ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্লাবকে শিরোপা এনে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় এ নাইজিরিয়ান কোচের

শেখ জামালে ফিরলেন আফুসি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২০ জুন ২০১৫

শেখ জামালে ফিরলেন আফুসি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আবার আসিব ফিরে, শেখ জামালের নীড়ে, এই বাংলায়!’ মহান কবি জীবনানন্দ দাসের বিখ্যাত সেই ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়’ কবিতার প্যারোডি বলা যেতে পারে লেখার প্রথম পঙ্ক্তিটিকে। রাজনীতিতে যেমন শেষ কথা বলে কিছু নেই, তেমনি ফুটবলেও শেষ যাওয়া বলে কিছু নেই। মাঝে মাঝে ফিরেও আসতে হয়। এই যেমন বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার এই মুহূর্তের সেরা ফুটবল ক্লাব শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডে আবারও ফিরে এসেছেন জোসেফ আফুসি। নাইজিরিয়ান কোচ আফুসি জামালে যোগ দিতে ঢাকা আসেন বৃহস্পতিবার। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের দ্বিতীয় পর্বে শেখ জামাল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আফুসি। এবার সেই দ্বিতীয় পর্ব থেকেই ক্লাবের হাল ধরছেন তিনি। শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু করেছেন তিনি। যদিও আফুসি ভারতের চার্চিল ব্রাদার্সের সঙ্গে এখনও চুক্তিবদ্ধ। ভারতের ‘আই লীগ’ শেষ হওয়ায় কিছুদিন ছুটি পেয়েছেন। এর ফাঁকেই স্বল্পমেয়াদে শেখ জামাল ক্লাবের দায়িত্ব নিতে ঢাকায় চলে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে আফুসি বলেন, ‘গতবার শেখ জামাল চ্যাম্পিয়ন হলেও আমি শেষ মুহূর্তে থাকতে পারিনি। শেখ জামালেই আমার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। এখানে আমার অন্য রকম ভাললাগা কাজ করে। আশা করি এবার দলকে শিরোপা এনে দিতে পারব।’ ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলেরর প্রথম পর্বে বর্তমান শিরোপাধারী শেখ জামাল পয়েন্ট টেবিলে সবার চেয়ে ওপরে থেকেই শেষ করে। নিকটবর্তী দলগুলোর চেয়ে তারা এগিয়ে ৩ পয়েন্টে। কিন্তু তারপরও ধানম-ি ক্লাব কর্তৃপক্ষ এ ফলে মোটেও খুশি নয়। ফলে কোচসহ পুরো কোচিং স্টাফই পাল্টে ফেলে তারা। বরখাস্ত করে কোচ মারুফুল হককে। গত মৌসুমের শেষদিকে আফুসি নানা কারণে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে কোচ করা হয়েছিল মারুফুলকে। মারুফুল নিজেও সে সময় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হয়ে বেকার সময কাটাচ্ছিলেন। জামালের কোচের দায়িত্ব নিয়ে মারফুল দলকে লীগে চ্যাম্পিয়ন করান। এরপর ভুটানে গিয়ে ‘কিংস কাপ’ এবং দেশে অনুষ্ঠিত মৌসুম-সূচক টুর্নামেন্ট ‘ফেডারেশন কাপ’-এর শিরোপা জেতান জামালকে। তারপর চলতি লীগে প্রথম লেগে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকলেও ঢাকা আবাহনীর কাছে হার, কয়েকটি ম্যাচে পয়েন্ট খোয়ানো, খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী নন... প্রভৃতি অজুহাতে মারুফুলকে ছাঁটাই করে জামাল কর্তৃপক্ষ। তবে বেশিদিন অবসর সময় কাটাতে হয়নি মারুফুলকে। তাঁর নতুন ঠিকানা হয় তারই সাবেক ক্লাব শেখ রাসেলে, কারণ ততদিনে বরখাস্ত করা হয়েছে ক্লাবটির মন্টিনিগ্রোর কোচ দ্রাগান দুকানোভিচকে। শেখ জামালের কোচের শূন্যস্থানে অনেকের নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত ক্লাবটিরই সাবেক কোচ জোসেফ আফুসিকেই পছন্দ করা হয়। আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হবে প্রিমিয়ার লীগের দ্বিতীয় পর্বের খেলা। ২০১৩-১৪ মৌসুমে শেখ জামাল পেশাদার লীগের শিরোপা জেতে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই। নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর লিমিটেডের চেয়ে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল তারা। বাংলাদেশের ঘরোয়া লীগের ইতিহাসে এত পয়েন্ট এগিয়ে থেকে এবং এত ম্যাচ হাতে রেখেই লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির সম্ভবত এটাই প্রথম। আর দলের এমন কৃতিত্ব গড়ার পেছনে যিনি ছিলেন নেপথ্য কারিগর, সেই জোসেফ আফুসির বিদায়টা হয় অপ্রীতিকরভাবে! তখন ক্লাবসূত্রে জানা গিয়েছিলÑবেশ কিছুদিন ধরেই আফুসি ক্লাবের স্বার্থ পরিপন্থী কাজ করছিলেন। যেমন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, বাজে আচরণ, অন্যায়কে প্রশ্রয়... এ জাতীয় কিছু। এ জন্য ক্লাব তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট ছিল। তাই চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াতে চায়নি। গত বছরের জুলাই পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ ছিল। আফুসিও বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি ছুটি নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। ফলে ক্লাবের শেষ ৭-৮ লীগ ম্যাচে তিনি ছিলেন না। তারপর ভারতের গোয়ার চার্চিল ব্রাদার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন আফুসি। ২০১১-১২ মৌসুমে খেলোয়াড় থেকে জামালের প্রধান কোচ হয়েছিলেন আফুসি। তাঁর অধীনেই জামাল ২০১২-১৩ মৌসুমে ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও পেশাদার লীগে রানার্সআপ হয়। এ ছাড়া তাঁর কোচিংয়েই গত বছর ভারতের আইএফএ শিল্ডে রানার্সআপ হয় ধানম-ির দলটি। এর আগে শোনা গিয়েছিল ভিয়েতনামের বিকেমেক্স বিন দুয়োং এফসি ক্লাবে চলে যাবেন দুই বছরের চুক্তিতে। উল্লেখ্য, জামালের আগের কোচদের বিদায়ও সুখকর হয়নি। সার্বিয়ান জোরান ক্রালিয়েভিচ দলের প্রথম কোচ ছিলেন। এরপর শ্রীলঙ্কার পাকির আলীর পর স্থানীয় কোচ সাইফুল বারী টিটু ও মোহাম্মদ ইউসুফ দায়িত্ব পালন করেন। খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল ছিলেন খ-কালীন কোচ। শেষের জন ছাড়া কারোরই বিদায় সুখকর হয়নি। এখন দেখার বিষয়, আফুসি এবার জামালকে কেমন সাফল্য এনে দিতে পারেন।
×