ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা পাচ্ছেন ৯০ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ জুন ২০১৫

কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা পাচ্ছেন ৯০ লাখ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জনবল বেড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পে। দেশের বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকে ৮২৮টি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) শূন্য পদে নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের আগামী ২৫ জুনের মধ্যে নিজ জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কাজে যোগদান করার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক। এর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত সিএইচসিপির সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৩ হাজার। আর প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৮৭৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণকাজ অন্তর্ভুক্ত আছে। তার মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৯৭১টির। অচিরেই নির্মাণ সম্পন্ন হবে ২৬৭টি ক্লিনিকের। তুরস্ক সরকারের অর্থায়নে নির্মাণাধীন রয়েছে ১০টি ক্লিনিক। টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে ৫০টির। প্রকল্প কর্তৃক অনুমোদিত এবং টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ৫০টি ক্লিনিকের। আর অবশিষ্ট ৪২৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের জন্য জমি সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ডাঃ মাখদুমা নার্গিস শুক্রবার জনকণ্ঠকে জানান, ইতোমধ্যেই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের নিয়োগপত্র ডাকযোগে তাদের স্থায়ী ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, শূন্যপদের মোট সংখ্যা সাড়ে আটশ’র মতো হলেও সংরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না হওয়ায় আনুমানিক শতাধিক পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রকল্প না হয়ে রাজস্ব খাতে হলে শূন্য কোটা পূরণ হতো বলে তিনি জানান। কমিউনিটি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল সিএইচসিপি পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাড়ে আটশ’ পদের বিপরীতে প্রায় ২০ হাজার প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। মোট শূন্যপদের সংখ্যার বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য পাঁচগুণ প্রার্থী নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে ১৬ মে থেকে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষে ১৮ জুন চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরিচালক ডাঃ মাখদুমা নার্গিস আরও জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাগ্রহীতা ও সেবার মান বেড়েই চলেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রকল্প। ক্লিনিকের সুফল ভোগ করছে দেশের সাধারণ মানুষ। বাড়ির পাশেই বিনামূল্যে মিলছে স্বাস্থ্যসেবা। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। চালু হওয়ার পর থেকে মোট ৩৫ কোটির বেশি রোগী সেবা পেয়েছেন। ডাঃ মাখদুমা নার্গিস জনকণ্ঠকে আরও জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক একটি কার্যক্রম। এটি গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ কোটির বেশি মানুষ সেবা গ্রহণ করেছে এবং ৭০ লাখের বেশি জরুরী ও জটিল রোগী উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, সাধারণ সমস্যা ও জখমের চিকিৎসা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নির্ণয় ও রেফার ইত্যাদি কমিউনিটি ক্লিনিকের উল্লেখযোগ্য সেবা। প্রায় ৯শ’ ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব পরিচালিত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক আজ জনগণের নিকট একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বলে জানান ডাঃ মাখদুমা নার্গিস। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের চাহিদা বেড়েই চলেছে। প্রয়োজনীয় মেরামত, ওষুধপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যাদি সরবরাহ, জনবল পদায়ন করে পুরাতন এবং নবনির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। বর্তমানে সারাদেশে মোট ১২ হাজার ৮১৫টি ক্লিনিক চালু আছে এবং এ সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও মা বা শিশু মৃত্যু বা জটিলতা দেখা দেয়নি। আর নিয়োগকৃত সিএইচসিপিদের ১২ সপ্তাহব্যাপী মৌলিক প্রশিক্ষণ (৬ সপ্তাহ তাত্ত্বিক ও ৬ সপ্তাহ ব্যবহারিক) প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচে মোট ১৩ হাজার ২২৫ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপের মোট দু’লাখের বেশি সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আর কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ৪০টি জেলার ১শ’টি উপজেলার ৮০২টি ক্লিনিকের ভবন মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে ২ কোটি ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে ৩০ প্রকারের ওষুধ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, দেশের মফস্বল এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। এই প্রকল্পের সঙ্গে গ্রামের মানুষের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আর তাই এই প্রকল্পের চলমান কর্মকা- অব্যাহত রাখতে এবং চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে স্থানীয় সরকারের সহযোগিতার দরকার রয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সুপারভিশন ও মনিটরিং জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলবে। এ কার্যক্রমে অবহেলা করা হলে মনিটরিং টিমের সদস্য এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের কাউকেও ছাড় দেয়া হবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×