ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ জুন ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের দ- ও জরিমানার রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয়ায়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আদালত অবমাননার জরিমানার ৫ হাজার টাকা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে মঙ্গলবার আপীল বিভাগের চেম্বার জজ তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দেয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছিলেন। কিন্ত ওই আদেশ ট্রাইব্যুনালে না আসায় ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। অন্যদিকে, তদন্ত সংস্থা যশোরের জামায়াতের সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছেন। ১৪ জুলাই আদালত অবমাননার দায়ে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এজলাসের ডকে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে সাজা ভোগের পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা জারিমানা করা হয়। সাত দিনের মধ্যে উক্ত টাকা রেজিস্ট্রারের বরাবর পরিশোধ করতে বলা হয়। অনাদায়ে তাকে আরও এক মাস কারাদ- ভোগ করতে বলা হবে। একই আদেশে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অপর ২২ জনকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দেন ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার ছিল টাকা জমা দেয়ার শেষ দিন। তিনি টাকাও জমা দেন নি, আবার চেম্বার জজের আদেশও ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে নি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ আফতাবুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি টাকা জমা দেয়ায় ব্যর্থ হয়েছেন, টাকা না দিলে এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। সে কারণেই তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্র্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তিনি আরও জানান আপীল বিভাগের চেম্বার জজ যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তার কপিও ট্রাইব্যুনালে আসেনি। উল্লেখ্য ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ডাঃ জাফরুল্লাহ চেম্বার জজে আপীল করেন। এরপর ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দেয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছেন আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি। জাফরুল্লাহর পক্ষে সংবিধানের ১০৪ ধারা অনুযায়ী করা আবেদনের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আগামী ৫ জুলাই এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। ১৪ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দ- ও জারিমানা করে অন্য ২২ জনকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা পাওয়া ২২ জন হলেনÑ মাসুদ খান, আফসান চৌধুরী, হানা শামস আহমেদ, অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ, আনুশেহ আনাদিল, লুবনা মারিয়াম, মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, এ্যাডভোকেট এ এ জিয়াউর রহমান, শিরিন হক, ড. সি আর আবরার, ফরিদা আক্তার, ড. বিনা ডি কস্টা, রেহনুমা আহমেদ, ড. শহীদুল আলম, লিসা গাজী, ড. জরিনা নাহার কবির, তিবরা আলী, শবনম নাদিয়া, মাহমুদ রহমান, দেলোয়ার হোসেন, আলী আহম্মেদ জিয়াউদ্দিন ও নাসরিন সিরাজ এ্যানি। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বিবৃতিদাতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। আদালতে তারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রেখেছিলেন। ডেভিড বার্গম্যানের দ- ও জরিমানার বিষয়ে ৫০ নাগরিক বিবৃতি প্রদান করেন। এর মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী খুশি কবির ওই বিবৃতি প্রকাশের পরপরই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ১৪ জনের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত। এরপর ৩ মার্চ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে রেহাই পান বিবৃতিদাতা আরও ১০ জন। তদন্ত রিপোর্ট প্রসিকিউশনে দাখিল ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোরের রাজাকার কমান্ডার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের মতো পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের রিপোর্ট প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হয়েছে। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খান বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের নিকট রিপোর্ট দাখিল করেন। রাজাকার কমান্ডার সাখাওয়াত ছাড়াও অন্য যে ১১ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেনÑ মোঃ ইব্রাহিম হোসেন, মোঃ বিল্লাল হোসেন, শেখ মোঃ মজিবুর রহমান, মোঃ আব্দুল আজিম সরদার, মোঃ আজিম সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মেঃ লুৎফর মোড়ল, মোঃ আব্দুল খালেক মোড়ল, মোঃ আকরাম হোসেন, ওজিয়ার মোড়ল এবং মশিয়ার রহমান। এর মধ্যে ৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, মোঃ বিল্লাল হোসেন, মোঃ আকরাম হোসেন ও ওজিয়ার মোড়ল।
×