ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটে জামাতা কুপিয়ে খুন করেছে ছেলে শাশুড়ি শ্যালিকাসহ ৪ জনকে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২১ জুন ২০১৫

জয়পুরহাটে জামাতা কুপিয়ে খুন করেছে ছেলে শাশুড়ি শ্যালিকাসহ ৪ জনকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ২০ জুন ॥ পাঁচবিবিতে শনিবার ভোরে স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে চারজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে পাষ- স্বামী সুমন হেমরম। এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন শাশুড়ি সন্ধ্যা রানী মারান্ডী (৪২), ফুপাশ্বশুর মার্কেল (৫০), শ্যালিকা তেরেজা মারান্ডী (২০) ও ছেলে সানি হেমরম (৬)। এ ঘটনায় মারাত্মক আহত স্ত্রী সিলভিয়া হেমরমকে (২৫) প্রথমে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এলাকাবাসী ঘাতক সুমনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ পাশবিক ঘটনাটি ঘটেছে পাঁচবিবি উপজেলার ভীমপুর তালতলা গ্রামে একটি আদিবাসী পল্লীতে। সিলভিয়াকে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত দিনাজপুরের পার্বতীপুর ল্যাম্ব মিশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হলে তাকে রংপুর মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। এ নারকীয় ঘটনাটি শনিবার ভোরে ঘটে। রাত প্রায় সাড়ে তিনটায় সুমন হেমরম ঘুম থেকে ডেকে তোলে তার শাশুড়ি সন্ধ্যা রানী মারান্ডীকে। শাশুড়ি দরজা খুলে ঘর থেকে বের হতেই জামাই সুমন তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। তার চিৎকারে বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা ফুপাশ্বশুর এগিয়ে এলে তাকেও এলোপাতাড়ি কোপায় সুমন। তার চিৎকারে পাশের ঘর থেকে শ্যালিকা তেরেজা দরজা খুলে এগিয়ে এলে তাকেও এলোপাতাড়ি কোপায় সুমন। এ সময় তার ছয় বছরের ছেলে সানি তাকে জড়িয়ে ধরলে তাকেও কোপানো হয়। তাদের আর্তচিৎকারে ছুটে আসে সিলভিয়া। তাকে দৌড়ে গিয়ে কোপানোর চেষ্টা করলে কোন রকমে ছুটে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে চিৎকার শুরু করে সিলভিয়া। এ সময় আহতদের চিৎকারে গ্রামবাসী ছুটে এসে চাপাতি ও রক্তাক্ত জামাকাপড়সহ সুমনকে ধরে ফেলে । পরে থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ২০০৭ সালে পাঁচবিবি উপজেলার নয়ানা গ্রামের নবীন হেমরমের ছেলে সুমন হেমরম (৩২) একই উপজেলার ভীমপুর তালতলা গ্রামের ম্যানেয়েল মারান্ডীর মেয়ে সিলভিয়াকে (২৬) বিয়ে করে। এলাকাবাসী জানায়, দুটি ঘাতক সুমনের শ্বশুবাড়ির লোকজন খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। ঘাতক সুমন এখনও আদিবাসী রয়ে গেছে। ভারত সীমান্তবর্তী ভীমপুর তালতলা গ্রামের মানুষজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের। বিয়ের পর থেকে সুমন হেমরম শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে বাস করতে থাকে। বিয়ের পর এক পুত্র সন্তানের জন্মের পর সুমনের স্ত্রী সিলভিয়ার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খোকন হাজদা নামে এক যুবকের মেলামেশা সন্দেহজনক হওয়ায় বিষয়টি সুমন শ্বশুর-শাশুড়ি ও অন্যদের জানালেও বিষয়টি নিয়ে তারা গা করেনি। তাদের মেলামেশা বন্ধ না হওয়ায় সুমন স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় একটি মেকানিক্যাল ফ্যাক্টরিতে মেকানিক্সের চাকরি করে। এ সময় তার আরও একটি ছেলে ও মেয়ে হয়। ৫ বছর ঢাকায় থাকার পর শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসে সুমন। চাকরি থেকে অর্জিত টাকা দিয়ে ভটভটি নামক যান কিনে ব্যবসা শুরু করে। দীর্ঘ ৫ বছর বাড়ির বাইরে থাকলেও খোকন হাজদার সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ হয়নি দেখে বিষয়টি ফয়সলা করার জন্য শাশুড়িকে বলেন কিন্তু শাশুড়ি বিষয়টিকে তেমন গুরত্ব দেননি। এ অবস্থায় সুমন স্ত্রীর পরকীয়ায় শাশুড়ির ইন্ধন রয়েছে এই ক্ষোভে শনিবার ভোরে শাশুড়ি, ফুপাশ্বশুর, শ্যালিকা, ৬ বছরের ছেলে ও স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই স্ত্রী সিলভিয়া ছাড়া ৪ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ম্যানেয়েল মারান্ডী জামাতা সুমন হেমরমকে আসামি করে পাঁচবিবি থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। পাঁচবিবি থানায় ওসি আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন সুমনের ভাষ্য নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট তথ্য জানা যায়নি এখন পর্যন্ত। তবে ঘটনার নেপথ্য কারণ বের করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। পরকীয়া সম্পর্কিত নাকি অন্য কোন কারণে এমন লোমহর্ষক হত্যাকা- সুমন ঘটাল সে বিষয়ে তা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। লোমহর্ষক এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদিবাসী পল্লীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
×