ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

বাগেরহাটের তিন রাজাকারের পক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২১ জুন ২০১৫

বাগেরহাটের তিন রাজাকারের পক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার কসাই সিরাজ মাস্টার, খান আকরাম হোসেন ও লতিফ তালুকদারের পক্ষে যুক্তিতর্ক প্রায় শেষেরদিকে। আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক আজ পুনরায় শুরু হচ্ছে। আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে প্রসিকিউশন পক্ষ পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করবে। তারপর নিয়ম অনুসারে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটি চলছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য রয়েছেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়রুল হক। বুধবার প্রসিকিউশন পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করা হয়েছে। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও প্রসিকিউটর মোশফেক কবির যুক্তিতর্ক করেন। খান আকরাম হোসেন ও লতিফ তালুকদারের পক্ষে যুক্তিতর্ক করেছেন ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন। আজ কসাই সিরাজ মাস্টারের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু করবেন এ্যাডভোকেট আবুল আহসান। গত ৬, ৭ ও ২১ এপ্রিল আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন সাফাই সাক্ষী। তারা হচ্ছেন- মোঃ আমজাদ শেখ, সরদার আব্দুল মান্নান, আব্দুর রশিদ মল্লিক, ইউসুফ আলী দিহিদার এবং মোঃ ফেরদৌস খান। অন্যদিকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত সিরাজ-লতিফ-আকরামের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনসহ ৩২ সাক্ষী। উল্লেখ্য, গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। তার আগের দিন গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাইয়েদুল হক ও শেখ মুশফিক কবির তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে ছয়টি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে যৌথভাবে ৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৭১ সালে রঞ্জিতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুট এবং অগ্নিসংযোগ। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪০-৫০ নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়। রামপাল থানার ডাকরার কালীমন্দিরে ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার উদ্দেশে জড়ো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই-তিন হাজার লোক। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল-১। ১৪ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিসে তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করেন প্রসিকিউকশনপক্ষ। মানবতাবিরোধী অপরাধে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে ছয়টি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে চারটি করে অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত চূড়ান্ত করে গত ২৫ আগস্ট এ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। এদের বিরুদ্ধে ৯টি খ-ে মোট ৮শ’ ৪৪ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এদের বিরুদ্ধে ৬৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানায় তদন্ত সংস্থা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কচুয়া থানা পুলিশ ১১ জুন পলাতক আসামি আঃ লতিফ তালুকদারকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। ১৯ জুন অপর পলাতক আসামি আকরাম হোসেন খানকে রাজশাহী থেকে মোড়েলগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করে। ২১ জুলাই রাত ১১টায় বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে মৃত মোসলেম পাইকের (তার চাচাশ্বশুর) পরিত্যক্ত খুপরি ঘর থেকে সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে।
×