ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নবীন বর্ষায় ফুটেছে চালতা ফুল

চালতা ফুল কী আর ভিজিবে না শিশিরের জলে...

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২২ জুন ২০১৫

চালতা ফুল কী আর ভিজিবে না শিশিরের জলে...

মোরসালিন মিজান আমি চ’লে যাব ব’লে/চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে...। জীবনানন্দ লিখেছিলেন। না, কবি বেঁচে নেই আর। তবে তাঁর প্রিয় চালতা ফুল আছে। এই বৃষ্টির দিনে, নবীন বর্ষায় প্রকৃতির হাসি হয়ে ফুটেছে যেন। ফুল যেমন, পাতাও সুন্দর। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। গাছটি গ্রামে খুব দেখা যায়। আছে রাজধানী শহরেও। একটু অবশ্য খুঁজে নিতে হয়। আর তখন মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। কয়েক দিন আগে সার্কিট হাউস সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ থামতে হলো। প্রেস ইনস্টিটিউটের সীমানা প্রাচীর টপকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে চালতার লম্বা সবুজ পাতা। মাথার বেশ উপরে। তবু সৌন্দর্যটা দৃশ্যমান। আয়তাকৃতি পাতার খাঁজ কাটা আউটলাইন। করাতের দাঁদের মতো দেখতে। ভয়ঙ্কর নয় মোটেও। মনে হয়, কেউ কাঁচি দিয়ে কেটে চমৎকার নক্সা করে দিয়েছে। পাতার শিরা উঁচু সমান্তরাল। গাছের ঘন পাতার আড়ালে চোখজুড়ানো সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে আছে চালতা ফুল। সাদা পাঁচটি পাঁপড়ি। বেশ মোটা ও মাংসল। গোলাকৃতি ফুলের পরাগকেশর অসংখ্য। সব মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন। এ কারণে শহরের কোন কোন উদ্যানে যতœ করে লাগানো হয় গাছটি। তবে চালতা মূলত বেঁচে আছে গ্রামেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে খোঁজ করলে গাছটির দেখা মিলবে। বাড়ির পেছনে ঝোঁপ-জঙ্গল ধরনের জায়গায় অযতেœ বেড়ে উঠে। চেনাজানা গাছের সৌন্দর্য হয়ত খুঁটিয়ে কেউ দেখে না। তবে মেয়েরা সবুজ বৃতি আলাদা করে তাতে লবণ মিশিয়ে খায়। এই টক স্বাদের সঙ্গে শহুরেরাও অল্পবিস্তর পরিচিত বটে। ভীষণ পরিচিত চালতা বাংলাদেশে বহুকাল ধরে আছে। এর আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু দেশে হয়। বিশেষত এটি ভারতবর্ষীয় উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। এ কারণেই বৈজ্ঞানিক নাম ডিলেনিয়া ইন্ডিকা। ইন্ডিকা শব্দটি ইন্ডিয়া থেকে নেয়া। আর ডিলেনিয়া নামটি নেয়া হয়েছে অক্সফোর্ডের বিখ্যাত তরুবিদ জে. জে. ডিলেনিয়াসের নাম থেকে। চালতার ইংরেজী নাম এলিফ্যান্ট আপেল। বাংলাদেশে চালতাকে ‘চালিতা’ ‘চাইলতে’ ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, মধ্যমাকৃতি চিরহরিৎ বৃক্ষ চালতা। উচ্চতায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। শাখা-প্রশাখা এলোমেলো। বাকল লালচে মসৃণ। গাছের আয়ু মোটামুটি ২৫ থেকে ৩০ বছর। পাতা ৮ থেকে ১৪ ইঞ্চি দীর্ঘ হয়। বছরের মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল ফুটে। ফুলের ব্যাস হয় ১৫ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার। বৃতির সবুজ, দলের শুভ্রতা, পরাগের হলুদ ও তারকাবৃতি গর্ভমু-Ñ সব মিলিয়ে চালতা ফুলের গড়ন অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ঘ্রাণও বেশ মিষ্টি হয়। চালতার ফল পাকে শরত হেমন্তে। ফুলের বৃতিই এক সময় ফলে রূপান্তরিত হয়। শীতকাল পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। চালতার ফল হয় টক মিষ্টি। আচার, চাটনি, টক ডাল রান্নায় ব্যবহৃত হয়। পাকা ফল পিষে নিয়ে লবণ কাচামরিচ দিয়ে মেখে খাওয়া যায়। চালতার শাঁশ নানা খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। জেলি ও শরবত তৈরির হয় চালতা ফল থেকে। গাছটি থেকে শক্ত কাঠ হয়। নৌকা তৈরিতে ব্যবহার কর হয় এ কাঠ। ব্যবহৃত হয় বন্দুকের বাঁট তৈরিতেও। চালতা গাছ আপনি বেঁচে থাকে। বড় হয়। গাছে পাকা ফল বেশি দিন থাকলে তা এক সময় ঝরে পড়ে। সেই বীজ থেকে গাছের নিচে আরও গাছ জন্ম নেয়। কিন্তু এত সহজে যে গাছ হয়, সেটিও এখন কম দেখা যায়। দিন দিন কমছে। এ পর্যায়ে প্রিয় তরুটির প্রতি সকলের মনোযোগী হওয়া উচিত। তবেই ফুটবে চালতার ফুল। ভিজবে শিশিরের জলে।
×