ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পালিত হলো বাবা দিবস

পরম নির্ভরতা আর বন্ধুত্ব মেশানো একমাত্র হাত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২২ জুন ২০১৫

পরম নির্ভরতা আর বন্ধুত্ব মেশানো একমাত্র হাত

শর্মী চক্রবর্তী/এমদাদুল হক তুহিন ॥ ‘বুঝতে শেখার পর থেকেই যত আবদার, যত বন্ধুত্ব, যত আড্ডা সবই ছিল বাবার সঙ্গে। শিক্ষক, বন্ধু, পথ প্রদর্শক, গুরু, যাই বলি না কেন, ওই বাবা। মাঠে খেলা দেখতে নিয়ে যাওয়া অথবা সাইকেলে করে বেড়াতে যাওয়া, পাঁচ তারকা হোটেলে ছুরি কাঁটা দিয়ে খাওয়া, বা ফুটপাথের কোন দোকানে বসে টিনের থালায় জলখাবার খাওয়া, সবই শেখা বাবার কাছ থেকে।’- বাবা দিবসে এক বাবা এভাবেই তাঁর মনের কথাগুলো প্রকাশ করলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাবাকে হারিয়ে বাবাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এমন অসংখ্য অভিব্যক্তি ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতায়। বাবারা যেমন স্মরণ করেছেন তাঁদের বাবাদের, ঠিক তেমনি তাঁরই সন্তান তাঁর অজান্তে স্মরণ করেছে তাঁকে। বাবা এমন এক ব্যক্তি যাকে ভালবাসতে বিশেষ কোন দিন লাগে না প্রতিদিনই বাবা দিবস পালন করা যায়। তবু শহুরে এই যান্ত্রিকতায় ঘটা করেই স্মরণ করারও বিশেষ মহত্ত্ব আছে বৈকি। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের ৫২টি দেশের মতো বাংলাদেশেও বাবা দিবস পালিত হয়। ধারণা করা হয়ে থাকে, সর্বপ্রথম ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই দিবসটি পালিত হয়। আর তা আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় পালন করা হয়। আরেকটি তথ্য থেকে জানা যায়, সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথা থেকেই বাবা দিবস পালনের ধারণা আসে। তবে প্রচলিত আছে যে; বিশ্বে মা দিবস পালনে যতটা উৎসাহ দেখানো হয় বাবা দিবস পালনে সে তুলনায় ঢের অনীহা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের সন্তানেরা বাবা দিবস পালনে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার ছিল সরগরম। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের বাসিন্দাদের অনুভূতিতে তা স্পষ্ট। তরুণ বয়সে ছেলেমেয়েরা অনেক দস্যি হয়, হয় বাউ-ুলেও। তবে সময় শেষে প্রতিটি সন্তানই বুঝতে পারে বাবার সকল কথাই মেনে চলা উচিত ছিল, আর পূর্ণ যুবক বয়সে এসে বাবা দিবসে বাবার কাছে স্যরি বলেও ফেসবুকে অনেককে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেল। সাংবাদিক ইশতিয়াক আহমেদ তাদের একজন। তিনি লিখেছেন, ‘বাবার হয়ত ধারণা ছিল, ছেলে একদিন ঠিক হয়ে যাবে। তাই হতো বলার প্রয়োজন মনে করেননি কোনদিন। বাবা, তোমার সকল নিশ্চুপ অভিব্যক্তির দায় মাথায় নিয়ে শুধু বলতে চাই, স্যরি। তোমাকে স্রষ্টা কিছুই দিল না। তবে আমাকে ঠকায়নি, তোমার মতো একটা বাবা দিয়েছে।’ বাবাকে নিয়ে এমন উচ্ছ্বাস প্রতিটি সন্তানের, বাবা বহু সন্তানের কাছে ঈশ্বরতুল্য। অন্যদিকে এক বাউ-ুলে তরুণ লিখেছেন, ‘বাবার মূল আদর্শ সততা, সরলতা। সহজ-সরল মানুষের প্রতিটি ফ্রেমে বাবাকে আটকানো যায়। গ্রামের বেশ কিছু মানুষ এ কারণে বাবাকেও শ্রদ্ধাও দেখায়। তবে আমি জানি সরলতা কারও পছন্দের নয়। বর্তমানে আমিও তা অপছন্দ করতে শিখছি। কিন্তু জেনেটিক কারণে তা হয়ে ওঠা হয়নি। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালবাসা, যার কোন তুলনা হয় না। বর্তমান সময় অবধি কোন কারণে আমি বাবা-মার অবাধ্য হয়নি।’ তবে অবাধ্য না হতে চাইলেও সন্তানকে কখনও কখনও বাধ্য হয়েই অবাধ্য হতে হয়, বহু তরুণের ইচ্ছে বাবার যেন বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, দিবসটি নিয়ে বাবার বয়সী বাবারাও অনুভূতি জানাতে ভুল করেননি। বাবা না হয়ে বাবার মর্যাদা উপলব্ধি করতে না পারা প্রচলিত প্রবাদের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ লিখেছেন, ‘বাবা হয়ে কেউ জন্মায় না। বাবা হয়ে উঠতে হয়। বাবাগিরি শিখে নিতে হয় জীবনের পাঠ থেকে।’ বাবা হওয়া চরম এক ভাগ্যের ব্যাপার, বাবা যেন দৃশ্যমান এক ঈশ্বর। কঠিন শব্দেও বাবাকে নিয়ে কম লেখা হয়নি, উপাখ্যানেও পূর্ণ আছেন বাবারা। লিকায়ত বখতিয়ার লিখেছেন, ‘জন্মের আগে জন্মে দেখি আমার কোন পিতা নেই। পিতৃহীন জীবনযাপন খুব স্বাভাবিক অনেক সহজ-সরল জীবন প্রণালী।’ সঙ্গত কারণে বাবারা সন্তানকে একটা নিয়মের মধ্যে রাখতে চায়, রুটিন সঙ্গত জীবনে তাদের খুব আগ্রহ। নিয়মানুবর্তিতায় অভ্যস্ত করতে বাবা’দের যত শাসন, অন্য কোন বিষয়ে ততটা নয়। বাবারা অধিকাংশ সময় সহজ ও সরল হয়ে থাকেন, সন্তানেরা সেই সহজ সরলতা বাবার কাছ থেকে রপ্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহু ফেসবুকারের অনুভূতিতেও তা স্পষ্ট। চিত্রশিল্পী চারু পিন্টু তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে নিয়ে লিখেছেন, ‘বাবার সঙ্গে আজ অবধি আমার কোন ছবি তোলা নেই। তার দম্ভ এর কাছে এখনও বিড়াল হয়ে থাকি। বাবা দিবসে তাঁকে শুভেচ্ছা হয়ত কখনও জানানো হবে না। কারণ বাবা প্রতিদিন প্রতিসময়ের জন্যই বীর হয়ে থাকবে।’ বাবার সঙ্গে অনেকেরই তেমন করে ছবি তোলা হয় না, বিশেষত গ্রামের ছেলেদের। তবে শহুরে ছেলেরা এদিক দিয়ে এগিয়ে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের পিতারাই প্রকৃত বন্ধু। আবার বাবার কাছে সন্তানও বন্ধু হয়ে ওঠেন। বাবা যদি বন্ধু হয়ে ওঠেন সন্তানের হৃদয়ে কখনও কষ্ট থাকে না। বহু সন্তান শান্তির এ নেশায় উদগ্রীব থাকে, তবে সবার ভাগ্যে সব আসে না। বাবা মানে একটু শাসন, অনেক ভালবাসা। বাবা মানে একটু কঠিন, মাথার ওপর ছায়া। বাবা মানে সকল চাওয়া। বাবা মানে কাছের বন্ধু, বন্ধু দুঃসময়ের ধ্বজা। বাবা দিবসে প্রতিটি সন্তান শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করেছেন নিজ নিজ বাবাকে। সব মিলিয়ে দিবসটিতে অন্য রকম এক আবেগ ও শ্রদ্ধা বিরাজ করছিল সর্বত্র।
×