পুরনো সকল পরিকল্পনাহীন ভবন নির্মাণের সময় এসটিপি স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না রাখায় নতুন করে এ নির্দেশ কিভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এমনকি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এ এসটিপি স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না করায় নতুন নকশা অনুমোদনে রাজউকের পক্ষে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মানাও সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) হাফিজুর রহমান মুন্সী বলেন, ড্যাপ এলাকায় প্রতিটি নতুন পুরনো ভবনে এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এখন থেকে সরকারের গৃহীত সকল এ্যাপার্টমেন্ট তৈরির প্রকল্প ও প্লট প্রকল্পে বাধ্যতামূলকভাবে এসটিপি স্থাপন করা হবে। উত্তরার এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পসহ নতুন কয়েকটি প্রকল্পে এসটিপি স্থপনের নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা ছোট ছোট অর্থাৎ ৩ কাঠা পরিমাণ জমিতে তৈরি ছয় থেকে সাতটি ভবন মিলে একটি এসটিপি স্থাপন করার চিন্তা করছি। জমির পরিমাণ কম হওয়ায় এত অল্প পরিমাণ জমিতে এসটিপি স্থাপন করা কঠিন বিধায় এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঝারি আকারের প্লটের তিন থেকে চারটি ভবন মিলে একটি এসটিপি স্থাপন করা হবে। তবে বড় আকারের সকল প্লটেই এসটিপি স্থাপন করতে হবে। আর বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি সকল ভবনেই এসটিপি স্থাপন করতে হবে। জনবল সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও সরকারের এ নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। পুরনো সকল ভবনে এসটিপি স্থাপন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরনো সকল ভবনে এসটিপি স্থাপন করা অনেক কঠিন কাজ। এসব ভবন নির্মাণের সময় স্যুয়ারেজের সঠিক ব্যবস্থপনা নিয়ে তেমন কোন বিশেষ চিন্তা করা হয়নি। তবে এসব ভবনে স্যুয়ারেজ সমস্যার সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে রাজউক বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব উদ্যোগে মাঠপর্যায়ে জরিপ করছে। সকল পুরনো ভবনে এসটিপি স্থাপন করা অনেকটা অসম্ভব বটে। তবে পরিবেশ রক্ষায় আমরা পুরনো সকল ভবনের স্যুয়ারেজ সিস্টেমকে একটি নির্দিষ্ট মানদ-ে নিয়ে আসতে চাই। যাতে শহরের পরিবেশ দূষণ রক্ষা করা সম্ভব হবে। রাজউক সূত্র জানায়, রাজউকের পূর্বাচল ও ঝিলমিলি প্রকল্প দুটি অতি আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন হওয়ায় তাতে প্রতিটি ভবনের পরিবর্তে কেন্দ্রীয়ভাবে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হবে। দুটি প্রকল্পে চীন ও সিঙ্গাপুরের দুটি কোম্পানি প্লান্ট স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে। জানা গেছে, এ দুটি কোম্পানি ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে এসটিপি স্থপনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকল ভবনে এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক ঘোষণার পর রাজউক বড় বড় প্রকল্প নির্মাণে নকশা অনুমোদনকালে এসটিপি স্থাপনের জন্য ইমারত মালিক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিচ্ছে। তবে ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় এসটিপি স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এসটিপি স্থাপন করা বাধ্যতামূলক করা সম্ভব হচ্ছে না। এ নির্দেশ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে ইমারত বিধিমালা সংশোধন করে এসটিপির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে রাজউকের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনে এসটিপি স্থাপন করা অনেক কঠিন কাজ। নতুন নকশা অনুমোদনের সময় বড় আকারের ভবনের ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়ন তুলনামূলক সহজ হলেও ছোট ছোট ভবনের ক্ষেত্রে স্থান স্বল্পতায় এসটিপি স্থাপন করা কোনক্রমেই সম্ভব হবে না।
×