ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বার্লিন প্যারিস ও রোমে হাজার হাজার লোকের সংহতি প্রকাশ

অভিবাসীদের পক্ষে মিছিল

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২২ জুন ২০১৫

অভিবাসীদের পক্ষে মিছিল

ইউরোপে আশ্রয় চাচ্ছে এমন অভিবাসীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে শনিবার ইউরোপের কয়েকটি শহরে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে আসে। তারা ভারাক্রান্ত গ্রীসে কৃচ্ছ্র নীতি গ্রহণেরও বিরোধিতা করে। অন্যদিকে সেøাভাকিয়ায় অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। খবর এএফপির। বার্লিনে বিশ্ব শরণার্থী দিবসে জার্মানির সরকারবিরোধী দল ডাই লিংক (বামপন্থী) গ্রুয়েনেন (গ্রান) আহূত প্রতিবাদ মিছিলে হাজার হাজার লোক যোগ দেয়। পুলিশ তাদের সংখ্যা ৩ হাজার ৭শ’ এবং সংগঠকরা ১০ হাজার বলে জানান। জার্মান রাজধানীতে প্রতিবাদীরা সেøাগান দেয়Ñ ‘সীমান্ত মানি না, জাতি মানি না, বহিষ্কার করা চলনে না; জোরে বলুন, স্পষ্টভাবে বলুন, শরণার্থীদের এখানে স্বাগতম।’ কোন কোন প্রতিবাদী গ্রীক পতাকা ও এথেন্সের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সেøাগান লেখা পোস্টার বহন করে। যখন গ্রীসের ঋণ সঙ্কট নিয়ে আসন্ন আলোচনায় ৩০ জনের মধ্যে অবশ্যই কোন চুক্তিতে পৌঁছতে হবে, তখন দেশটির প্রতি ওই সমর্থন জানানো হলো। গ্রীসের বিশাল বেইল-আউট তহবিলের সর্বশেষ কিস্তি ছাড় করানোর জন্য এর আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের সঙ্গে কোন চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে দেশটি ঋণখেলাপী হতে পারে বলে ঝুঁকি রয়েছে এবং সম্ভবত ইউরোজোন ত্যাগেও বাধ্য হবে। এক বিক্ষোভকারীর হাতে থাকা একটি পোস্টারে লেখা ছিল জার্মানির নেতৃত্বাধীন টেকনোক্র্যাট শাসিত, আন্তরিকতা শূন্য ও নব্য-উদ্ধারতাবাদী ইউরোপ অসহনীয়। অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানি ঋণ সঙ্কটের ক্ষেত্রে আপোসহীন অবস্থান নিচ্ছে বলে কৃচ্ছ্র নীতিবিরোধী কর্মীরা মনে করেন। এ সঙ্কট ইউরোপের কয়েকটি দেশকে ঘিরে ধরেছে। প্যারিসে পুলিশ জানায়, কাগজপত্রহীন অভিবাসীসহ ৩ হাজার ৫শ’ প্রতিবাদী একটি ব্যানারের পিছনে সমবেত হয়। এতে লেখা ছিল ‘গ্রীস, ফ্রান্স, ইউরোপ : কৃচ্ছ্রনীতি ঘাতক, গণতন্ত্র মৃত্যুবরণ করছে, আসুন আমরা প্রতিহত করি!’ ফ্রান্সের অন্যত্র শত শত লোক দক্ষিণাঞ্চলীয় মার্সেই ও কালাইস শহরে সমবেত হয়। উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর কালাইসকে অভিবাসীরা ব্রিটেনে পৌঁছার জন্য এক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কর্মীরা ফ্রান্স আশ্রয় না দেয়ায় ইতালিতে আটকে পড়া শত শত অভিবাসীর প্রতি সংহতি জানাতে ইতালীয় সীমান্তসংলগ্ন মেন্টন শহরে সমবেত হয়। রোমেও বহু লোক বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমবেত হয় এবং ‘গণহত্যা এখনই বন্ধ কর’ বলে সেøাগান দেয়। তারা ভাঙ্গাচোরা, জনাকীর্ণ নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিজেদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এমন অভিবাসীদের প্রতি সংহতি জানায়। ৬৬ বছর বয়সী লুসিয়ানো কলেতো বলেন, ‘আমরা ইউরোপকে বাঁচাতে এখানে এসেছি। অভিবাসী, শরণার্থী ও গ্রীস সবাই ইউরোপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কেবল জার্মানরা ও ব্যাংকগুলোই ইউরোপের মধ্যে পড়ে না, ইউরোপ সবারই।’ অন্যান্য প্রতিবাদীর সঙ্গে তিনি কলোসিয়ামের সামনে দাঁড়ান। কিন্তু সেøাভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিসøাভায় এক সমাবেশে কয়েক হাজার লোক অভিবাসন ও ইইউর প্রস্তাবিত অভিবাসী কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। স্টপ দ্য ইসলামাইজেশন অব ইউরোপ নামের একটি গ্রুপ ওই সমাবেশের আয়োজন করে। এরপর অন্তত ১৪০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ‘বহুকৃষ্টিবাদ গণহত্যারই শামিল’ সেøাগান লেখা এক ব্যানার তুলে ধরে কোন কোন প্রতিবাদী ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক পতাকা ছিঁড়ে ফেলে এবং পুলিশের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পরে ট্রেন স্টেশনে অজ্ঞাতনামা হামলাকারীরা এক আরব পরিবারকে লক্ষ্য করে বোতল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সমাবেশের পর প্রতিবাদীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয় এবং ১৪০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সংঘর্ষে পুলিশের ছয়টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে সে দেশের এক বার্তা সংস্থা এ কথা জানায়। প্রায় এক লাখ অভিবাসী চলতি বছর এ সময় অবধি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। তাদের অধিকাংশই ইতালি, গ্রীস ও মাল্টায় আশ্রয় নেয়। এ তিনটি দেশ চায়, ইইউ ও অন্যান্য দেশও শরণার্থীদের দায়িত্ব ভাগ করে নিক। এ সমুদ্রযাত্রার চেষ্টায় অন্তত ১ হাজার ৮শ’ লোক ডুবে মারা যায়।
×