ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের সান্ত¡নার জয়

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৫ জুন ২০১৫

ভারতের সান্ত¡নার জয়

মিথুন আশরাফ ॥ সুযোগ যখন এসেছিল, তখন স্বপ্নও বড় হয়ে গিয়েছিল। পর পর দুই ওয়ানডেতে ভারতকে হারানোর পর তৃতীয় ওয়ানডেতেও জয় তুলে নিয়ে ‘বাংলাওয়াশ’ করার স্বপ্ন দেখা হচ্ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে এসে ৭৭ রানে হার হলো বাংলাদেশের। ভারত যে ৩১৭ রান করল, তাতেই বাংলাদেশ চাপে পড়ে গেল। শেষ পর্যন্ত ২৪০ রান করতে পারল বাংলাদেশ। অবশেষে ভারত স্বস্তির জয় তুলে নিল। সেই সঙ্গে লজ্জার পর সম্মানটুকু অন্তত বাঁচল। ওই সম্মান নিয়ে এখন দেশে যেতে পারবে ভারত। তৃতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে ‘বাংলাওয়াশ’ করতে না পারলেও; প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় হয়েছে। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৯ রানে ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বৃষ্টি আইনে ৬ উইকেটে ভারতকে হারিয়েই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শেষে কোন বাংলাদেশী ক্রিকেটার সিরিজসেরাও হলেন। তিনি আর কেউ নন, মুস্তাফিজুর রহমান। তার ‘কাটারে’ই ডুবল ভারত। একের পর এক ‘কাটার’ দিয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সবচেয়ে বেশি ১৩ উইকেট শিকারিও এখন মুস্তাফিজ। প্রথম ওয়ানডেতে যখন ধোনিরা হারল, এর পরও তাদের শরীরী ভাষা এমন ছিল, যেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই জয় তুলে নেবে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতে তৃতীয় ওয়ানডেতেও জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজই জিতে নেবে। কিন্তু হারই হলো নিয়তি! কিছুই করতে পারলেন না ধোনি, কোহলিরা। ধোনিরা তখনই ভীষণ চাপে পড়ে গেল। হতাশাতেও ভুগছিল। চতুর্দিকে যে তাদের নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল। একেবারে খালি হাতে বাংলাদেশ থেকে ভারত যাবেন ধোনিরা, তা যেন কল্পনাই করতে পারছিলেন না। এ ভাবনা যখন হচ্ছে, তখন যে করেই হোক তৃতীয় ওয়ানডেতে জেতার তীব্র আকাক্সক্ষা ভারত ক্রিকেটারদের মধ্যে দেখা গেল। কতটা যে চাপে ছিল ভারত, তা রবীচন্দ্রন অশ্বিনের ‘যেভাবেই হোক বাংলাওয়াশ এড়ানোর চেষ্টা করব’ কথাতেই বোঝা গেছে। এরপর যখন ধোনি বলে দেন, ‘খুবই হতাশার সিরিজ গেল। তবে এখনও নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ আছে।’ শেষ পর্যন্ত নিজেদের কিছুটা প্রমাণ করতে পারলেন। বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ শেষ ম্যাচে এসে কাজে দিল। সেই সুযোগটি অবশ্য মাশরাফিই করে দিলেন। টস জিতেও আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। আগে ব্যাটিং নিলে ভারতকে হয়ত উল্টো চাপে ফেলা যেত। কিন্তু নিলেন ফিল্ডিং। জয়ের সুযোগের সন্ধানেই ছিল ধোনিরা। সেই সুযোগ যেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফিই দিয়ে দিলেন। আবার চার পেসার নিয়ে যেভাবে ভারতকে আতঙ্কে রাখা গেছে, তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে ফিটনেস সমস্যায় তাসকিন আহমেদ একাদশের বাইরে থাকায় শুরু থেকেই তা উধাও হয়ে যায়। ৩৯ রানে মুস্তাফিজই প্রথম উইকেট নিলেন। আবারও রোহিত শর্মাকেই আউট করলেন। টানা তিন ম্যাচে রোহিতকে সাজঘরে ফেরালেন মুস্তাফিজ। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট নেয়া বোলারদের মধ্যে প্রথম ৩ ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ১২ উইকেট শিকার করলেন মুস্তাফিজ। কিন্তু এরপর ভারত শুধু এগিয়েই যেতে থাকল। মাশরাফি ৩ উইকেট নিলেন। সব ফরমেট মিলিয়ে ৩০০ উইকেট শিকার করলেন। মুস্তাফিজ শেষে আরেকটি উইকেট নিয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি বোলারও হয়ে গেলেন। কিন্তু ভারতের রান বন্যা থামল না। ৪০ রানে থাকা শিখর ধাওয়ানের সহজ ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হলেন উইকেটরক্ষক লিটন দাশ। এরপর ধাওয়ান করলেন ৭৫ রান। ধোনি চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৬৯ রান উপহার দিলেন। এর সঙ্গে আম্বাতি রায়ুডু ৪৪ ও সুরেশ রায়না ৩৮ রান করলেন। তাতে ৩১৮ রানের টার্গেট যখন বাংলাদেশের ঘাড়ে পড়ল, তখনই আসলে চাপ তৈরি হয়ে গেল। এর পরও আশা ছিল বাংলাদেশ জিতবে। এর আগে যে বিশ্বকাপের মতো মহা ক্রিকেট যজ্ঞেও ৩১৯ রানের টার্গেট নিয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। ৩০০ রানের ওপরে টার্গেট নিয়ে জয়ের সংখ্যা আছে আরও দুটি। বাংলাদেশ প্রথম দুই ওয়ানডেতে যে রকম আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছে, তাতে টার্গেট যতই হোক, জয় হয়েও যেতে পারে। এমন যখন সমীকরণ, তখন সংশয়ও ছিল। এত বেশি রানের টার্গেট দাঁড় হয়ে গেছে যে তাতে না আবার বাংলাদেশ ইনিংসে দ্রুতই ধস নামা শুরু হয়ে যায়। ভারত বড় টার্গেট দেয়ার পরই যে চাপ মাথায় ঘুরতে থাকাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া এর আগে তিনবার ৩০০ রানের বেশি টার্গেট বাংলাদেশের সামনে ছুড়ে দিয়ে কখনই হারেনি ভারত। তাই তো ঘটল। এর আগে তিনবার ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলে সবটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। চতুর্থবার যখন ভারতের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নেমে সিরিজ জিতে নিয়ে হোয়াইটওয়াশের স্বপ্নে বিভোর জাতি, এ সময়ে সেই ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীই হলো। দলের ৮ রানের মধ্যে তামিম ইকবাল (৫) আউট হয়ে গেলেন। জেতার পূর্বশর্তই হচ্ছে শুরুটা ভাল করা। কিন্তু ওপেনিং জুটি তা করে দিতে পারল না। ৬২ রানে গিয়ে যখন দুর্দান্ত খেলতে থাকা সৌম্য সরকার (৪০) সাজঘরে ফিরলেন, তখনই আসলে সব আশা শেষ হয়ে গেল। তখনও লিটন, মুশফিক, সাকিব, সাব্বির, নাসিরের মতো ব্যাটসম্যানরা ছিলেন। কিন্তু এর পরও সবার মনেই উকিঝুঁকি দিতে থাকল, ম্যাচটা বোধহয় আর জেতা গেল না। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। মাঝে মাঝে জুটি গড়ার আশা তৈরি হলো। মুহূর্তেই সেই আশা আবার হতাশায় পরিণত হলো। তৃতীয় উইকেটে মুশফিক-লিটন মিলে যে ৫০ রানের জুটি গড়লেন, এরপর এমন বড় জুটি আর দেখাই গেল না। ষষ্ঠ উইকেটে সাব্বির-নাসির মিলে ৪৯ রানের জুটি উপহার দিলেন। কিন্তু তাতে কী আর ম্যাচ জেতা যায়? ম্যাচ জিততে হলে টপঅর্ডারে বড় একটি জুটি লাগে। কিংবা বড় একটি ইনিংস। সেটি হলোই না। লিটন দাশ ৩৪ রান করেই আউট হয়ে গেলেন। মুশফিক (২৪), সাকিব (২০) মিডলঅর্ডারে দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান। অথচ কী সব শট খেলে আউট হয়ে গেলেন। দেশের সেরা ক্রিকেটাররাই যদি এমন করেন, তাহলে নিচের সারিতে থাকা ব্যাটসম্যানরা কী করবেন? এর পরও সাব্বির (৪৩) ও নাসির (৩২) মিলে স্টেডিয়ামে দলকে সমর্থন দিতে আসা মুখগুলো যখন ফ্যাকাসে হতে থাকল, আবার সেই মুখগুলোতে হাসি ফোটালেন। কিন্তু ২১৬ রানেই বাংলাদেশ হারিয়ে বসল ৮ উইকেট। এরপর যেন শুধুই অপেক্ষা, কত দ্রুত শেষ হবে খেলা। কত বড় হার হবে। শেষ পর্যন্ত ৪৭ ওভারে ২৪০ রানেই অলআউট হয়ে গেল মাশরাফি বাহিনী। সেই সঙ্গে দেশের মাটিতে টানা ১০ ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের জয়রথও থামল। তাতে ভারতকে প্রথমবারের মতে ‘াবাংলাওয়াশের’ স্বপ্নও পূরণ হলো না। স্কোর ॥ ভারত ইনিংস ৩১৭/৬; ৫০ ওভার (ধাওয়ান ৭৫, ধোনি ৬৯, রায়ুডু ৪৪, রায়না ৩৮, রোহিত ২৯, কোহলি ২৫; মাশরাফি ৩/৭৬, মুস্তাফিজ ২/৫৭)। বাংলাদেশ ইনিংস ২৪০/১০; ৪৭ ওভার (সাব্বির ৪৩, সৌম্য ৪০, লিটন ৩৪, নাসির ৩২, মুশফিক ২৪, সাকিব ২০, আরাফাত ১৪*; রায়না ৩/৪৫, কুলকার্নি ২/৩৪)। ফল ॥ বাংলাদেশ ৭৭ রানে পরাজিত। ম্যাচসেরা ॥ সুরেশ রায়না (ভারত)। সিরিজসেরা ॥ মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)।
×