মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মঞ্জুরিকৃত জনবলে প্রায় ৫০ ভাগ দিয়ে কাজ চলছে পাহাড়তলীর রেলওয়ে কারখানায়। জনবল সঙ্কটের চরম পরিস্থিতি মোকাবেলার মধ্য দিয়েও এবারের ঈদে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে ও ভোগান্তি কমাতে এ কারখানা থেকে ৮৬টি কোচ মেরামত করে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। কোচের গায়ে রংতুলি নিয়ে শেষ মুহূর্তের কাজ চালাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা।
দ্রুততার সঙ্গে রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টার্গেট দেয়া এসব কোচ মেরামতে দক্ষ কারিগরের যেমন অভাব অনুভূত হচ্ছে, তেমনি জনবল সঙ্কটের চরম আকারও প্রভাব ফেলছে উৎপাদনে। এরপরও গত ২০ দিনে এ কারখানা থেকে ৩৪টি কোচ মেরামত করে পরিবহন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উল্লেখ্য, রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাহাড়তলীর রেলওয়ে কারখানাকে এসব কোচ মেরামতের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ২ হাজার ১২৮ জন জনবল মঞ্জুরির বিপরীতে কাজ করছে মাত্র ১২শ। মঞ্জুরি অনুযায়ী এ কারখানায় ৯ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, ৭৪ জন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিভাগের ২০৪৫ জন কর্মচারীসহ মোট ২১২৮ জন কাজ করার হিসেবের খাতা রয়েছে। কিন্তু হিসেবের খাতায় রয়েছে গরমিল। কারণ, মঞ্জুরি অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কোনটিরই বরাদ্দ ঠিক নেই। সব মিলে প্রায় ১২শ’ জন কাজ করছে রেলের উন্নয়নে। এদিকে, যাত্রী ও মালবাহী গাড়ির যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক মেরামত সংশ্লিষ্ট এমনকি সম্পূর্ণ কোচ চলনক্ষম করার কাজে রয়েছে ২২টি শপ। এসব শপের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীরা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ কোচ অথবা মালবাহী গাড়ি মেরামতের জন্য লাইনে নিয়ে আসে। বিভিন্ন শপের সহযোগিতায় এ কারখানায় কোচ ও ওয়াগণ মেরামতের মধ্য দিয়ে বর্তমানে প্রায় গড়ে প্রতিদিন দুটি কোচ বা ওয়াগন মেরামতের রেকর্ড রয়েছে। জনবল সঙ্কট এক্ষেত্রে ততটা প্রভাব ফেলতে পারছে না। তবে প্রায় হাজার খানেক শ্রমিক কর্মচারীর এ সঙ্কট দূর হলে উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার পাহাড়তলীর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের বিভিন্ন শপ ঘুরে দেখা গেছে, বগি শপের কেউ বগি ও স্প্রিং প্রতিস্থাপন করে মেরামত সম্পন্ন করছেন। হুইল শপে দেখা গেছে, কেউবা গ্রিজ বা লুব্রিকেন্ট দিয়ে চাকা সচল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার কেউবা চাকায় টায়ার লাগিয়ে পুরাতনকে নতুনে আনার অক্লান্ত চেষ্টায় এগিয়ে চলেছেন। স্মিথি শপে কয়লার আগুনে লোহাকে গলিয়ে কোচে ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি করা হচ্ছে। ওয়েল্ডিং শপে চলছে দ্রুততার সঙ্গে কোচের বিভিন্ন স্থানে নষ্ট হয়ে যাওয়া ডেন্টিংয়ের কাজ। পেইন্ট শপে দেখা গেছে অন্যান্য শপ থেকে নতুন আঙ্গিকে কোচগুলো তৈরি করার পর রঙের কাজ। এর মধ্যে রয়েছে কোচের ভেতরে বাইরে পূর্বের ন্যায় রং মিলিয়ে ও পুডিং লাগিয়ে মশৃনতার কাজ। শেষ পর্যন্ত ট্রেনের গায়ে শ্রেণী ভেদে কোচের নম্বর, ট্রেনের ক্যাটাগরির নাম, আসন অনুযায়ী বিভিন্ন কোচের দরজায় সাংকেতিক চিহ্ন উল্লেখ করা হচ্ছে। জিইআর শপে কোচের ভেতরে থাকা বৈদুতিক সংযোগগুলো সঠিক রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মেরামতের কাজ নিরলসভাবে চালানো হচ্ছে। ক্যারেজ শপেও চলছে দ্রুতগতিতে কোচের বিভিন্ন ধরনের মরামত।
কারখানার আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে এ কারখানা থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৮৬টি কোচ মেরামত করে চলনক্ষম করা হচ্ছে। এসব কোচের মধ্যে চট্টগ্রাম ডিভিশনের জন্য ১৮টি আন্তঃনগর কোচ, ২৮টি মেইল এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ, ঢাকা ডিভিশনের জন্য ১৭টি আন্তঃনগর ও ২৩টি মেইল এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ মেরামতের কাজ চলছে পুরোদমে। এর মধ্যে গত ৫ জুন পর্যন্ত ১৮টি কোচ এবং গত ১৯ জুন পর্যন্ত ১৬টি কোচ মেরামত করে পরিবহন বিভাগে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে আর মাত্র ৫২টি কোচ। আগামী ২০-২২ দিনের মধ্যে এসব কোচ মেরামত করে সংযোজন করা হবে ঈদ যাত্রায়। এসব ট্রেনের উপর ভিত্তি করে চারটি স্পেশাল ট্রেন ও আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনের কোচ সঙ্কট পরিপূরণ করা হবে।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত ৩৪টি কোচ মেরামত করে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি কোচগুলোও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেরামত করে সরবরাহ করা হবে।