ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প সমাপ্তিতে বেশি নজর দেয়া ইতিবাচক ॥ বিশ্বব্যাংক

গুরুত্বপূর্ণ ৭ প্রকল্প শেষ করতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ জুন ২০১৫

গুরুত্বপূর্ণ ৭ প্রকল্প শেষ করতে চায় সরকার

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী অর্থবছরে (২০১৫-১৬) সড়ক অবকাঠামো খাতের গুরুত্বপূর্ণ ৭ প্রকল্প শেষ করতে চায় সরকার। এজন্য অর্থ বরাদ্দসহ যাতে কোন ঝামেলার সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হবে আগামী বাজেটে। ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশন থেকে এসব প্রকল্পের যেন কোন বরাদ্দ সঙ্কট না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার বিষয়টিকে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের একটি নতুন মাত্রা হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আগামী অর্থবছরে নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে প্রকল্প সমাপ্ত করার দিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে প্রস্তাবিত বাজেটে সড়কের কয়েকটি প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ইতিবাচক দিক। ফলে প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন জটিলতা থাকলে তা দূর করতে সহজ হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই সমাপ্ত হবে। ঢকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের গুরুত্ব প্রসঙ্গে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মানুষের শরীরের যেমন লাইফ লাইন থাকে তেমনি ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রকল্প হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। এদেশের অর্থনীতি বাণিজ্য ভিত্তিক, অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরের জন্য বা বিদেশের জন্য পণ্য উৎপাদনে দুই ক্ষেত্রেই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বন্দরের সঙ্গে ঢাকার ও দেশের বাইরের যোগাযোগ অপরিহার্য। তিনি বলেন, বাণিজ্যের পরিমাণ যেভাবে বেড়েছে এটা এতদিন কোন রকমে সামাল দেয়া গেছে। কিন্তু এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করা উচিত। তানা হলে এটি অর্থনীতির গলা চিপে ধরার মতো হবে। আগামী অর্থবছরে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেÑ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ, যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, কক্সবাজার-টেকনাফ-মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ দ্বিতীয় পর্যায় (ইনানী থেকে সীলখালী পর্যন্ত) এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ প্রকল্প। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আশা করছি আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মধ্যে এই ৭টি প্রকল্প সমাপ্ত করতে পারব। তিনি জানান, সড়ক অবকাঠামোর ক্ষেত্রে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এটির কাজ এগিয়ে চলছে। তিনি আরও বলেন সড়ক-সেতু অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আগামী অর্থবছরে। ইতোমধ্যেই দেশের পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার জন্য ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এর আওতায় ৬১টি সেতু পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চলমান আছে দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়া পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ভবিষ্যতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩ হাজার ১৯০ কোটি ২৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সময় ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ হিসাবে দুদফায় ব্যয় বেড়েছে ১০২২ কোটি ২৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও ৩টি সেতু নির্মাণ প্যাকেজে ১৯২ দশমিক ৩০ কিমি দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রকল্পের দ্বিতীয়বারের মতো ব্যয় বাড়ানো হয়। যুক্তি হিসাবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম ও নক্সায় কিছুটা পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়। এর আগে ২০১০ সালে প্রকল্প ব্যয় আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ২১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ঠিক করা ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ২০ দশমিক ৪৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ২ লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, ৩২ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রিএ্যালাইনমেন্ট সড়ক নির্মাণ, এক হাজার ৫০ মিটার সেতু নির্মাণ, ২৪৪টি কার্লভাট নির্মাণ, ৯৩০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৩৪ মিটার আন্ডারপাস নির্মাণ, যানবাহন ক্রয়, ইউটিলিটি অপসারণ, অফিস যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করা হচ্ছে। সওজের তথ্যমতে, ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার প্রকল্পটির মধ্যে কয়েক মাস আগেই প্রায় ৭৫ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। তবে ৪৩ কিলোমিটারের অগ্রগতি কাক্সিক্ষত হয়নি। ২ ও ৫নং প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত ওই অংশের ঠিকাদার চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২নং প্যাকেজের আওতায় কুটুম্বপুর থেকে কুমিল্লা বাইপাসের শুরু পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার অংশের কাজ হয়েছে ২০ শতাংশেরও কম।
×