ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘দ্য ঢাকা এক্সপ্রেসে’ই ভারত ধস শুরু

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২০ জুন ২০১৫

‘দ্য ঢাকা এক্সপ্রেসে’ই ভারত ধস শুরু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নেমেই বাংলাদেশের কোন বোলার প্রথমবার ৫ উইকেট শিকার করেছেন? নাম তার-পেসার তাসকিন আহমেদ। যার গতি এতটাই বেশি যে এখন ঢাকার ছেলে তাসকিন আহমেদ তাজিনকে ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’ও বলা হচ্ছে। তিনিও ভারতের বিপক্ষেই গত বছর এ কীর্তি গড়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ভারতকে ১০৫ রানে অলআউট করে দিয়েও বাংলাদেশ জিততে পারেনি। এবার বাংলাদেশ জিতেছে। এবার আর তাসকিন ৫ উইকেট নেননি। অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নেমে মুস্তাফিজুর রহমান সেই কীর্তি গড়েছেন। তবে নিজের পরপর দুই ওভারে যে দুটি উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, সেখানেই বাংলাদেশের জয়ের মূল কাজটি হয়ে যায়। বাংলাদেশের দেয়া ৩০৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে ভারত। মিরপুরের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ভাল শুরুই পেয়েছিল ভারত। তবে জয় পাবে তার নিশ্চয়তা মিলছিল না। তাসকিন আহমেদের জোড়া আঘাতে ম্যাচে ফিরে যায় বাংলাদেশ। পরপর দুই ওভারে শেখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলিকে ফিরিয়েছেন তাসকিন। ১০১ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত। দুটিই তাসকিনের শিকারে পরিণত হয়। যদিও ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুস্তাফিজ। তবে আসল কাজটি তাসকিনই করে দিয়েছেন। এই ভারতের বিপক্ষেই নিজের অভিষেক ম্যাচে ২৮ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। এবার ভারতের বিপক্ষে ৩০৮ রানের লক্ষ্য দেয়ার পর তাঁকে নিয়ে আবারও প্রশংসা করলেন ভারতীয় ধারাভাষ্যকাররা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে হার্শা ভোগলে বলেন, ‘বোলিংয়ে দারুণ আগুন ঝরানো সূচনা বাংলাদেশের। তাসকিনের মতো একটা রতœ আছে দলে। ওকে ভারতের দেখে খেলতে হবে।’ তবে গতবছরের সেই কষ্টটা এখনও ভুলতে পারেন না তাসকিন আহমেদ। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকেই ঝড় তুলেছিলেন গতির। বৃষ্টির কারণে ৪১ ওভারে নামিয়ে নিয়ে আসা ম্যাচে ৮ ওভার বল করেই ২৮ রানে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছিলেন ৫ ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে। ওয়ানডে ইতিহাসে অভিষেকেই ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। ভারতকে ১০৫ রানে অলআউট করে দিয়েও বাংলাদেশ সেদিন পড়েছিল ৫৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জায়। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতায় অর্জন ম্লান হওয়ার সেই কষ্টটা আজও বুকে বয়ে নিয়ে বেড়ান দেশের ক্রিকেটের গতি-বলের অন্যতম এই বিজ্ঞাপন। সেদিনের সেই বলটি শোকেসে উঠিয়ে রেখেছেন যতœ করেই। বলটায় চোখ পড়লে যতটা না আনন্দ হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি হয় আফসোস। ওয়ানডে অভিষেকের তিক্ত-মিষ্টতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাসকিন জানান, ‘স্বাভাবিকভাবেই ৫ উইকেট পাওয়াতে ভাল লাগছিল। তবে ম্যাচটা হারার কারণে ৫ উইকেট পাওয়ার মজাটা হাল্কা হয়ে গিয়েছিল। হারার পর খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার কাছে দলের সাফল্যই বড়। ৫ উইকেট নিলাম, কিন্তু দল হারল; সেটার কোন তাৎপর্য নেই। আবার এক উইকেট নিলাম এবং ওই উইকেটটা নেয়ায় দল জিতল, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই। দলের জয়ই সবচেয়ে বড় জিনিস।’ তা তাসকিন সেই দলের জয় দেখলেন এবং ভারতের বিপক্ষেই বাংলাদেশ জিতল। সেই জয়টিও এলো তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়েই। শুরুতেই ২ উইকেট নিয়ে তাসকিন ভারত ইনিংসে ধস নামানো শুরু করে দেন। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে ২০ বছর বয়সী তাসকিন বলেছিলেন, ‘ওটা অতীত হয়ে গেছে (গতবছরের ম্যাচ)। ওসব নিয়ে এখন আর ভাবছি না। নতুন করে শুরু করতে হবে। ভাল জায়গায় বল করতে হবে। এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। ওদের দলে বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানরা রয়েছে। তাদের বিপক্ষে ভাল করাটাও চ্যালেঞ্জিং। নিজের সর্বোচ্চটাই ঢেলে দেব।’ তা তাসকিন করেও দেখালেন। কদিন আগে স্টার স্পোর্টসের ‘গেম প্ল্যান’ অনুষ্ঠানে তাসকিনকে নিয়ে সাবেক পাকিস্তানী ফাস্টবোলার শোয়েব আখতার বলেছিলেন, ‘তার বলে গতি আছে। ঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারে। তাসকিন এ্যাকশন নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। এটা চিন্তার দরকার নেই। খুব নির্ভার চিত্তে দৌড়াতে হবে। কী করতে হবে (পিচে), সেটি নিয়েই ভাবাটাই জরুরী।’ শোয়েবের পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছেনও তাসকিন, ‘তার মতো কিংবদন্তি যা-ই বলুন, আমার ভালর জন্যই বলেছেন।‘
×