ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৪ জুন ২০১৫

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র মাহে রমজানের ৬ষ্ঠ দিবস। রমজান মাস হলো কোরান নাযিলের মাস। বস্তুত মাহে রমজানের মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হলো এ মাসে আল কোরান নাযিল হয়েছে। কোরান নাযিলের কারণে মাসটি যেমন চির সম্মানিত তেমনি কোরান তিলাওয়াত করার কারণে জীবনে কোরান শরীফের মর্মার্থ অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া আখিরাতে মর্যাদাবান হয়। এজন্য এ মাসের অন্যতম প্রধান ইবাদত এ পবিত্র গ্রন্থের তিলাওয়াত ও মর্ম অনুধাবন। মহাগ্রন্থ আল-কোরানুল কারীম মানব জাতির জন্য মহান স্রষ্টা আল্লাহপাকের পক্ষ হতে সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ হিদায়াত বা দিক নির্দেশনামূলক গ্রন্থ। এটি গোটা মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক। এখানে শিক্ষা ও সভ্যতা অর্জনের সব উপাদান ও সূত্র নিহিত রয়েছে। এককালে এটিকে মর্যাদা দান, তিলাওয়াত ও অধ্যায়নের মাধ্যমে মুসলিম জাতির সমৃদ্ধময় গৌরবদীপ্ত উত্থান ঘটেছে। এর আগে আল্লাহতায়ালা মানব জাতির জন্য যে সব আসমানী গ্রন্থ প্রেরণ করেছিলেন, তা কেবল সমসাময়িক ও স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য। সূরা আলে ইমরানের ২৩নং আয়াতে বলা হয়েছে: ওহে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি কি তাদের দেখেননি? যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহ্বান করা হয়েছিল, যাতে তাদের মধ্যে নানা বিষয়াবলী নিয়ে মীমাংসা করা যায়। অতপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ‘অর্থাৎ পূর্ববর্তী জাতিগুলোর জন্য ছিল কিতাবের অংশ বিশেষ; যা দিয়ে তারা বিচার আচার সম্পন্ন করত। পক্ষান্তরে কোরানুল কারীমের ভূমিকা ও প্রভাব সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে বলা হয়েছে: এ সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। (এটি) পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য...।’ উদ্ধৃত অংশে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কোরান শরীফ তাদেরকেই সঠিক পথ দেখাবে, যারা সঠিক পথ পাওয়ার জন্য আগ্রহী ও উদগ্রীব থাকে, হিদায়াতের মন-মানসিকতা নিয়ে এ পবিত্র গ্রন্থ তিলাওয়াত করে। যারা পুতঃপবিত্র মন প্রাণ নিয়ে এটি অধ্যয়ন ও তিলাওয়াত করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তারা অবশ্য সৌভাগ্যময় জীবনের অধিকারী হবে। এ কোরানকে বলা হয়েছে শিফাউন লিন-নাস মানব জাতির জন্য নিরাময় বস্তু। আল্লাহতায়ালা বলেন : এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা ধারা, আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশাবলী।’-(৩:১৩৮)। কোরানুল কারীম মানুষকে ন্যায় বিচারে উৎসাহিত করে, হালাল-হারাম চেনার পথ দেখায়, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি দূূরীভূত করে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপহার দেয়। সূরা আলে ইমরানে আল্লাহপাক এক দীর্ঘ আয়াতে মুসলমানদের তার করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন : আর তোমরা সকলে আল্লাহর রুজ্জুুকে সুদৃঢ় হাতে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তার অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছো। তোমরা অবস্থান করেছিলে এক অগ্নিকু-ের পাড়ে। অতপর তা থেকে তিনি তোমাদের মুক্তি দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হতে পার।’-(আয়াত নং-১০৩)। পবিত্র কোরান সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রাচীনতম উৎস-সূত্র। এখানে শুধু নামাজ কালামের কথা বলা হয়নি, সৃষ্টি রহস্য ও বিশ্ব ইতিহাসের বহু তত্ত্ব ও তথ্যে সমৃদ্ধ এ মহাগ্রন্থ। এইত মাত্র সাড়ে চার দশক আগে (১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দের ২০ জুলাই) মানুষ প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে। এ ঐতিহাসিক দিনে নেইল আমস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স, অলড্্িরন প্রমুখ সৌভাগ্যবান মানব সন্তানগণ চাঁদের দেশে মানব জাতির পদচিহ্ন আঁকেন। যে সময়, যে যুগে তারা এ মহা বিজয়ের সুসংবাদ বয়ে এনেছেন তখনও মানুষের এক বিরাট অংশ তা সহজে মেনে নিতে পারেনি। বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি। তাদের বিশ্বাস হলো, মানুষের পক্ষে আকাশ জয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু আজ ধীরে ধীরে তাদের সে বিশ্বাস ভাঙছে, তারা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর কারিশমা বলে ক্রমেই অনুধাবন করতে ও প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হচ্ছে। অথচ এর দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম ও তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং মহাগ্রন্থ আল-কোরান বিজ্ঞানের জয়-যাত্রা ঘোষণা করেছে। বিজ্ঞানময় পবিত্র কোরানুল হাকীম বিজ্ঞানপূর্ণ ও বিজ্ঞান নির্ভর বহু আয়াত বর্ণনা করেছে। আকাশ পথে বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ ও চন্দ্রপৃষ্ঠের অবস্থা ও অবস্থান ইনডিকেট করেছে প্রাজ্ঞ ভাষায়। এর জন্য বিস্তারিত দেখুন, সূরা ইয়াসিন ও সূরা নাযমের তাফসীর। আমাদের প্রিয় নবী হযরত রাসূলে মাকবুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বয়ং পবিত্র মি’রাজ গমন করে মানব জাতির আকাশ জয়ের বিষ্ময়কর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেন। আসুন, মাহে রমজানের ইবাদতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে কোরানের শিক্ষা ও বরকতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠি।
×