ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৬ জুন ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

গত সপ্তাহে শুরু। এরই মাঝে সাত দিন গত হয়েছে। আজ শুক্রবার অষ্টম রোজা। প্রতিদিনই ভোররাতে ঘুম থেকে ওঠে সেহ্রি সারছেন মুমিন মুসলমানরা। সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকছেন। সন্ধ্যায় ইফতার। খাওয়া, ঘুম, জেগে ওঠা, অফিস, স্কুল কলেজের সময়- সব এরই মাঝে বদলে গেছে। সাধারণ সময়ের তুলনায় একটু দেরি করে শুরু হচ্ছে প্রতিদিনের জীবন। অফিস স্কুল-কলেজের সময় থেকে কিছুটা কাটছাঁট হয়ে গেছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে সারতে হচ্ছে বেশি কাজ। এক ধরনের ব্যতিব্যস্ততা দৃশ্যমান হচ্ছে গোটা রাজধানীতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার তাড়া থাকায় শহরের যানজট বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। মোটামুটি সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লেগে আছে যানজট। গাড়ির চাকা যেন ঘুরতে চাচ্ছে না। প্রধান সড়কগুলো সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ ধরে আসার সময় যানজটের চেহারাটা আরও একবার দেখা হয়। যতদূর চোখ যায়, গাড়ি আর গাড়ি। তবে চাকা ঘুরছে না। রূপসী বাংলা হোটেলের মোড়ে এসে দেখা যায়, সিগন্যাল বাতির দুই পারেই অচলাবস্থা। সামনের গাড়ি এগোতে পারছে না। তাই ছাড়া যাচ্ছে না পেছনের গাড়িও। এভাবে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে যানজট। বাড়ছে ভোগান্তি। ছোট রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। সিএসজি চালিত অটোরিক্সা, রিক্সা গায়ে গা লাগিয়ে আছে। সময় এগোচ্ছে। প্রধান সড়কে ওঠার অনুমতি পাচ্ছে না। রিক্সা সিএনজি পাওয়াটাও মুশকিল। যখন পাওয়া যাচ্ছে, তখন ভাড়া দ্বিগুণ। ইফতারের সময়টা সবচেয়ে আলাদা। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় দুপুরের পর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে ইফতারের প্রস্তুতি। শহরের প্রায় সব রোস্তোরাঁ দিনে বন্ধ থাকছে। বিকেলে যারপর নাই সরগরম। প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁর সামনের অংশ ইফতারের বাহারি আইটেম দিয়ে সাজানো। বেইলি রোডের কথাই যদি বলা যায়, এখানে রাস্তার দুই ধারে বেশকিছু আধুনিক রোস্তোরাঁ। এগুলোর ভেতরে যেমন ইফতারের ব্যবস্থা আছে তেমনি বাইরে থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। ফুটপাতের বিপুল আয়োজন দেখে মনে হয়, কে এতো খাবে? অথচ ইফতারের আজান হওয়ার আগেই সব নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আলী নামের এক বিক্রেতার বলাটি এরকমÑ প্রথম কয়েকদিন ইফতার কম তৈরি করেছি। এখন চাহিদাটা মোটামুটি বোঝা হয়ে গেছে। আসলে চাহিদা অনেক। সারাদিন কাজ করেও চাহিদার সমান ইফতার আইটেম তৈরি করতে পারি না। এখন তাই যতটুকু সম্ভব ততটুকু করেই বিক্রি গুটিয়ে নিচ্ছি। ইফতার আয়োজনের ভাল-মন্দ বিচারের কাজও এখন চলছে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খাবার তৈরি করা হচ্ছে কিনাÑ খোঁজ নিচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে অভিজান চালাচ্ছেন কর্মকর্তারা। এ অভিযান থেকে বাদ যায়নি চকবাজারও। ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজারে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন বিক্রেতাতে জরিমানাও করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অভিযান চলে নীলক্ষেত এলাকায়। এদিন অষ্টব্যাঞ্জনসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁর অন্দরমহল ঘুরে দেখেন ম্যাজিস্ট্রেট।
×