ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোণঠাসা ভারতের বিরুদ্ধে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে জিততে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা

এবার বাংলাওয়াশের পালা

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২৩ জুন ২০১৫

এবার বাংলাওয়াশের পালা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ‘সময় বড় বে-রহম হয়’ একটি পুরনো বাংলা সিনেমার খলনায়কের ডায়লগ। সময়ের স্রোতে অনেক ছকই পাল্টে যায়, বে-রহমের মতো আচরণ করে। মাত্র তিন মাস আগে পর্যন্ত যা কল্পনাও করা যায়নি সেটাই এবার যেন সূর্য্যরে মতো শাশ্বত ও সত্য হয়ে জ্বলজ্বল করছে। পাকিস্তান কিংবা ভারত কোন ক্রিকেট দলের বিপক্ষেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ দল। বরং যে কোন ম্যাচে নামার আগেই বলে দেয়া যেত বাংলাদেশ দল হারবে এবং হিসেব-নিকেশ চলত ব্যবধানটা কত হবে। এপ্রিল থেকে সবকিছুই নতুন করে ঘটতে শুরু করল। দাবার ছক উল্টো দিক থেকে শুরু হলো। লক্ষ্য আগামী মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও ভারতের বিপক্ষে চলমান সিরিজের ৬ ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যাচ জেতার। সেটা এ সিরিজেই হয়ে গেছে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের অন্তত আট নম্বরে থাকা নিশ্চিত। এই মুহূর্তে যদিও বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩ রেটিং নিয়ে সাতে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত হয়ে গেছে এ দুটি জয়ের পর। এখন ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ কাজে লাগানো বাকি। প্রথমে ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে ঘরের মাঠে ধবলধোলাই দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাস পেরিয়ে যেতেই এবার আরেক ক্রিকেট পরাশক্তিও টাইগারদের কাছে পদানত, মাথা নিচু করেছে অসহায় আত্মসমর্পণে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে সুরেশ রায়নার বলা কথাটা হাস্যকর আর বিদঘুটে হয়ে বাতাসে ভাসছে। তিনি বলেছিলেন, ‘ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে আমরা হোয়াইটওয়াশ করতে চাই।’ সেই ভাগ্য বরণের খুব কাছাকাছি এখন দাঁড়িয়ে ভারতীয় দল। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। যা দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ বিজয়। এবার আরও একটি বড় লজ্জা ‘হোয়াইটওয়াশ’ হওয়ার শঙ্কা নিয়ে জবুথবু কোণঠাসা ভারতীয় দল। সিরিজের সব ম্যাচ জয়কে বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষ নাম দিয়েছে ‘বাংলাওয়াশ’। এবার ভারতীয় দলকে সেটা করার জন্য টাইগারদের জিততে হবে বুধবার অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় ওয়ানডে। ঘরের মাঠে এর আগে কেনিয়া, জিম্বাবুইয়ে, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ দল। আর দেশের বাইরে কেনিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। এর মধ্যে কেনিয়া, জিম্বাবুইয়ে ও নিউজিল্যান্ডকে দুইবার করে এবং স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানকে একবার করে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ দল। সবমিলিয়ে প্রতিপক্ষকে এখন পর্যন্ত ১০ বার ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরব দেখিয়েছে। ২০০৫-০৬ মৌসুমে সর্বপ্রথম সফরকারী কেনিয়া ক্রিকেট দলকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে সেই যাত্রা শুরু করেছিল টাইগাররা। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা লাভের পর প্রথম ৮ বছরে মাত্র ৫ হোয়াইটওয়াশ করার গৌরব দেখায় বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে একমাত্র টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে জিম্বাবুইয়েকে ২০০৬-০৭ মৌসুমে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলেও সে সময় স্বেচ্ছায় টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছিল তারা। তবে ২০০৯ থেকে সবকিছু পাল্টে যেতে শুরু করল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম কোন টেস্ট খেলুড়ে বড় দলকে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে ফিরেছিল বাংলাদেশ দল। তখন থেকে গত ৬ বছরে ইতোমধ্যেই সবমিলিয়ে পাঁচবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরব দেখিয়েছে। আর ২০১৩ সালে সফরকারী নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার পর থেকেই তা ‘বাংলাওয়াশ’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়ে যায়। এরপর ঘরের মাঠে দুর্দম টাইগারদের কাছে এ লজ্জা বরণ করেছে একে একে জিম্বাবুইয়ে ও পাকিস্তান। এবার বিশ্ব ক্রিকেটের র‌্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে দুই নম্বরে থাকা ভারতীয় দল একই ভাগ্য বরণের সামনে দাঁড়িয়ে। প্রথম দুই ওয়ানডেতে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একেবারেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি সফরকারী ভারত। বরং ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেক আগেই আশি ভাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে জিতছে বাংলাদেশ। এই ঘটনার এতদিন উল্টোটাই দেখা গেছে। বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচে নামার আগেই বাংলাদেশ দল হিসেব করত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সম্মানজনক পরাজয়ের। ম্যাচ শুরুর পর শেষ হয়ে যাওয়ার অনেক আগেই নিশ্চিত হয়ে যেত পরাজয়, অপেক্ষা থাকত ব্যবধান জানার। এবার সেই পরিস্থিতি দেখা গেছে ১৯৮৩ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের মধ্যে। অথচ ভারত এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখনই এমন ভাল অবস্থানে ছিল না বাংলাদেশ দল। গত এপ্রিলে সফরকারী পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার পর সবকিছুই নতুন করে শুরু হয়েছে। অথচ এর আগে তাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে একমাত্র জয়টি ছাড়া কিছুই ছিল না। এখন বড় দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৫ ম্যাচে ৪ জয়, ৩১ পরাজয় এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫ ম্যাচে ৮ জয় ও ১৭ পরাজয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৮ ম্যাচে ৭ জয় ও ১৯ পরাজয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৮ ম্যাচে ৪ জয় ও ৩৩ পরাজয় এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ ম্যাচে ৩ জয় ও ১৩ পরাজয়। ভারতের বিপক্ষে প্রথমেই দুই ম্যাচ জিতে তাদের বিপক্ষেও পরিসংখ্যানটা সমৃদ্ধ করে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। এখন ভারতের বিপক্ষে ৩১ ম্যাচে ৫ জয় ও ২৫ পরাজয় টাইগারদের। তবে অনেক বড় গৌরব হিসেবে এবার ভারতীয় দলকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ বাংলাদেশ দলের। তরুণ উদীয়মান পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট শিকার করে ওয়ানডের ইতিহাস নতুন করে রচনা করেছেন। মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন তিনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য। বুধবার তৃতীয় ওয়ানডেতেও তার দিকে নজর থাকবে। ব্যাটিংয়েও দারুণ ফর্মে আছেন সবাই। খুব বড় ইনিংস কেউ উপহার না দিতে পারলেও সবাই আছেন রানের মধ্যে। আর ‘টিম বাংলাদেশ’ এখন মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে মুখিয়ে আছে আরেকটি ম্যাচ জিতে ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার অপেক্ষায়।
×