ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধের অর্থনৈতিক ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২০ জুন ২০১৫

যুদ্ধের অর্থনৈতিক ক্ষতি

যুগে যুগে বিশ্বে যুদ্ধবিগ্রহে নিহত হয়েছে শিশু-নারীসহ বহু বেসামরিক ব্যক্তি। মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। অথচ যুদ্ধে মানবজীবনই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন হয়ে পড়ে এবং যুদ্ধের আসল ক্ষতি মানবমৃত্যুই। সোজা কথায় যুদ্ধবিগ্রহের জন্য অর্থাৎ মানুষকে মারার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক্স এ্যান্ড পিসের সাম্প্রতিক তথ্যে উঠে এসেছে যুদ্ধবিগ্রহের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতির প্রসঙ্গটি। আইইপি হিসাব করে জানিয়েছে, ২০১৪ সালে যুদ্ধ এবং নানা অস্থিরতায় বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১৪ দশমিক তিন ট্রিলিয়ন (১৪,৩০০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারÑ যা বিশ্বের মোট জিডিপির ১৩ শতাংশ। অপর হিসাবে বলা যায়, এ অর্থ ব্রাজিল, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় বাজেটের সমান। এটা মানবধ্বংসের জন্য ‘সামান্য ক্ষতি’ই বটে! উল্লেখ্য, যুদ্ধবিগ্রহ বেড়ে যাওয়ার কারণে উদ্বাস্তু খাতে ব্যয়ও বাড়ছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে মোট ৫ কোটি উদ্বাস্তু রয়েছেÑ যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সর্বোচ্চ। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশ্বখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ৬০%-এর সামরিকীকরণের কথা বলেছিলেন ষাটের দশকে। এখন এই অনুপাত আরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়াল স্ট্রিটের অর্থ সংস্থাগুলো যত রকম কসরতই দেখাক, অস্ত্র উৎপাদন ও বাণিজ্যের ভূমিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রায় সার্বভৌম বলা চলে। পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অস্তিত্বের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধাবস্থা, যুদ্ধ উত্তেজনা এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত অস্ত্র উৎপাদন ও ব্যবসার ওতপ্রোত সম্পর্ক। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত সেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা কখনও কখনও এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নিজেদের প্রয়োজনে, যখন তাদের দেশ সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়। এরকম পরিস্থিতিতে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ইরানের খোরাসান প্রদেশে এক জনসভায় বলেছিলেন, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা সৃষ্টি করে ছোট দেশগুলোকে দিয়ে শত শত কোটি টাকার অস্ত্র বেচাকেনা করছে। কোন নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এর মধ্যে একটি দেশ ৬০ বিলিয়ন অর্থাৎ ছয় হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র সাম্রাজ্যবাদীদের থেকে কিনেছে। দেশটি যে সৌদি আরব সেটা বিশ্ব পর্যবেক্ষকরা জানেন। বর্তমানে আমরা আধুনিক সভ্য বিশ্বে বসবাস করার পরও হিংসা-বিদ্বেষের উর্ধে উঠতে পারিনি। আমাদের মানবিক গুণাবলী যেন নির্বাসনে গেছে। ফলে অকারণে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। মানুষ হত্যা মানবতার জন্য কল্যাণকর নয়। আমরা শান্তি চাই, প্রতিটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা চাই। চাইলেই যে মিলবে তার লক্ষণ অবশ্য এখনও দৃশ্যমান নয়। বরং সৃষ্টির চাইতে ধ্বংসের আয়োজনই অর্থলোভীদের কাছে জরুরী হয়ে উঠেছে। পণ্য উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে প্রাপ্ত মুনাফার তুলনায় যুদ্ধ উপকরণের উৎপাদন অনেক বেশি লাভজনক। সে কারণেই অস্ত্র-অর্থনীতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়ে চলেছে বিশ্ব রাজনীতি। যা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। প্রসঙ্গত, যুদ্ধ ও ধ্বংসের পরিবর্তে শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ ও আশঙ্কামুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে বর্তমান প্রজন্ম সচেষ্ট হবে বলে কিছুকাল আগে আশা প্রকাশ করেছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। অভিন্ন আশাবাদ বিশ্বের যুদ্ধবিরোধী শান্তিকামী কোটি মানুষের, সে কথা বলাই বাহুল্য।
×