ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের পর ভারত

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৪ জুন ২০১৫

পাকিস্তানের পর ভারত

শাবাশ বাংলাদেশ। সীমিত ওভারের ম্যাচে এই উপমহাদেশ তথা ক্রিকেটবিশ্বেরই দুই সুপার পাওয়ার পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে দুনিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হলো বর্তমানে ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তির নাম বাংলাদেশ। এ এক অনন্য অর্জন। এক অভূতপূর্ব বিজয়। এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস! ভারতের সঙ্গে এমন একটি খেলা দেখতে হবে এটা বোধহয় কল্পনারও অতীত ছিল দেশবাসীর। এজন্য আনন্দের কোন ঘাটতি পড়েনি। সফরকারী ভারতীয় ক্রিকেট টিমের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৩০০ রানের সীমানা অতিক্রম করে। ওয়ানডে ম্যাচে রানের এই সীমানাকে সমীহের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। ব্যাটিং শক্তিতে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দল প্রমাণ করল তাদের আধিপত্য। দ্বিতীয় ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পায় ভারতীয় দল। ২০০ রানে তাদের বেঁধে ফেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দল বোলিংয়েও প্রমাণ করল তাদের উচ্চতা ও শক্তিমত্তা। এখানে নবাগত বিস্ময় মুস্তাফিজের কথা অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে। মূলত বোলিংয়ে তার নতুন কৌশল ও বৈচিত্র্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের হতবিহ্বল করে দেয়। দুই ম্যাচ মিলিয়ে মুস্তাফিজ উইকেট শিকার করেছেন এগারোটি। এর ফলে বিশ্বরেকর্ডের মতো বিশাল কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছে তার। মাত্র উনিশ বছর বয়সী এই তরুণ দেশের কোটি মানুষকে আনন্দ আর তৃপ্তি দিয়েছে। এর তুলনা মেলা ভার। এই অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের বড় দুটি উপকার হয়েছে। এক, এই সুবাদে র‌্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ, উঠে এসেছে সাতে। দুই, ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সরাসরি খেলা নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। ফিল্ডিং-বোলিং-ব্যাটিং; প্রতিটি অঙ্গনে বাংলাদেশ দল ক্রিকেটীয় বুদ্ধি ও ক্ষমতার পরিচয় রেখেছে পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশেরই বিপক্ষে। ভারতের বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের দ্বিতীয় ম্যাচটিতেও প্রথম ম্যাচটির মতো জয়ের পেছনে টিমওয়ার্ক কাজ করেছে। অধিনায়ক মাশরাফিকে আলাদাভাবে সাধুবাদ জানাতে হবে। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘ছেলেরা এখন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছে। শট খেলতে ভয় পাচ্ছে না। বল করতে ভয় পাচ্ছে না। এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ নতুন প্রতিভার সংযুক্তি যে ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে তার প্রমাণও এই ম্যাচ। মুস্তাফিজের সাফল্য খেলোয়াড় নির্বাচকদের সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেÑ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিভা অন্বেষণ করে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের তৈরি করার বিকল্প নেই। এখনও আমাদের ক্রিকেট দল টেস্ট ম্যাচে পুরোপুরি আস্থা ও শক্তির সঙ্গে খেলতে পারছে না। যদিও আগামীতে তাও অসম্ভব নয়। এজন্য এখনই সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক এনে টেস্ট ম্যাচের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করতে হবে। দেশের মানুষ এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। মানুষ চায় পাকিস্তানের মতো ভারতকেও হোয়াইটওয়াশ করুক বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসে আঘাত খাওয়া, হতাশায় ডুবে যাওয়া ভারতকে পরবর্তী ম্যাচে হারানো মোটেই অসম্ভব নয়। আর এটি সম্ভব হলে আমরা আবেগ-উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে গর্বের সঙ্গে বলতে পারবÑ বাংলার মাটিতে এবার টাইগাররা হোয়াইটওয়াশের কোটাও পূর্ণ করল। শাবাশ বাংলাদেশ!
×